সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাতভর টানা আকাশভাঙা বৃষ্টিতে জলবন্দি শহর কলকাতা। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত মাত্র কয়েকঘণ্টায় এমন জলমগ্ন তিলোত্তমার ছবিটা কবে দেখেছেন, মনে করতে পারছেন না কেউ। বড়জোর তুলনা চলছে ১৯৭৮ সালের প্লাবন এবং ২০২০ সালের আমফান পরিস্থিতির সঙ্গে। কেউ কেউ বলছেন, মেঘভাঙা বৃষ্টিতেই দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে এমন দুর্দশা শহরবাসীর। কিন্তু সাধারণ জ্ঞান বলে, মেঘভাঙা বৃষ্টি বা Cloudburst-এর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ পাহাড়ি অঞ্চলে ঘটে থাকে। যা বড়সড় বিপর্যয় ডেকে আনে। উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশে যেমনটা ঘটে। কিন্তু কলকাতায় কি তা সম্ভব? তারই ব্যাখ্যা দিলেন পরিবেশবিদ অর্ক চৌধুরী।
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সোমবার রাতে ৫ ঘণ্টায় কলকাতা জুড়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৫০ মিলিমিটার। ইঞ্চিতে এই অঙ্কটা দাঁড়ায় প্রায় ১০। অর্থাৎ সোমবার রাতে কলকাতায় ১০ ইঞ্চি বৃষ্টি হয়েছে। আবহবিজ্ঞান বলছে, ৫ ঘণ্টায় ৫ ইঞ্চির বেশি বৃষ্টিপাত মানেই তা অতি বৃষ্টি। সেই হিসেবে অতি বৃষ্টিতে ভেসেছে শহর কলকাতা। এখন প্রশ্ন হল, এটা কি মেঘভাঙা বৃষ্টি? আবহবিদ অর্ক চৌধুরীর মতে, তা মোটেই নয়। এই বৃষ্টি একেবারেই অতি গভীর নিম্নচাপের ফলে হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই নিম্নচাপ তৈরি হচ্ছিল গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। রবিবার রাত থেকে জলীয় বাষ্পভর্তি ‘কিউমুলোনিম্বাস’ মেঘ সঞ্চারিত হচ্ছিল কলকাতার আকাশে।
পরিবেশবিজ্ঞানীর ব্যাখ্যা, মেঘের ধর্ম ভেসে বেড়ানো। ফলে মেঘ অন্যত্র চলে যায়। কিন্তু কলকাতায় আকাশচুম্বী অট্টালিকা তার গতিপথে বাধা দেয়। সেখানে পুঞ্জীভূত হতে থাকে। এভাবেই দু-এক খণ্ড মেঘ জমে। এই অবস্থায় মেঘ স্থবির থাকলে বাড়ে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি। আর হাওয়া কাজ করে অনুঘটকের মতো। হাওয়া দেওয়ামাত্রই ওই ‘কিউমুলোনিম্বাস’ মেঘ ভেঙে বৃষ্টিতে ভাসিয়ে দেয় ভূখণ্ড। সোমবার রাতে সেই বৃষ্টিই হয়েছে কলকাতার বুকে। ‘মেঘভাঙা বৃষ্টি’ তা কোনওভাবেই নয়। সেটা সম্পূর্ণ অন্য বিষয় এবং তা হয়ে থাকে উচ্চ অক্ষাংশের এলাকায়।
এই নিম্নচাপ বা বৃষ্টি-কাঁটা আর কদিন? হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার নতুন করে নিম্নচাপ ঘনাচ্ছে। তার জেরে আবার বৃষ্টির সম্ভাবনা। পরিবেশবিদ অর্ক চৌধুরীর মতে, নিম্নচাপ ধীরে ধীরে সরছে কলকাতার উপর থেকে। তার গতিপথ ছোট নাগপুর মালভূমির দিকে। তার প্রভাবে দামোদর উপত্যকা সংলগ্ন এলাকাগুলিতে বৃষ্টির সম্ভাবনা। আর তেমন বৃষ্টি হলে সেখানে বন্যা পরিস্থিতি অবধারিত। তার প্রভাব পড়বে বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমানের মতো জেলাগুলিতেও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.