সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দুর্গা হলেন আদ্যাশক্তি। তিনি পরমাপ্রকৃতি। দুর্গতি থেকে সকলকে রক্ষা করেন তিনি। শরতের শিউলি ফোটার সময় কয়েকদিনের জন্য মা আবির্ভূত হন মর্ত্যে। নিজের লাবণ্যময়ী রূপ নিয়ে তিনি সকলের মাঝে প্রকট হন। কেমন তাঁর প্রকৃত গাত্রবর্ণ? কী বলছে শাস্ত্র? তা নিয়ে রয়েছে বহু জিজ্ঞাসা।
মায়ের শ্রীঅঙ্গের বর্ণ অতসীপুষ্প বা গলানো সোনার মতো। একথা অনেকেই বলে থাকেন। কেউ কেউ আবার ক্ষেত্রবিশেষে লাল রঙের কথাও বলেন। কিন্তু এক কথায় এই জিজ্ঞাসার মীমাংসা সম্ভব নয়। কারণ, ‘দুর্গা’ নামটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু শক্তিদেবীর রূপভেদ। তাঁদের একেকজনের বর্ণ একেক রকম। বাহুর সংখ্যায় রয়েছে তফাত। এমনকী তফাত রয়েছে অস্ত্রতেও।
দেবী বর্ণনায় ‘তপ্তকাঞ্চনবর্ণাভ্যাম্’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। ঋগ্বেদ অনুযায়ী দেবীর আদিবর্ণ ‘লোহিতকৃষ্ণশুক্লাম্’। ছান্দোগ্য উপনিষদে উল্লেখ রয়েছে, ‘ত্রীণি রূপাণীত্যেব সত্যম্’। অর্থাৎ, এই তিনটি বর্ণই আদি। অগ্নি বা সূর্য হল লোহিত। জল বা বরুণ হল শ্বেত। পৃথ্বী বা পৃথিবী হল কৃষ্ণ। দেবী হলেন ত্রিবর্ণরঞ্জিত।
যদিও পুরাণ মতে, দেবীর বর্ণ অতসী পুষ্পের মতো। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে স্বর্ণালি বর্ণের অতসী ফুল ফুটে থাকতে দেখা যায়। আর এই রঙেই মৃৎশিল্পীরা আবহমানকাল থেকে প্রতিমা গড়ে আসছেন। মৎসপুরাণ অনুযায়ী, দেবী দুর্গার গায়ের বর্ণ তপ্তকাঞ্চনবর্ণাভ। এর অর্থ তপ্ত সোনার মতো বা সোনালি-হলুদ। এটি দেবীর উজ্জ্বল এবং তেজস্বী রূপকে নির্দেশ করে। দেবীর এই হরিদ্রাভ বর্ণ কেবল তাঁর শারীরিক সৌন্দর্য নয়। বরং তাঁর ক্ষমতা, শক্তি এবং শুভশক্তির প্রতীক। এমনকী বৃহদ্ধর্মপুরাণেও দেবীকে তপ্তকাঞ্চনবর্ণা বালিকা রূপে বেল গাছের সবুজ পাতার মধ্যে ঘুমিয়ে থাকতে দেখা যায়। স্বয়ং ব্রহ্মা গাত্রবর্ণ চিনে নিয়ে দেবীকে আবিষ্কার করেন। ক্ষেত্রবিশেষে দেবীর গাত্রবর্ণ লাল বর্ণের বলা হয়ে থাকে। এই রঙটি রজোগুণের প্রতীক। রজোগুণে শত্রু নাশ হয়ে থাকে। বিশুদ্ধ রজোগুণে সচ্চিদানন্দ ব্রহ্মও লাভ হয়। তাই তো শাস্ত্রজ্ঞরা মনে করেন, দেবী দুর্গা ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ—এই চতুবর্গ ফল প্রদান করে থাকেন।
আবহমানকাল ধরে দেবীকে কখনও কালিকা, কখনও নন্দা, কখনও-বা ভ্রামরী, শাকম্ভরী, রক্তদন্তিকা বিভিন্ন রূপে দেখা যায়। সেই মতো বর্ণেও তিনি কখনও ঘোর কৃষ্ণবর্ণ, গৌরবর্ণা, পীতবর্ণা কিংবা স্বর্ণবর্ণা রূপে প্রতীয়মান। বাংলায় দেবীর রূপ রং বৈচিত্রে ভিন্ন। কোথাও তিনি স্বর্ণবর্ণা তো কোথাও পীতবর্ণা। কাজেই, শাস্ত্রমতে তিনি তপ্তকাঞ্চনবর্ণ হলেও এই বাংলায় রয়েছে তাঁর বহু রূপ ও বহু রং।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.