প্রতীকী ছবি
চড়া দাম সত্ত্বেও সোনাকেই নিরাপদ আশ্রয়স্থল বলে গণ্য করেন। এমনটাই অভিমত দ্য ওয়েলথ কোম্পানি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মধু লুনাওয়াত-এর। তাঁর নিজের বয়ানে পড়ুন নিচের লেখা।
সোনা বহুকাল ধরেই সেই সব লগ্নিকারীদের জন্য এক বিশ্বস্ত নিরাপদ আশ্রয়সুলভ সম্পদ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যাঁরা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বাজারের চড়াই-উতরাই থেকে সুরক্ষিত থাকতে চান। সেদিক থেকে দেখলে, রেকর্ড দাম সত্ত্বেও সোনার আকর্ষণ জোরালো। এর পিছনে রয়েছে সোনার অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলো এবং বদলাতে থাকা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক চালচিত্র।
ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ: সোনার প্রমাণিত ট্র্যাক রেকর্ড
ঐতিহাসিকভাবে সোনা বরাবর মুদ্রাস্ফীতি, টাকার দাম পড়ে যাওয়া এবং বাজারের মন্দার বিরুদ্ধে দীর্ঘ মেয়াদে সামগ্রিকভাবে সর্বোচ্চ রিটার্ন পাওয়ার সুরক্ষা হিসাবে নিজের মূল্য প্রমাণ করেছে। অর্থনৈতিক চাপের সময়ে লগ্নিকারীরা ধারাবাহিকভাবে সোনার দিকে ঝুঁকেছেন, ফলে সোনার চাহিদা এবং দাম বেড়েছে।
এই ঘটনা ঘটেছে সোনার অন্তর্নিহিত গুণগুলোর কারণে
১. সীমিত সরবরাহ: সোনা দুর্লভ। ফলে তার দাম এবং মানুষের চোখে তার মূল্য অনেক।
২. আয়ু: সোনার পদার্থগত রূপটি দেখুন। এটি ক্ষয় প্রতিরোধ করে। ফলে সোনার দীর্ঘায়ু নিশ্চিত।
৩. বহনযোগ্যতা: সোনা সহজে সঞ্চিত রাখা যায়। এবং দ্রুত স্থানান্তরের সুবিধা দেয়।
৪. সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা: সোনাকে প্রায় সর্বত্র মূল্যের বা ভ্যালুর সঞ্চয়স্থল হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
বর্তমান বাজারের রকমসকম: রেকর্ড দাম এবং লগ্নিকারীদের আগ্রহ
সোনার দাম চড়েছে তিনটি মূল কারণে:
১. আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিশেষ করে কোভিড-১৯ আর বাণিজ্য নিয়ে উত্তেজনা
২. কম সুদের হার আর কোয়ান্টিটেভ ইজিংয়ের মত প্রসারণকামী আর্থিক নীতি
৩. মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে ভাবনা, যা টাকার দাম কমে যাওয়ার বিরুদ্ধে সুরক্ষা হিসাবে সোনার আবেদন বাড়িয়ে দিয়েছে।
কিন্তু রেকর্ড দাম সত্ত্বেও লগ্নিকারীদের মধ্যে সোনার চাহিদা জোরালো। কেন? বুঝতে হবে যে, এই চাহিদার পিছনে রয়েছে পোর্টফোলিওকে বহুমুখী করা, ক্ষতির সম্ভাবনা কমানো এবং আজকের অনিশ্চিত অর্থনৈতিক চালচিত্রে বাজারের ঝুঁকি সামলানো। যেহেতু পরিস্থিতি এখন বেশি স্থিতিশীল নয়, সোনার দাম চড়চড়িয়ে বাড়ছে। লগ্নিকারীদের আগ্রহও বিপুল। কারণ তাঁরা সোনার দীর্ঘমেয়াদি মূল্য আর সেই মূল্যের সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ক্ষমতা বুঝতে পেরেছেন।
কেন সোনা আকর্ষণীয় হয়েই রয়েছে?
সোনার দীর্ঘকালীন আকর্ষণের পিছনে অনেকগুলো বিষয় কাজ করে:
১. ডাইভার্সিফিকেশনের সুবিধা: অন্যান্য সম্পদের সঙ্গে সোনার কম কো-রিলেশন একে কার্যকরী পোর্টফোলিও ডাইভার্সিফায়ার করে তোলে।
২. মুদ্রাস্ফীতি থেকে সুরক্ষা: সোনার দাম মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়, ফলে কেনার ক্ষমতা বজায় থাকে।
৩. লিকুইডিটি: সোনার বাজার খুবই লিকুইড, ফলে লগ্নিকারীরা সহজেই কিনতে এবং বেচতে পারেন।
৪. কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের চাহিদা: বহু কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সোনা সঞ্চয় করা
জারি রেখেছে, যা সোনার গুরুত্ব চিহ্নিত করে।
উপরন্তু সোনা যে পথে পাওয়া যাচ্ছে:
১. আসল সোনা: সোনার কয়েন, বার বা গয়না কেনা।
২. সোনার ETF: সোনার দামে লক্ষ্য রাখা এক্সচেঞ্জ ট্রেড ফান্ড।
৩. খনি থেকে স্বর্ণ উত্তোলন কোম্পানির স্টক: সোনার সন্ধান, খনি থেকে স্বর্ণ উত্তোলন এবং সোনা তৈরিতে যুক্ত কোম্পানিগুলোতে লগ্নি করা।
৪. গোল্ড ফিউচার্স: গোল্ড ফিউচার্স কনট্র্যাক্ট বিক্রি করা।
৫. ডিজিটাল সোনা: সভরেন গোল্ড বন্ড।
শেষে বলি, অর্থনৈতিক চিত্রটি যতই বদলাক, সোনার ডাইভার্সিফায়েড লগ্নি পোর্টফোলিওর জরুরি উপাদান হিসাবে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং পরিশেষে বলা যায়, সোনার দীর্ঘমেয়াদি ভ্যালু প্রোপোজিশনের (সঙ্গে নিরাপদ আশ্রয়স্থলের মত সম্পদ হিসাবে প্রমাণিত ট্র্যাক রেকর্ড), ঝুঁকি সামলে সম্পদ রক্ষা করার চেষ্টা, কম-বেশি সব মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প। তবে এটা বোঝা জরুরি যে এই মুহূর্তে দাম অনেক বেড়ে রয়েছে, কারণ রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে দেশগুলো নিজেদের সোনার সঞ্চয় বাড়ানোর চেষ্টা করছিল। তার উপর আমেরিকার বসানো শুল্কের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পুঁজি বাইরে চলে যাচ্ছে। সম্পদ বরাদ্দ আর ডাইভার্সিফিকেশনের দিক থেকে ভাবতে গেলে সোনা সবসময় পোর্টফোলিও ডাইভার্সিফায়ার হিসাবে ৫-১০% বরাদ্দের যোগ্য। কিন্তু লগ্নিকারীদের অনুমান করার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতেও হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.