অমিতলাল সিং দেও, মানবাজার: ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর খবরের জের। শেষপর্যন্ত চন্দন গাছের তথ্যপঞ্জি তৈরির কাজ শুরু করল বনদপ্তরের পুরুলিয়া বন বিভাগ। রেঞ্জ এলাকার প্রতি মৌজা ধরে ধরে এই তথ্য রেজিস্টারে তালিকাভুক্ত করবেন বনকর্মীরা। তার ভিত্তিতে তৈরি হবে মানচিত্র। পাশাপশি চন্দনকাঠ চুরি ঠেকাতে প্রতি রেঞ্জের আধিকারিকরা সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে তৎপর হয়েছে। এছাড়া যে সমস্ত এলাকায় ওই গাছ আছে, তার কাছাকাছি যৌথ বন পরিচালন কমিটির সদস্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়ে নজরদারি মজবুত করতে চলেছে বনদপ্তর।
চন্দন গাছের ডেটা ব্যাঙ্ক তৈরির জন্য এবার আর মৌখিক নয়। মঙ্গলবার ৮টি রেঞ্জের আধিকারিকদের একটি লিখিত নির্দেশ দেন পুরুলিয়া বন বিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ। তিনি বলেন, “চন্দন গাছের তথ্য ভাণ্ডার আমরা তৈরি করছি। আগামী দিনে এই বন বিভাগে কোথায় চন্দন লাগালে তার গুণগত মান ভালো হবে সেই বিষয়ে আমরা সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহায্য নেব।” বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়া বন বিভাগের মোট বনভূমি প্রায় ৬৪,১৪০ হেক্টর। যার মধ্যে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ২১,৭৩৭ হেক্টর। ৭,৪১৪ হেক্টর রিজার্ভ ফরেস্ট। প্রাথমিকভাবে পুরুলিয়া বনবিভাগের তথ্য অনুযায়ী তাদের আওতায় থাকা ৮টি রেঞ্জ এলাকায় প্রায় হাজার পাঁচেক চন্দন গাছ আছে। তবে কোন মৌজার কোথায় সেগুলির অবস্থান তার নির্দিষ্ট কোনো তথ্য ছিল না রেঞ্জে কার্যালয়ে।
শুধু যে বনদপ্তরে জমিতেই চন্দন সীমাবদ্ধ আছে, তা নয়। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমিতেও বহু চন্দন গাছ আছে। বহু মানুষ নিজ ইচ্ছায় এই গাছের চারা বাড়িতে বা বাগানে লাগিয়েছেন। এছাড়া প্রাকৃতিকভাবেও পুরুলিয়ার জঙ্গল ও লাগোয়া অনেক এলাকায় এই মূল্যবান গাছ লক্ষ্য করা গিয়েছে। দুষ্কৃতীদের কাছে মূল্যবান হলেও এতদিন সেভাবে কদর ছিল না বনদপ্তরের কাছে। অনন্ত এমনটাই ধারণা বনমহলের মানুষজনের। কারণ, সম্প্রতি বাঘমুন্ডির মাঠা থেকে দু’জনকে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর তাদের থেকে উদ্ধার হয় ৭ কেজি চন্দন কাঠের টুকরো। পরবর্তী সময়ে তাদের জিজ্ঞসা করে পুলিশের তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ওই চন্দন মাঠা জঙ্গল থেকে দু’মাস আগে কাটা হয়েছিল। অথচ বনদপ্তরে নজরদারির অভাবে তাদের চোখেই পড়েনি যে জঙ্গল থেকে হাপিশ হয়ে গিয়েছে আস্ত একটি চন্দন গাছ! শুধু তাই নয়, ঘটনার দু’মাস পরেও দপ্তরের কাছে সেই গাছের খোঁজ ছিল না।
তবে পুরুলিয়ায় চন্দনের উপর কুনজর বহু বছর ধরেই রয়েছে দুষ্কৃতীদের। পুলিশের তথ্য বলছে, গত বছর বাঘমুন্ডি ও বলরামপুর এলাকা থেকে একাধিক চন্দন গাছ কেটে নিয়ে পালায় ভিন রাজ্যের দুষ্কৃতীদের একটি দল। পরে অবশ্য কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়। এর পূর্বেও জেলার একাধিক জায়গা থেকে চুরি গিয়েছে। চুরি হয়েছে বনদপ্তরের একাধিক দপ্তরের চত্বর থেকেও। ফলে ভয়ে ২০২৩ সালে অযোধ্যা রেঞ্জ কার্যালয়ে থাকা প্রায় ৮ থেকে ৯ টি চন্দন গাছকে লোহার খাঁচায় বন্দি করে রেখেছে বনদপ্তর। ওই বছরই চুরি আটকাতে তথ্য পঞ্জিকার কথা জানান পুরুলিয়া বন বিভাগের তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিএফও। কিন্তু তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। অবশেষে মঙ্গলবার চন্দনের উপর বনদপ্তরের উদাসীনতার খবর প্রকাশ হতেই নড়েচড়ে বসে পুরুলিয়া বন বিভাগ।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যেকটি রেঞ্জ কার্যালয়ে চন্দনের জন্য একটি নির্দিষ্ট রেজিস্ট্রার করতে বলা হয়েছে। যেখানে মৌজা, গাছের সংখ্যা ও তাদের আনুমানিক বয়স লিপিবদ্ধ করা হবে। এছাড়াও যে সমস্ত এলাকা স্পর্শকাতর বলে মনে হবে সেখানে নজরদারি দ্বিগুণ করে হবে। সমস্ত তথ্য এককাট্টা করে পুরুলিয়া বন বিভাগ পূর্ণাঙ্গ একটি ম্যাপ তৈরি করার কথা ভেবেছে। ডিএফও বলেন, “ওই মানচিত্র তৈরি হলে আমরা জেলা প্রশাসন ও পুলিশের হাতেও তুলে দেব। যাতে চন্দনের বিষয়টি তাদের নজরে থাকে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.