প্রতীকী ছবি
সাফলে্যর কোনও শর্টকাট হয় না। সৎ পথে থেকে কাজ করা, পরিশ্রম এবং ধৈর্যে্যর সুবাদেই জীবনে সাফল্য আসে। লগ্নির দুনিয়াতেও নিয়মটা একই রকম। এখানেও শর্টকার্টের কোনও জায়গা নেই। আর তাই, সবসময় দূরে থাকুন পনজি স্কিমের ফঁাদ থেকে। এর মতো ক্ষতিকারক আর কিছু নেই। সতর্ক করলেন সুরজিৎ দাস।
Risk comes from not knowing what you are doing – Warren Buffett. একটা টুকরো খবর চোখে পড়ল, আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করছি। কেরল, ভারতের সবচেয়ে শিক্ষিত রাজ্য, এই খবরের সূত্র। সেখানে সাক্ষরতার হার ৯৫%। শিক্ষায় অবশ্যই উজ্জ্বল, কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ‘পনজি’ স্কিমের আঁতুড়ঘরও দক্ষিণের রাজ্যটি। Ponzi কী? কেমন করে এই নাম হল? ইতিহাস কী বলে?–এ সব নিয়ে নতুন ভাবে আর কিছু বলছি না, আপনারা বেশ ভালোই জানেন। তবে বলে রাখি, বহু মানুষ এই ধরনের অস্বচ্ছ প্রকল্পে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন।
কেন এমন হয়? সাবেকি শিক্ষা কি তবে যথেষ্ট নয়? এখানে ‘শিক্ষা বনাম প্রজ্ঞা’ বিষয়টা চলে আসে। তর্কের মূলে হল এই যে–সাধারণ শিক্ষা মানুষকে পড়তে-লিখতে শেখায়। ডিগ্রি মানুষকে চাকরি দেয়। কিন্তু শিক্ষা একা লোভ নিয়ন্ত্রণ করতে শেখায় না। তাই আর্থিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য শুধুমাত্র অক্ষরজ্ঞানই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন শৃঙ্খলা, আত্মনিয়ন্ত্রণ আর অর্থনীতির মৌলিক শিক্ষা।
কিন্তু কেন পনজি এত আকর্ষণীয়? কীসের টানে এত মানুষ ভিড় জমান এখানে? জানেনই তো, আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি হল ‘দ্রুত ধনী হতে চাওয়া’। আর প্রতারকরা ঠিক এই দুর্বলতাকেই টোপ হিসেবে ব্যবহার করে। অবিশ্বাস্য রিটার্নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়কে মিশিয়ে “চেন” তৈরি করতে বলা হয়। প্রথমে কিছু লোককে লাভ দিয়ে বিশ্বাস জাগানো, আর তার পর ঝাঁপ-বন্ধ, এই হলো পনজির চালাকি। মানুষ প্রথমে ভাবে: “যেহেতু আমার চেনা-পরিচিত লাভ পাচ্ছে, আমিও পাব।” কিন্তু শেষমেষ সব ধসে পড়ে।
পনজি আসল ক্ষতি কোথায় করে, জানেন? আমার মতে পনজি শুধু টাকা চুরি করে না, আরও এক ভয়ংকর কাজ করে: পরিবার ভেঙে দেয় অনেক ক্ষেত্রে। তার কারণ সঞ্চয় উধাও হয়ে যায়। তাছাড়া মানুষের মাঝে সম্পর্ক নষ্ট করে, কারণ একে অপরকে প্রলুব্ধ করা হয়। এতে সমাজে অবিশ্বাস ছড়ায়, বিশেষত যখন একই কায়দায় প্রতারণা বার বার ঘটে।
সোজা কথাটা একটু অন্য ভাবে বলি। অস্বচ্ছ ও অনিয়ন্ত্রিত প্রকল্পের জন্য আর্থিক ব্যবস্থার উপর আঘাত আসে। পনজি তাই এক বিশেষ ধরনের সামাজিক ক্যানসার।
শর্টকাটের ফাঁদ
‘অতি দ্রুত টাকা বাড়বে’, এই ধারণা প্রায় সব সময় ভুল। যে টাকা ঘাম ঝরিয়ে উপার্জন করেছেন, তা রাতারাতি দ্বিগুণ হবে, এটাও একেবারেই অবাস্তব। শর্টকাটে ধনসম্পদ আসতে পারে না। অর্থবান হতে হলে সময়, ধৈর্য, শৃঙ্খলা চাই। আর, হ্যাঁ, দরকার সঠিক দিক-নির্দেশ।
সমাধান কী?
১. সুপরামর্শ নিন। যেমন স্বাস্থ্যর জন্য ডাক্তার লাগে, তেমনি অর্থের জন্য ভালো আর্থিক উপদেষ্টা দরকার।
২. আত্মশৃঙ্খলা তৈরি করুন। লোভকে নিয়ন্ত্রণ করলে আখেরে ফল পাবেন। অযৌক্তিক রিটার্নে ভরসা করবেন না।
৩. জ্ঞানকে মান্যতা দিন। আমাদের সংস্কৃতি বলে, লক্ষ্মীর আগে সরস্বতী। অর্থাৎ সম্পদ পাওয়ার আগে জ্ঞান চাই।
৪. স্বচ্ছ বিনিয়োগে ভরসা রাখুন। মিউচুয়াল ফান্ড, শেয়ার বা বন্ড, যেখানে ইচ্ছা বিনিয়োগ করুন। মনে রাখুন, এখানে নিয়ন্ত্রকের নজরদারি আছে।
শেষকথা
পড়াশোনা দিয়ে অক্ষরজ্ঞান আসে, কিন্তু প্রকৃত জ্ঞান আসে অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা থেকে। তাই বিনিয়োগ করার আগে ভাবুন। এই প্রসঙ্গে তিন প্রশ্ন।
এক, বিষয়টা কি যথেষ্ট বাস্তবসম্মত?
দুই, এটা কি নিয়ন্ত্রিত?
তিন, এর সঙ্গে জড়িত প্রক্রিয়া কি স্বচ্ছ?
শেষে বলি, পনজির ফাঁদে পা দিলে শিক্ষা বা বুদ্ধি, সবই ব্যর্থ হয়ে যায়। সত্যিকারের সম্পদ চান? বেছে নিন সততা, শৃঙ্খলা আর ধৈর্য্য। বাকি সব ফাঁকি।
(লেখক লগ্নি উপদেষ্টা)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.