বর্তমানে ইনভেস্টমেন্ট বাজারের ছত্রে ছত্রে শোনা যাচ্ছে একটাই নাম। স্মার্ট বিটা। বিনিয়োগকারীরা যেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন এই নিয়ে, তেমনই আবার এর নিরিখে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের পোর্টফোলিও-ও। বিষয়টা ঠিক কী, সবিস্তারে তুলে ধরল টিম সঞ্চয়।
‘স্মার্ট বিটা’। কথাটা ইদানীং ক্রমেই শোনা যাচ্ছে ইনভেস্টমেন্ট দুনিয়ার আনাচে কানাচে। বিভিন্ন পোর্টফোলিও তৈরি হচ্ছে এর ভিত্তিতে, এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীও এই সংক্রান্ত স্ট্র্যাটেজি মেনে চলতে চাইছেন বলে খবর। স্মার্ট বিটা নিয়ে যাঁরা উৎসুক, তাঁরা প্যাসিভ ইনভেস্টমেন্ট সম্বন্ধেও সজাগ। আজ আমাদের আলোচনা এই সূত্র ধরে।
প্যাসিভ ফান্ড: ইনডেক্স ফান্ড এবং এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড সঞ্চয়-এর পাঠক আগেই জেনেছেন। একটি আন্ডারলাইং ইনডেক্স থাকে প্রতিটির ক্ষেত্রে, এবং সংশ্লিষ্ট পোর্টফোলিও ম্যানেজার সেই সূচকই যথাযথভাবে অনুসরণ করার চেষ্টা করেন। এখানে যে ধারণাটির প্রসঙ্গে বলা উচিত, সেটি ‘আলফা’। বেঞ্চমার্ককে হারিয়ে দেওয়া যেখানে উদ্দেশ্য, সেখানে কতখানি তফাৎ করতে সক্ষম হয়েছেন কর্তৃপক্ষ, তা বোঝা যাবে আলফা পরখ করলে।
এর অন্যদিকে আছে বিটা-নির্ভর লগ্নি, সেখানে বেঞ্চমার্ক রিটার্নস প্রধান লক্ষ্য। এই দুইয়ের মাঝামাঝি অবস্থিত স্মার্ট বিটা – বিশেষ কিছু ফ্যাক্টর এবং রুল-বেসড কৌশল মেনে লগ্নির পক্ষে যা সহায়ক। উদ্দেশ্য সহজেই বোঝা যায় : মূল ইনডেক্স থেকে এগিয়ে যাওয়া, আরও বড়-মাপের রিটার্ন এনে দেওয়া।
ইনডেক্স চিনুন: সাধারণভাবে যখন বিনিয়োগকারী মার্কেটের দিকে তাকান, তাঁরা প্রধানত জনপ্রিয় সূচকগুলির অবস্থান (এবং বাড়া-কমা) পরখ করে দেখেন। সেনসেক্স, নিফটি, নিফটি নেকস্ট ইত্যাদি সূচকগুলি বেশ চেনা, অনেক ইনভেস্টরই এগুলি নিজেদের প্রাথমিক পছন্দের তালিকায় রেখেছেন।
এই প্রসঙ্গে মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের কথা বলা উচিত। যে শেয়ারের মার্কেট
ক্যাপ ভারি, সেগুলির ওয়েটেজও বেশি (ইনডেক্সের মধে্য)।
ইনভেস্টর কী খুঁজবেন?
পোর্টফোলিওয় বৈচিত্র্য খুঁজছেন যে ইনভেস্টর তিনি বিভিন্ন ফ্যাক্টর সম্বন্ধে খুঁটিয়ে জেনে নিতে পারেন। স্টক সিলেকশনের ক্ষেত্রে (এবং ওয়েটেজ নির্ধারণ করার জন্য) কিছু সূত্র তুলে ধরলাম আজ –
রুল-বেসড ইনভেস্টিং নিয়ে জেনে নিন প্রথমেই।
একাধিক ফ্যাক্টরের সমন্বয় আনার চেষ্টা করুন।
ডাইভারসিফিকেশন করার দরকার সবসময়ই।
আপনার উদ্দেশ্য হবে মূল ইনডেক্সটি হারিয়ে দেওয়া।
নিজে না পারলে অবশ্যই মিউচুয়াল ফান্ডের সাহায্য নেবেন।
এক্সপেন্স রেশিও যেন সীমার মধে্য থাকে, বাড়লে আপনার ক্ষতি।
যদি বেশি বাছবিচার করতে না চান, তাহলে ‘ইকুয়াল ওয়েট’ জাতীয় কৌশল মেনে চলতে পারেন।
জনপ্রিয় স্মার্ট বিটা ফ্যাক্টর
Alpha: বেঞ্চমার্ক রিটার্নের তুলনায় যে স্টকগুলি বেশি দিয়েছে, সেগুলি এই তালিকায় থাকবে।
Value: “আন্ডার ভ্যালুড” বলে চিহ্নিত স্টক এখানে পাবেন। প্রাইস আর্নিংস রেশিও দেখে নিন প্রতিটি স্টকের।
Momentum: হালে দেখা বলিষ্ট/তেজি পারফর্ম্যান্স যে স্টকের তা ‘মোমেন্টাম’ হিসাবে চিহ্নিত হতে পারে। চলতি ট্রেন্ডের ভিত্তিতে এর তালিকা তৈরি হয়।
Low Volatility: ‘প্রাইস ফ্লাকচুয়েশন’ অর্থাৎ দামের হেরফের যেখানে তুলনায় কম, সেই স্টকের দিকে মন দিন এই ক্ষেত্রে। রিস্ক কমানোর উপর জোর দেওয়া হয়।
Quality: শক্তিশালী আর্নিংস, উচ্চ হারে প্রফিট এবং ধারদেনা কম– এই জাতীয় কোম্পানির শেয়ার পাওয়া যাবে।
Dividend Yield: উচ্চহারে ডিভিডেন্ড পে অাউট দেয় এমন শেয়ার এই তালিকায়। সাধারণভাবে শেয়ারহোল্ডাররা এমন সংস্থা পছন্দ করেন। ক্যাশ ফ্লো নিশ্চিত করে।
ইকুয়াল ওয়েট
অনেক ধরনের ফ্যাক্টরের মধে্য স্বতন্ত্র “ইকুয়াল ওয়েট”। ইনডেক্সের মধে্য অন্তর্গত প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারকে একই ওয়েটেজ দেওয়া হয়েছে, এমন পোর্টফোলিও নানা কারণে পছন্দ হতে পারে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশের। তার মানে, এক (অথবা কয়েকটি) স্টক কোনওভাবেই প্রাধান্য পাবেন না। তাই ‘কনসেনট্রেশন রিস্ক’ স্বাভাবিকভাবেই কম। এতে ডাইভারসিফাই করা এবং একই সঙ্গে ব্যালেন্স এনে দেওয়া, দুই-ই নিশ্চিত করা যেতে পারে। এই প্রসঙ্গে কয়েকটি
পয়েন্ট:
স্মার্ট বিটা কৌশল সামগ্রিকভাবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
সাবেকি ইনডেক্স একটু পিছু হটেছে, আধুনিক ফ্যাক্টর-নির্ভর লগ্নি তার বদলে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে।
লো ভোলাটিলিটি ইত্যাদি ফ্যাক্টরের যথেষ্ট সম্ভবনা আছে আমাদের বাজারে, বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
বিভিন্ন নতুন শ্রেণির ইনডেক্স ইতিমধে্য বাজারে চলে এসেছে।
বিঃদ্রঃ–
জায়গার অভাবে কেবল পঁাচটির নাম উল্লেখ করা হল। ভারতের বাজারে ইনডেক্সের প্রয়োগ ক্রমেই বাড়ছে, এবং সতর্ক ইনভেস্টর এই জনিত কৌশল মেনে এগিয়ে যাওয়ার কথা সক্রিয়ভাবে ভাবছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.