মনের মতো স্টক কিনতে সব লগ্নিকারীই চান। কিন্তু তা বাছাই করার সঠিক মাপকাঠি সম্পর্কে তাঁদের একটি বড় অংশ অবহিত নন। যে দু’টি বিষয় এক্ষেত্রে না জানলেই নয়, তারই বিস্তারিত খোঁজখবর দিল টিম সঞ্চয়।
স্টক কেনার আগে সংশ্লিষ্ট সংস্থার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য রেশিওগুলি সম্বন্ধে জেনে নিতে পরামর্শ দেন পেশাদাররা। তাঁরা নিজেরাও ক্লায়েন্টদের পোর্টফোলিওতে অন্তর্ভুক্ত করবেন, এমন স্টক বাছতে চান যেখানে এই সব রেশিও ইতিবাচক। অবশ্য আরও বহু ধরনের শর্ত পূরণের পরই স্টক সিলেকশন হয়, তবে প্রাথমিক বাছাই পর্বটি যথাযথভাবে বোঝানোর জন্য আজ দুটি বড় মাপকাঠি নিয়ে বলছি কেবল। প্রাইস-আর্নিংস রেশিও এবং প্রাইস টু বুক রেশিও।
প্রাইস-আর্নিংস রেশিও
ফর্মুলা = (স্টক প্রাইস) ÷ (অার্নিংস পার শেয়ার)
সংশ্লিষ্ট কোম্পানির স্টক প্রাইস, অর্থাৎ যে দামে সেটির শেয়ার বাজারে বিকোচ্ছে, এবং শেয়ার-পিছু উপার্জন – এই দুইয়ের বিচার এখানে করা হয়। আয়ের প্রতি এক টাকায় ঠিক কতখানি দাম দিতে রাজি শেয়ারহোল্ডাররা, এই বিষয়টি এখানে খুব জরুরি। প্রাইস-আর্নিংস রেশিও–সংক্ষেপে পি-ই – আজকের ইনভেস্টরদের কাছে এই মাপকাঠি বেশ প্রাসঙ্গিক। যে সংস্থার পি-ই উঁচুর দিকে, সেখানে শেয়ারহোল্ডার মনে করে ভবিষ্যতে আর্নিংস সহায়ক ভূমিকা নেবে, এবং স্টক কেনাবেচার ক্ষেত্রে তা উল্লেখযোগ্য বিবেচিত হবে।
ধরা যাক, কোনও সংস্থার শেয়ার আজ ১০০ টাকায় পাওযা যাচ্ছে (স্টক মার্কেটে), এবং এটির ইপিএস (আর্নিংস পার শেয়ার) এখন ৫ টাকা। তার অর্থ এই কোম্পানির পি-ই রেশিও হল ২০। এর ব্যাখ্যা খুব তাৎপর্যপূর্ণ – লগ্নিকারীরা কুড়ি টাকা দিতে রাজি সংস্থার আর্নিংস যদি এক টাকা হয় (বাড়ে)।
উঁচু পি-ই : হয়তো স্টকটি “ওভার ভ্যালুড”, অথবা সংস্থাটি কোনও হাই-গ্রোথ ইন্ডাস্ট্রির অংশ, অথবা ইনভেস্টরদের একাংশ বেশ আশাবাদী যে আগামিদিনে গ্রোথ পাওয়া সম্ভব হবে।
প্রাইস টু বুক রেশিও
ফর্মুলা = (কোম্পানির মার্কেট ক্যাপিটলাইজেশন) ÷ (বুক ভ্যালু)
অথবা (স্টকের মার্কেট প্রাইস) ÷ (শেয়ার পিছু বুক ভ্যালু)
এখানে বুক ভ্যালুর ফর্মুলা এইরকম –
(মোট শেয়ার হোল্ডার ইকু্যইটি) ÷ (অাউটস্ট্যান্ডিং শেয়ারের সংখ্যা)
ইনভেস্টররা একটি বিশেষ ধারণা পাবেন যদি পি-বি রেশিও দেখে নেন বেচাকেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে।
আন্ডারভ্যালুড নাকি ওভারভ্যালুড – এই দুই প্রশ্নের মধে্য দেখে ঠিক উত্তর বেছে নেওয়ার পক্ষে সহায়ক।
ইনভেস্টমেন্ট মহলের একটি অংশ বিশ্বাস করেন পি-বি ব্যবহার করা সবসময়ই উচিত, অন্তত প্রাথমিকভাবে। কোনও স্টক নিজস্ব “ইনট্রিনসিক ভ্যালু”-র কমে বা বেশিতে পাওয়া যাচ্ছে কি না, তা বুঝে নিতে আগ্রহী তাঁরা। সংস্থার “নেট ভ্যালু অফ অ্যাসেটস” এখানে একটি জরুরি নির্ণায়ক।
ভালো পি-বি রেশিও কী হতে পারে?
সামগ্রিক বাজারের মতে, কোম্পানির শেয়ারটি কি সঠিকভাবে (অর্থাৎ সঠিক দামে) পাওয়া যাচ্ছে? এই প্রশ্নের মুখোমুখি সব শেয়ার হোল্ডাররা। পি-বি-এর উপর এক্ষেত্রে নির্ভর করতে পারেন তাঁরা। তবে সঙ্গে আরও বেশ কিছু জরুরি রেশিও পরীক্ষা করতে হবে। অনেক বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন যে পি-বি রেশিও যদি এক বা তার কম হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট স্টকটি “আন্ডারভ্যালুড” শ্রেণীর। এই মতের বিরুদ্ধে সরাসরি না গেলেও, আরও কিছু বিচ্ছিন্ন মত এর সঙ্গে কিছু শর্ত যোগ করে সিদ্ধান্ত নিতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পি-বি’র অতি-ব্যবহার নিয়েও সতর্ক করে দেন তাঁরা। তাঁদের অভিমত “রিটার্ন অন ইকু্যইটি” না পরখ করে শুধু পি-বি-এর সাহায্য নেওয়া ঠিক নয়। সংস্থার ইকু্যইটি এবং নেট ইনকাম, এই দুই বৃহৎ মাপের পরিসংখ্যান এখানে প্রাসঙ্গিক। এরপর সঙ্গের চার্টের উপর চোখ রাখুন।
পি-বি : এক, নাকি কম বেশি হলে ভালো?
বিশেষজ্ঞরা অনেক সময় যা বলেন
পি-বি : <১ আন্ডারভ্যালুড স্টক হতে পারে। ইনভেস্টররা হয়তো ভবিষ্যতে গ্রোথ পাবেন কি না, সে ব্যাপারে ভাবতে পারেন।
পি-বি = ১ – যথাযথভাবে ভ্যালু করেছেন বিনিয়োগকারীরা। তাঁরা সংস্থার অ্যাসেট, ব্যবসার গতিবিধি, প্রফিটের ধারণা ইত্যাদি বুঝে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
পি-বি : >১ – হয়তো ভ্যালুয়েশনের ধারণা উপরের দিকে, বাজারের এক বড় অংশ চাইছেন বেশি দাম দিতে। তাঁদের মতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসাটির “পোটেনশিয়াল” বেশ ভালো।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.