প্রতীকী ছবি
মোটামুটিভাবে তিন ধরনের প্রোফাইল হতে পারে ইনভেস্টরদের, সরলভাবে বোঝানোর জন্য জানাচ্ছেন সজল রায়, কর্ণধার, অঞ্জলি ইনভেস্টমেন্টস। রক্ষণশীল, আগ্রাসী এবং মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী– এই তিন প্রোটোটাইপ থাকতে পারে। “অবশ্য প্রতিটি বিনিয়োগকারীই ‘ইউনিক’, একজনের প্রোফাইল অন্যজনের থেকে আলাদা হতেই পারে,” অভিমত তাঁর। নীলাঞ্জন দে’র সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎকারের নির্যাস।
ইনভেস্টরদের মধ্যে বৈচিত্রের তো অভাব নেই। সঠিক অ্যালোকেশনের মূলে কী?
হ্যাঁ, বহু ধরনের লগ্নিকারী আছেন। কোথাও রিস্ক সম্বন্ধে ধারণা স্বচ্ছ নয়, আবার কারও কাছে ঝুঁকির সংজ্ঞা সুস্পষ্ট। পরামর্শদাতা হিসাবে সবসময় চেষ্টা করি রিস্ক প্রোফাইল বুঝে নিতে। তা গোড়াতেই করা প্রয়োজন। তারপরই বোঝার চেষ্টা করি, ঠিক কোন শ্রেণির প্রোডাক্ট দরকার হবে। সংশ্লিষ্ট ইনভেস্টরের ফিনান্সিয়াল প্ল্যান যথাযথ হতে হবে সবসময়ই, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস। কোন অ্যাসেটের পাল্লা ভারী হবে, অথবা কোন অ্যাসেটের ওজন কম হবে, তা ঠিক করতেই হবে।
এমন অনেক ইনভেস্টরকে চিনি, যাঁরা অ্যালোকেশনের ভুল কৌশল নিয়েছেন বলে পরবর্তীকালে অসুবিধা পড়েছেন, রিটার্ন পাওয়া যায়নি যথাযথভাবে। তাই কোন অ্যাসেটকে কতখানি গুরুত্ব দেবেন, তা জানতে হবে। আজ বাজারে প্রোডাক্টের প্রাচুর্য দেখতে পাবেন, আগামিদিনে তা বাড়বে বই কমবে না। তাই পেশাদারের পরিধি বাড়বে, আরও ‘চ্যালেঞ্জিং রোল’ এবং সেই সংক্রান্ত দায়িত্ব বহন করতে হবে আমাদের।
বহু ইনভেস্টর যথাযথ রিটার্ন পান না বলে নিরুৎসাহী হয়ে পড়েন…
ঠিকই বলেছেন। তবে এ-ও বলে রাখি ইনভেস্টরদের সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। ভালো পরামর্শদাতা তাঁদের গাইড হিসাবে কাজ করেন, চটজলদি রিটার্ন পাওয়ার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে বলেন। আসলে, একটি শ্রেণির কাছে খুব তাড়াতাড়ি বড় মাপের রিটার্ন পাওয়ার ইচ্ছাটা বেশ স্পষ্টাস্পষ্টিভাবে প্রকাশ পায়। মার্কেট তো ম্যাজিক জানে না, সেখানে সুঅভ্যাসের অভাবটা সহজেই বোঝা যায়। গড়পড়তা বিনিয়োগকারীকে জানিয়ে রাখি যে আপনাকে সময় দিতে হবে। কতবার এমন হয়েছে যে ‘টাইমিং’ করতে গিয়ে ইনভেস্টররা মুশকিলে পড়েছেন। কিছুতেই সঠিক সময়ে এন্ট্রি (এবং এক্সিট) করে উঠতে পারেননি।
বুঝতেই পারছেন, বিষয়টি প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে, আরও বড় আকার নিচ্ছে। তার কারণ দ্রুত রিটার্ন পেয়ে যাওয়ার (অথবা তা আশা করার) প্রবণতা বাড়ছে, কমছে না। আর কতিপয় অ্যাপ অথবা টেকনোলজি নির্ভর প্ল্যাটফর্ম, যে ভাবেই বলুন না কেন, এই বাতাবরণে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে চলেছে। লাগলে তুক, না লাগলে তাক, এমন মনোভাব নিয়ে বাজারে যঁারা পা রাখছেন, তাঁরা কিন্তু আদতে পিছিয়ে পড়ছেন। সঠিক পদ্ধতি মেনে কার্যকলাপ করছেন না বলে তাঁরা লসের সম্মুখীন হচ্ছেন। পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন এমন অনেককে আমরা চারপাশেই দেখি। খেঁাজ নিয়ে দেখুন, না জেনেশুনে ঝুঁকি নেওয়ার ‘ভিকটিম’ এই এঁরাই।
তাহলে কোন পথে এগিয়ে গেলে লাভবান হবেন আম আদমি?
শুনুন, নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলি, লগ্নির প্রক্রিয়া যথাসম্ভব আগে থেকে শুরু করুন। এবং নিয়মিতভাবে তা করুন, যতক্ষণ না আপনার “অ্যাকুমুলেশন” পর্ব শেষ হচ্ছে। অর্থাৎ উপার্জন করছেন যখন, তখন লগ্নির বিষয়টিকে প্রাধান্য দিন। যখন আয় করা বন্ধ হবে, তখন আপনার পরের পর্বটি চালু হবে। তার মানে “উইথড্রয়াল” আরম্ভ হবে। যা জমিয়েছেন, সম্পদ গঠন করেছেন, তা-ই তখন আপনার সহায় হবে। তাই নিয়মিত লগ্নির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে দ্বিমত থাকার কথা নয়। এরই মধে্য অবশ্য টপ-অাপ ইত্যাদির মতো ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখতে হবে।
উপার্জন বাড়লে, বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ানোর কথা। তা নিয়মমাফিক করুন, সুবিধা পাবেন পরে। আরও একটি দরকারি কথা – যদি “লাইফ স্টেজ” বদলে যাওয়ার দরুণ আপনার রিস্ক নেওয়ার ক্ষমতা বদলে যায় (যা প্রায়শই হয়ে থাকে) তাহলে আপনাকে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। অ্যাসেট অ্যালোকেশনের পরিবর্তন করার কথা বলছি; তখন কিন্তু পিছপা হলে চলবে না। বাজার তো বেড়েই চলে না, নেমেও আসে। আর একই ভাবে কেবল নেমেই আসে না, বেড়েও যায়। এই সাইকেল নিয়ম মেনে, রুটিন মাফিক আসে না, তা মনে রাখা দরকার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.