সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আধঘণ্টার বেশি দেখা যাবে না মোবাইল। না, কোনও স্কুল বা অফিসে এমন কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। শাওলিন বৌদ্ধমঠেই জারি হয়েছে এমন নিয়ম। আর সেই নিয়ম জারি হতেই মঠ ত্যাগ করেছেন তিরিশেরও বেশি সন্ন্যাসী! শুনতে যতই অবাক লাগুক, এমনটাই ঘটেছে। কিন্তু কেন এমন নিয়ম? আর কেনই বা এমন প্রতিক্রিয়া সন্ন্যাসীদের?
গোটা বিশ্বেই জনপ্রিয় শাওলিন বৌদ্ধমঠ। শুধু বৌদ্ধ ধর্ম অনুশীলন নয়, পাশাপশি কুংফু বিদ্যা শিক্ষাদানেও অগ্রগণ্য এই মঠ। চিনের হেনান প্রদেশের সংস্যাং পাহাড় চুড়োয় অবস্থিত এই ধর্মস্থান। চারপাশে গাছের সারি। শুধুমাত্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবেই নয়, বরং মার্শাল আর্ট ও বৌদ্ধদের নিজস্ব সংস্কৃতির জন্য বেশ পরিচিত এই স্থান। সম্প্রতি সেই মঠেই দেখা দিয়েছে এক অদ্ভুত কাণ্ড।
জানা যাচ্ছে, ২৯ জুলাই মঠের নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেন ৫৯ বছর বয়সি শি ইয়িনল। দায়িত্ব গ্রহণ করেই তিনি মঠের সন্ন্যাসীদের জন্য নতুন নিয়ম তৈরি করেন। সারাদিনে মোবাইলের স্ক্রিন টাইম কমিয়ে ৩০ মিনিট ধার্য করেন তিনি। নতুন নিয়ম অনুসারে সকল সন্ন্যাসীদের ভোর ৪.৩০ মিনিটে প্রার্থনায় যোগ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। দিনের বাকি সময়টা কৃষিকাজ ও জেন মার্শাল আর্ট অনুশীলন করার জন্য ধার্য করা হয়েছে। সমস্ত সন্ন্যাসীদের মোবাইল ফোন স্টোররুমে সারাদিন জমা রাখতে হবে। দিনের নির্দিষ্ট আধঘন্টা ছাড়া ফোন হাতে পাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। এমনকী নিষিদ্ধ করা হয় মঠের সমস্ত ধরনের বিনোদন।
আর এতেই চটেছেন বৌদ্ধ ভিক্ষুকেরা। জানা যাচ্ছে ৩০ জনেরও বেশি সন্ন্যাসী শাওলিন মঠ ছেড়ে চলে গিয়েছেন। বিশেষ করে খাদ্যাভাসে কঠিন নিয়ন্ত্রণ ও অতিরিক্ত কাজের চাপ মেনে নিতে পারছেন না মঠের বহু ভিক্ষুক ও কর্মীরাই। তার উপরে সারাদিনে মাত্র ৩০ মিনিটের জন্য মোবাইল হাতে পাওয়ার নির্দেশ আরওই চাপে ফেলেছে মঠের সদস্যদের।
কিন্তু কেন এমন কঠোরতা? উল্লেখ্য যে, প্রাক্তন শাওলিন অধ্যক্ষ শি ইয়ংজিনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন শি ইয়িনল। পূর্বের অধ্যক্ষ শি ইয়ংজিন আর্থিক তছরুপ ও যৌন অসদাচরণের জন্য এই মুহূর্তে বিচারাধীন। তিনি ১৯৮১ সালে মঠে সন্ন্যাসী হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৯ সালে অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন সময় মঠের সম্পদের অপব্যবহার ও আর্থিক তহবিল তছরুপের মতো ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন। এমনকী বৌদ্ধ ধর্মের অনুশাসন লঙ্ঘন করতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা বোধ করেননি। ফলে তাঁকে সরিয়ে শি ইয়িনলকে নতুন অধ্যক্ষ করা হয়।আর তিনি এহেন অবস্থায় দায়িত্ব পেয়েছেন বলেই কড়া হাতে রাশ ধরতে চাইছেন মঠের। কিন্তু ইয়িনলের কঠোর নিয়ম মেনে নিতে পারছেন না মঠের বহু সন্ন্যাসী। আর সেজন্যই একের পর এক মঠ ছাড়ছেন তাঁরা। দেখা যাচ্ছে, গৃহী মানুষদের মতোই ফোনের আসক্তি সন্ন্যাসীদেরও কিছু কম নয়!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.