সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রাচীনকালে ক্ষীরগ্রামের দেবী যোগাদ্যার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল দূর-দূরান্তে। আজও বর্ধমানের বিভিন্ন স্থানে দেবী পুজোর প্রচলন রয়েছে। যদিও ক্ষীরগ্রামই দেবীর উৎপত্তিস্থল। বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানার কৈচর রেল স্টেশনের কাছেই রয়েছে ক্ষীরগ্রাম। বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রে খণ্ডিত হয়ে দেবী সতীর ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ এখানেই পতিত হয়।
৫১ সতীপীঠের অন্যতম পীঠস্থান ক্ষীরগ্রাম। এখানে দেবীর যে মন্দিরটি রয়েছে তাতে কোনও বিগ্রহ নেই। মন্দিরটি দু’টি অংশে বিভক্ত। প্রবেশপথ ও মন্দিরের গর্ভগৃহ। এই গর্ভগৃহে একটি বেদি থাকলেও সেখানে কোনও বিগ্রহ নেই। এই মন্দিরের পাশে একটি পুকুর রয়েছে। জনশ্রুতি অনুসারে এই ক্ষীরদিঘির জলের তলায় দেবী বিগ্রহটি রয়েছে।
ক্ষীরগ্রামের এই সতীপীঠে নানা অলৌকিক গল্পকথা প্রচলিত রয়েছে। এই কাহিনি মুখে মুখে ঘোরে আজও। এমনই একটি কাহিনি রয়েছে ক্ষীরদিঘি নিয়ে।
একদিন এক শাঁখারি শাঁখা বিক্রি করতে ক্ষীরগ্রামে এসেছিলেন। ক্ষীরদিঘির কিছু দূরেই ছিল ধামাস নামে একটি বড় পুকুর। সেদিকে এগোতেই শাঁখারি দেখলেন পুকুরে এক সুন্দরী কন্যা স্নান করছে। শাঁখারিকে দেখেই কন্যাটি চঞ্চল হয়ে উঠল, ‘বাবা আমায় শাঁখা পরিয়ে দেবে?’ বৃদ্ধ শাঁখারি মেয়েটিকে শাঁখা পরিয়ে দেয়। এরপর শাঁখার দাম চাইলে মেয়েটি বলে, ‘আমার বাবা দেবী যোগাদ্যার পূজারী। তার কাছ থেকেই তুমি দাম চেয়ে নিও।’ কথামতো ক্ষীরগ্রামে যোগাদ্যার পূজারীর কাছে গেলে শাঁখারির কথা শুনে পুরোহিত তো একেবারে অবাক বনে যান। ব্রাহ্মণ জানান, তাঁর কোনও কন্যা নেই। শাঁখারিকে সঙ্গে নিয়ে ব্রাহ্মণ মন্দিরের সামনে এসে দেখেন ভিতরে কেউ পাঁচটি টাকা রেখে গিয়েছে। হঠাৎ মন্দিরের মধ্যে টাকা রাখবে কে? ব্রাহ্মণ ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ জানতে চাইলে শাঁখারি তাঁকে ধামাস পুকুরের কাছে নিয়ে আসেন। দেখা যায় পুকুরের জলে দু’টি শাঁখাপরা হাত ভাসছে। দেবী তাঁর দু’খানি শাঁখা পরা হাত দেখিয়ে বুঝিয়ে দিলেন তাঁর কন্যার বেশে দেবী যোগ্যদাই শাঁখা পরেছেন। শাঁখারিও বুঝলেন তিনি যাকে শাঁখা পরিয়েছেন তিনিই স্বয়ং যোগ্যাদা দেবী।
শোনা যায় সেই থেকে নাকি শাঁখারী প্রতি বছর মাকে মহাপুজোর দিন শাঁখা পরিয়ে আসেন। সেই শাঁখারির বংশধরেরা আজও নাকি বৈশাখ সংক্রান্তিতে মহাপুজোর দিন মাকে শাঁখা পরাতে যান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.