Advertisement
Advertisement
Durga Puja 2025

নবপত্রিকায় কোন গাছ কীসের প্রতীক? দুর্গাপুজোয় এর তাৎপর্যই বা কী?

কী লেখা আছে 'শ্রীশ্রীচণ্ডী' গ্রন্থে?

Durga Puja 2025: What is the significance of nabapatrika and know Which tree symbolizes what in nabapatrika
Published by: Buddhadeb Halder
  • Posted:August 29, 2025 5:22 pm
  • Updated:August 29, 2025 5:22 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বোধনের পরই পুজো শুরু হলেও সপ্তমীর সকালে নবপত্রিকাকে স্নান করানো দিয়েই যেন দুর্গাপুজোর প্রকৃত সূচনা। নবপত্রিকাকে বধূবেশে সাজিয়ে গণেশের পাশে রাখা হয়। তাই কেউ কেউ এটিকে ‘কলাবউ’ বলে থাকেন। যদিও আদতে ইনি গণেশের স্ত্রী নন। তাহলে এই গাছ কীসের প্রতীক? পুজোয় এর তাৎপর্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ? 

Advertisement

দুর্গাপুজোর সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে নবপত্রিকার পুজো। অর্থাৎ কেবলই ‘কলাবউ’ নয়, সব মিলিয়ে ন’টি গাছ থাকে একসঙ্গে। এদেরই বলা হয় নবপত্রিকা। যার সম্পর্কে বলা হয়েছে “রম্ভা, কচ্চী, হরিদ্রা চ জয়ন্তী বিল্বদাড়িমৌ অশোকা মানকঞ্চেব ধান্যঞ্চ নবপত্রিকা”। অর্থাৎ কলাগাছ, গুঁড়ি-কচুর গাছ, হলুদ গাছ, জয়ন্তীর ডাল, বেলের ডাল, দাড়িম গাছ, অশোকের ডাল, মানকচুর গাছ ও ধানের গাছ। এই ন-টি গাছ দিয়েই রচনা করা হয় নবপত্রিকা। বেলতলায় যেমন দেবী দুর্গার অধিবাস হয়, তেমন নবপত্রিকারও অধিবাস হয়। এরপর এই গাছগুলি আর শুধু গাছ থাকে না। হয়ে ওঠে দেবীর প্রতীক।দুর্গাপুজোর সপ্তমীর সকালে নবপত্রিকাকে স্নান করানো হয়। এরপর দেবীর মূর্তির সঙ্গে এটিরও পুজো শুরু হয়। এই পুজো সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত চলে। দুর্গাপুজোর সঙ্গে সঙ্গে নবপত্রিকা পুজোরও একটা স্বতন্ত্র তাৎপর্য রয়েছে।

কলাগাছ হন ব্রাহ্মণী। ব্রাহ্মণীর বিভূতি লক্ষ করা যায় কলাগাছের মধ্যে। গুঁড়ি-কচু হন দেবী কালিকা। যদিও এক্ষেত্রে সরাসরি তেমন কোনও সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। হরিদ্রা হন দেবী দুর্গা স্বয়ং। এক্ষেত্রে গাত্রবর্ণ তুলনীয়। বর্ষাশেষে সতেজ হলুদ গাছ যে উৎসবের অঙ্গীভূত হয়ে উঠতে পারে, এই মতও গ্রাহ্য। জয়ন্তীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী কার্তিকী। দেবসেনাপতি কার্তিক থেকে দেবতাদের জয় সূচিত হয়। সেই অর্থে জয়ন্তী আর দেবী কার্তিকী মিলেমিশে একীভূত হয়ে গিয়েছেন। বেলগাছ যে শিবের প্রিয় তা আমরা সকলেই জানি। বেলের অধিষ্ঠাত্রী তাই শিবা। দাড়িম বা ডালিম গাছে রক্তদন্তিকার অধিষ্ঠান। এক্ষেত্রেও দাড়িমের রং এবং আকারের সঙ্গে এহেন সংযোগের সাদৃশ্য লক্ষিত হয়। অশোকের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শোকরহিতা। মানকচু গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী চামুণ্ডা। আর ধানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মী।

দেবী দুর্গার পুজো শুরু হয় সপ্তমীর দিন। সেদিন সকালে হয় নবপত্রিকার স্নান। এই নয়টি গাছকে পাট দিয়ে বাঁধতে হয়। এরপর সেটিকে নিয়ে যাওয়া হয় বেলতলায়। যে শাখায় জোড়া বেল থাকে, সেই শাখাটিকে কেটে এবার জুড়ে নেওয়া হয় নবপত্রিকার সঙ্গে। রাজার অভিষেকে যেমন নানা নদী বা সমুদ্রের জল প্রয়োজন হয়, নবপত্রিকাকে স্নানের সময়ও সেই রীতি। নানা ঘটের জলে স্নান করানো হয় নবপত্রিকাকেও। এরপর বিধিমতে পুজো করে সেটিকে স্থাপন করা হয় দুর্গাপ্রতিমার ডানপাশে।

‘শ্রীশ্রীচণ্ডী’তে উল্লেখ আছে, শরৎকালের এক মহাপুজোর কথা। সেখানে দেবীমাহাত্ম্য পাঠের উল্লেখও আছে। কিন্তু পূজাটি সঠিক যে কী, তা স্পষ্ট নয়। বিশেজ্ঞদের মতে, এই পূজাই হল নবপত্রিকা পূজা। আসলে সেই পুরাকালে অরণ্যজীবন মানুষের জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। আর তাই মানুষের উৎসব এই প্রয়োজনীয় উদ্ভিদ বা শস্যকে বাদ দিয়ে ছিল না। কালে কালে সেই শস্যপূজা বা উদ্ভিদপূজার রীতির সঙ্গে দেবীর মাহাত্ম্য যুক্ত হয়েছে। এক একটি উদ্ভিদের সঙ্গে দেবীর এক এক রূপের সংযোগ রচিত হয়েছে। আর সেই প্রাচীন নবপত্রিকার আরাধনা অঙ্গীভূত হয়েছে দুর্গার অকালবোধনের সঙ্গে। এই রীতি তাই আজও সাক্ষ্য বহন করে আমাদের অতীত উৎসবের। সাক্ষ্য দেয় সেই বিবর্তনেরও, যেখানে অতীত রীতির সঙ্গে সময়ের পরত যোগ হতে হতে বদলে গিয়েছে মানুষের উৎসবও ।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement