চিরাচরিত প্রথা মেনে মহাষ্টমীতে বেলুড় মঠে কুমারী পুজো। ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে মহাস্নানের মধ্যে দিয়ে বেলুড় মঠে দেবীর মহাষ্টমীর পুজো শুরু হয়। সকাল ৯টায় বেলুড় মঠের মূল মন্দিরের পাশের অস্থায়ী মণ্ডপের বেদিতে দুর্গাপ্রতিমার সামনে নিয়ে আসা হয় ৫ বছর ২ মাস বয়সি কুমারী শ্রীণিকা মুখোপাধ্যায়কে। দুর্গা প্রতিমার সামনেই ওই কুমারীকে সিংহাসনে বসানো হয়।
লক্ষ্মী জনার্দন মুখোপাধ্যায় ও মৌসুমী মুখোপাধ্যায়ের কন্যা শ্রীণিকাকে এদিন কুমারী হিসেবে পুজো করা হয়। বেলুড় মঠে কুমারীকে 'উমা' রূপে পুজো করা হয়। কুমারীকে বেনারসি শাড়ি, গয়নায় সাজিয়ে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় রামকৃষ্ণদেবের মন্দিরে। সেখানে দর্শনের পরে সন্ন্যাসী, মঠের একনিষ্ঠ স্বেচ্ছাসেবকদের কোলে চেপে কুমারীকে দুর্গা মণ্ডপে আনা হয়। সেখানেই সমস্ত রীতি-আচার মেনে চলে পুজো।
হাতপাখায় বাতাস করে, উলুধ্বনি দিয়ে, আরতি করে মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে দিয়ে হয় পুজো। পুজোর পরে কুমারীকে পুনরায় কাঠের চেয়ারে বসিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় মঠের পুরনো মূল মন্দিরে। শ্রীরামকৃষ্ণদেবকে দর্শনের পরে তাকে বারান্দায় বসানো হয়। যাতে নিচে অপেক্ষারত ভক্ত-দর্শনার্থীরা দেখতে পারেন। এরপরে কুমারীকে মঠের গাড়িতে চাপিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় বেলুড় মঠে শুরু হয় সন্ধি পুজো। এদিন কুমারী পুজো দর্শন করতে মণ্ডপে উপস্থিত ছিলেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রেসিডেন্ট স্বামী গৌতমানন্দজি মহারাজ। এছাড়াও সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ মহারাজ সহ অন্যান্য প্রবীণ সন্ন্যাসীরা উপস্থিত ছিলেন। কুমারী পুজো দেখার পাশাপাশি কয়েক হাজার মানুষ এদিন প্রসাদও গ্রহণ করেছেন বেলুড় মঠে। কুমারী পুজো উপলক্ষে এদিন সকাল থেকেই প্রচুর ভক্ত ও দর্শনার্থী বেলুড় মঠে ভিড় জমান। লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ও আঁটোসাঁটো নিরাপত্তার মধ্যেই বেলুড় মঠে কুমারী পুজো সম্পন্ন হয়। অন্যান্যবছরের মতো এ বছরও শুধু এ দেশ নয়, বিদেশ থেকেও প্রচুর ভক্ত কুমারী পুজো দেখতে এদিন বেলুড় মঠে এসে উপস্থিত হন।
১৯০১ সালে বেলুড় মঠে প্রথম দুর্গাপুজোর সূচনা করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। জানা যায়, স্বামী বিবেকানন্দের অনুরোধে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের শিষ্যা গৌরী মা কুমারী পুজোর ব্যবস্থা করেছিলেন।
পাদ্য-অর্ঘ্য-শঙ্খবলয়-বস্ত্রাদি সহযোগে স্বামী বিবেকানন্দ স্বয়ং ন’জন অল্পবয়স্কা কুমারীকে পুজো করেন। সমস্ত জীবন্ত প্রতিমার চরণে অঞ্জলি ও হাতে মিষ্টান্ন, দক্ষিণা প্রদান করে স্বামী বিবেকানন্দ তাদের ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করেছিলেন। সেই প্রথাই আজও চলছে বেলুড় মঠে।
উত্তরপাড়া ইয়ংস্টার ক্লাবেও ছোট্ট বালিকাকে কুমারী রূপে পুজো করা হয়। এখানে কুমারী পুজোয় দর্শনার্থীদের ঢল।
প্রতিবারের মতো ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী পুজো হয়। কুমারী নির্বাচিত হয় সাত বছর বয়সি লাবণ্য চট্টোপাধ্যায়। শাস্ত্রমতে, কুমারী দেবীর নাম রাখা হয়েছে ‘মালিনী’।
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.