ছবিতে পাল বাড়ির মা দুর্গাকে সাজানোর কাজ চলছে, ছবি : রঞ্জন মাইতি।
পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির betvisa888.com৷ আজ রইল তমলুকের পাল পরিবারের দুর্গাপুজোর কথা।
সৈকত মাইতি, তমলুক: অনটনের সংসারে দেবীর স্বপ্নাদেশ। মায়ের পুজো করতে হবে। বেকারত্বের চাপে তখন নাভিশ্বাস উঠেছে বছর তেইশের আশিসের। তমলুকের আশিসকুমার পাল। চাকরির খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছেন তিনি। কীভাবে করবেন মায়ের পুজো? হাল ছাড়েননি তিনি। সেই সময়ে মায়ের নির্দেশ পালন করতে না পেরে মনে দুঃখই ছিল। কিন্তু আজ তিনি সম্পন্ন গৃহস্থ। ট্যাক্স কনসালট্যান্ট হিসেবে পসার জমিয়েছেন। তাই পালবাড়িতে শুরু হয়েছে দুর্গাপুজো। তিনদশক পর মায়ের আদেশ শিরোধার্য করে পুজোর আয়োজনে মেতেছেন আশিসবাবু।
তমলুক পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের পায়রাটুঙ্গি চর এলাকার বাসিন্দা আশিসকুমার পাল। পেশায় ট্যাক্স কনসালটেন্ট। বয়স এখন প্রায় ষাটের দোরগোড়ায়। স্ত্রী ও এক পুত্রসন্তান নিয়ে বর্তমানে সম্ভ্রান্ত পরিবার। এবছরই প্রথম পাল পরিবারে নতুন করে পারিবারিক পুজোর সূচনা হল। দেবীর স্বপ্নাদেশ ও পিতৃপুরুষের ইচ্ছাকে মান্যতা দিয়েই তাই পুজো আরাধনায় চলছে জোরদার প্রস্তুতি। সে কারণেই বাড়ির দালানেই এখন মণ্ডপ বাঁধার কাজ চলছে। ডাকের সাজে মাকে সাজাতে ব্যস্ত বাড়ির সদস্যরা। পুজোর কয়েকটা দিন নাম সংকীর্তণ, আতসবাজি, নরনারায়ণ সেবার আয়োজন। পারিবারিক পুজোয় নিষ্ঠাভরে আচার পালনেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে পাল পরিবার। পুজোর আয়োজনে ব্যস্ত আশিসবাবু বলেন, “ঘুমের মধ্যেই একদিন দেখেছিলাম বাড়িতে মায়ের ঘটা করে পুজো পাঠ চলছে। কিন্তু সেদিনের স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবের বিস্তর ফারাক ছিল। তাই শেষ জীবনে হলেও দীর্ঘদিনের সেই অপূর্ণ আশা পূরণ হতে চলায় খুব ভাল লাগছে। কারণ এখনকার ব্যস্ততার মাঝেও পুজোর কয়েকটা দিন পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে কাছে পাওয়া আনন্দের ব্যাপার। মায়ের আরাধনা তো পরম সৌভাগের বিষয়।”
সেদিনের বছর ২৩ এর যুবক। কলেজের গণ্ডি পেরতেই বেকারত্ব ঘিরে ধরেছিল। উদভ্রান্তের মতোই এদিক ওদিক ছুটেই দিন কেটে যেত। পুজোর আনন্দঘন দিনগুলি তাই স্বাভাবিকভাবেই ফিকে হয়ে উঠছিল তমলুকের আশিসকুমার পালের কাছে। তারই মধ্যে স্বপ্নাদেশে মায়ের ডাক। বাড়িতে মায়ের আরাধনা করতে হবে। ঘুমের মধ্যেই বিছানায় উঠে বসেছিলেন ওই যুবক। যে পরিবারে দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন সংস্থান করা কঠিন হয়ে উঠছিল, সেখানে ঘটা করে বাড়িতে দুর্গা মায়ের আরাধনাটা ছিল দুঃস্বপ্নের মতোই। এরপর প্রায় তিন দশক কেটে গিয়েছে। আজ আর সেই দৈন্যের চিহ্ন নেই পাল পরিবারে। তাই বাড়ির অঙ্গনেই মায়ের পুজোর আয়োজন করে স্বপ্নাদেশ পালনে ব্রতী হয়েছেন আশিসকুমার পাল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.