শত্রুকে কখনও হাল্কাভাবে নেওয়া উচিত নয়। চাণক্যের সেই বাণী মাথায় রেখে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিল দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রক। ভারতীয় সেনার আগামী ১৫ বছরের বিরাট প্রতিরক্ষা কর্মসূচি সামনে আনল কেন্দ্র। যেখানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে সেজে উঠবে দেশের সেনা, অস্ত্র ভাণ্ডারে যুক্ত হবে আরও নানা ধরনের মারণাস্ত্র। শুধু তাই নয়, আগামী ১৫ বছরে মহাকাশেও যুদ্ধের জন্য পুরোদমে প্রস্তুত হয়ে উঠবে ভারত।
ভারত সরকারের লক্ষ্য আগামী ১৫ বছরে দেশের সেনাকে মহাকাশে যুদ্ধের জন্য পুরদমে প্রস্তুত করা। সেই মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পাইলটবিহীন যুদ্ধবিমান, ডিরেক্ট এনার্জি ওয়েপনের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আগামী দিনে পরমাণু শক্তিতে চলা জাহাজ, আগামী প্রজন্মের প্রযুক্তি, অত্যাধুনিক ড্রোন ও হাইপারসনিক মিসাইল বিপুল সংখ্যায় অস্ত্রভাণ্ডারে নিযুক্ত করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। অর্থাৎ সরকারের লক্ষ্য শুধু সেনাকে শক্তিশালী করা নয়, প্রযুক্তিতেও বিশ্বের যে কোনও শক্তিকে টক্কর দেওয়ার মতো ক্ষমতাবান করা।
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির রিপোর্ট অনুযায়ী, আগামী ১৫ বছরে দেশের সেনাকে সমস্ত দিক থেকে আধুনিক করে তুলতে কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করতে চলেছে সরকার। যেখানে নৌসেনার হাতে আসবে পরমাণু শক্তিধর অত্যাধুনিক জাহাজ ও ডুবোজাহাজ। ভারতীয় স্থল সেনার জন্য তৈরি করা হবে নয়া জেনারেশনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। বায়ুসেনার জন্য তৈরি হবে স্টিলথ টেকনোলজির অত্যাধুনিক ড্রোন। যা শত্রুর নজর এড়িয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে হামলার পর আবার ফিরে আসবে গন্তব্যে। এছাড়াও থাকবে হাইপারসনিক মিসাইল, লেজার অস্ত্র, শত্রুর ড্রোন ধ্বংসকারী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম।
রিপোর্ট বলছে, আগামী ১৫ বছরে ২০০-র বেশি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির অস্ত্র ও অন্যান্য উপকরণ তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছে প্রতিরক্ষামন্ত্রক। এর মাধ্যমে সেনার প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়ে নানা উপকরণ তৈরির কাজ করছে প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলি। ভারত সরকারের এই প্রস্তুতিতে স্পষ্ট যে আগামী দিনে বিশ্বে যুদ্ধের ধরন সম্পূর্ণরূপে বদলে যেতে চলেছে। যার ট্রেলার অবশ্য দেখা গিয়েছে অপারেশন সিঁদুরে। যেখানে ময়দানে নেমে যুদ্ধ নয়, বরং যুদ্ধ চলেছে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৫০টি চালকবিহীন স্টিলথ প্রযুক্তিসম্পন্ন যুদ্ধবিমান প্রস্তুত করা হবে। যা সুপারসনিক গতি অর্জন করতে সক্ষম, যা অস্ত্র নিয়েও উড়তে সক্ষম এবং ১৫ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত উড়তে পারে।
পরিকল্পনা অনুসারে, সশস্ত্র বাহিনীর আগামী সময়ে প্রায় ১৫০টি স্টিলথ মনুষ্যবিহীন যুদ্ধ বিমানবাহী যান (UCAV) প্রয়োজন হবে, যা সুপারসনিক গতি অর্জন করতে সক্ষম, যা অস্ত্র-সহ ১৫ কিলোমিটার উপর থেকে উড়তে সক্ষম। সশস্ত্র বাহিনীর সাইবার নিরাপত্তারও প্রয়োজন, যাতে স্যাটেলাইটগুলিকে হ্যাকিং থেকে রক্ষা করা যায়।
এগুলি ছাড়াও, স্যাটেলাইট-চালিত লেজার রেঞ্জ ফাইন্ডার এবং রিকনেসান্স স্যাটেলাইটেরও প্রয়োজন হবে। সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর জন্য উচ্চ শক্তির লেজার সিস্টেমেরও প্রয়োজন, যা উপগ্রহ-বিরোধী অভিযানেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
এর পাশাপাশি, সশস্ত্র বাহিনী আগামী দিনে তাদের ভাণ্ডারে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক অস্ত্র অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। সশস্ত্র বাহিনী হাইপারসনিক অস্ত্রের বিষয়েও সচেতন, তাই দ্রুত আক্রমণের জন্য কমপক্ষে ৫০০টি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র যুক্ত হবে।
বর্তমান টি৭২ ফ্লিটের বদলে যুক্ত হবে ১৮০০ ফিউচার ট্যাঙ্ক, ৪০০ হালকা ওজনের পাহাড়ে চলার উপযোগী যুদ্ধাস্ত্র, ৫০ হাজার ট্যাঙ্ক ও মাউন্টেড অ্যান্টি ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল। ৭০০-র বেশি রোবোটিক কাউন্টার আইইডি সিস্টেম। নৌবাহিনীর জন্য থাকছে নয়া এয়ারক্রাফট, ১০টি ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিসম্পন্ন ফ্রিগেট, ৭টি অত্যাধুনিক করভেট্টেস এবং ৪টি ল্যান্ডিং ডক প্ল্যাটফর্ম।
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.