মনিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: প্রথম দিকে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। পরে তাঁরাই গাছ থেকে নেমে আসতে কাতর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেই অনুরোধ রাখা তো দূরের কথা, গাছের মাথা থেকে নিচের বাসিন্দাদের লক্ষ্য করে ধেয়ে আসতে থাকে একের পর এক আস্ত ডাব! একপ্রকার গেরিলা আক্রমণে তফাতে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন সাধারণ মানুষজন। কয়েক ঘণ্টা নারকেল গাছের মাথাতেই উঠে থাকলেন ওই ব্যক্তি! শেষপর্যন্ত তাঁকে গাছ থেকে নামাতে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ ও দমকল বাহিনী। অনেক সাধ্যসাধনার পর গাছ থেকে নামানো হয় ওই ব্যক্তিকে। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার উলুবেড়িয়ায়।
কিন্তু ঘটনাটি কী? উলুবেড়িয়া পুরসভার পারিজাত এলাকায় এক মদ্যপ একটি নারকেল গাছের মাথায় উঠে বসেছিলেন। তাঁকে নামতে বললেও কারও কথায় কর্ণপাত করেননি বলেই খবর। কিন্তু ঘটনাটি কী? মদ্যপ ভর সন্ধ্যায় নারকেল গাছের মাথায় চড়ে বসলেন কেন? হিন্দি সিনেমা ‘সোলে’র একটি দৃশ্যে অভিনেতা ধর্মেন্দ্রকে গ্রামের জলের ট্যাঙ্কের উপর মদ্যপ অবস্থায় চড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। বসন্তী অর্থাৎ হেমা মালিনীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের সেই দৃশ্য আজও বিখ্যাত। কিন্তু উলুবেড়িয়ায় ওই মদ্যপ কেন গাছে উঠেছিলেন?
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিরিশের ওই যুবকের নাম অশোক রায়। উলুবেড়িয়া পুরসভার গরুহাটা তেঁতুলতলার বাসিন্দা তিনি। পেশায় ইঞ্জিন ভ্যানচালক অশোক গাছ কাটার কাজও করেন। এদিকে সন্ধের পর মাঝেমধ্যেই দু’পাত্তর গলায় ঢালার অভ্যাসও আছে তাঁর। গতকাল, বৃহস্পতিবার বিকেলের পর কোনও এক জায়গা থেকে মদ্যপান করে টলোমলো পায়ে এলাকায় ফিরছিলেন তিনি। পারিজাত এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহ হয়। অচেনা এই মদ্যপ ব্যক্তি কে? কী কারণে ভর সন্ধ্যায় এভাবে মদ্যপ অবস্থায় রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে? সেই সন্দেহ থেকেই অচেনা লোক দেখে হইহল্লা হয়, পরে তাড়া করা!
এদিকে তরল পানীয় আকণ্ঠ পান করে অশোকও অন্য জগতে! তবে হইহল্লার আওয়াজে বুঝতে হয়তো পেরেছিলেন কিছু একটা হতে চলেছে। আর লোকজন তাঁকে ধরতেই এগিয়ে আসছে। দৌড়নো তো দূর কী বাত, সোজা পায়ে হেঁটে যাওয়ারও শক্তি নেই তাঁর! তবে গাছে উঠতে সিদ্ধ তিনি। ফলে রাস্তারই ধারের একটি উঁচু নারকেল গাছে তরতরিয়ে উঠে গেলেন তিনি। মাঝে কোথাও থামা নেই, একদম নারকেল গাছের মাথায় উঠে বসেছেন তিনি। এদিকে এলাকার লোকজন গাছের নিচে দাঁড়িয়ে। প্রথম দিকে লোকজন হইচই করছিলেন ঠিকই। কিন্তু পরে তাঁরাও কিঞ্চিত দুশ্চিন্তায় পড়েন। এক মদ্যপ নারকেল গাছের মাথায় উঠে রয়েছেন। কোনওভাবে সেখান থেকে পড়লে মৃত্যু কার্যত নিশ্চিত। সেকথা ভেবেই ভয়ে হয়তো কেঁপে উঠেছিলেন উপস্থিত সকলে।
এরপর শুরু হয় অনুরোধের পালা। গাছ থেকে নেমে আসার জন্য বারবার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু সেই কথা কি অশোকের কান অবধি পৌঁছেছিল? বা পৌঁছলেও কী ভেবেছিলেন তিনি? কারণ, এরপর আক্রমণের পথেই হেঁটেছিলেন তিনি। গাছে হাতের কাছেই ডাবের কাঁদি। সেখান থেকে একের পর এক ডাব ছিঁড়ে নিচের লোকদের নিক্ষেপ শুরু! ঠিক যেন বোমারু বিমানের হামলা! ডাব হামলায় স্থানীয়রা দূরে সরে যান নিমেষে। এরপরই খবর যায় উলুবেড়িয়া থানায় ও দমকলে। কিছু সময়ের মধ্যেই দমকল বাহিনী, পুলিশ হাজির হয় ঘটনাস্থলে। পুলিশ অফিসাররা বললেও গাছ থেকে নামতে পারেননি ওই মদ্যপ! কারণ, সামান্য জ্ঞান হওয়ার পর ওই উঁচুতে উঠে তাঁরও মনে ভয় ধরেছে। শেষপর্যন্ত তাঁকে উদ্ধার করতে মই দিয়ে তাঁর কাছে পৌঁছন দমকলকর্মীরা। কয়েক ঘণ্টা পর গাছ থেকে অক্ষয় অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ওই মদ্যপকে।
তাঁকে নিচে নামাতেই যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে স্থানীয়দের। উলুবেড়িয়া শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গর্ভমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় অশোককে। সেখানেই তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা চলে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.