সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেবদেবীর জ্যোতির্বলয়ের কথা তো আমরা জানি! দেবীদের ত্রিনয়ন থেকে অগ্নিবর্ষণ হোক কিংবা দেবতার শরীরজুড়ে আলোর ছটা, তা ভক্তদের কাছে আশীর্বাদস্বরূপ। কিন্তু শুধু দেবতাদেরই নয়, মানুষের গা থেকেও আলো ছড়ায়। তবে তা অতি দুর্বল, তার তরঙ্গদৈর্ঘ্যে সাধারণ মানুষের দৃশ্যমানতার বাইরে। তাই আমরা এই গূঢ় সত্য কথা এতদিন জানতাম না। অন্তত সাম্প্রতিক সমীক্ষায় এমনটাই দাবি বিজ্ঞানীদের। ক্যালগেরি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কানাডার ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলরের যৌথ গবেষণা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এক বিজ্ঞান পত্রিকায়। তাতে বলা হচ্ছে, মানুষ এবং প্রত্যেক প্রাণীর শরীর থেকেই ওই অতি দুর্বল ফোটন কণা নির্গত হয়।
ব্যাপারটা ঠিক কী? বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, প্রাণীজগৎ যে পদ্ধতিতে খাবার হজম করে, তারই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে শরীরে একধরনের ফোটন কণা নির্গত হয়। এটা আসলে অতি দুর্বল ‘বায়োফোটন’ কণা। জীবিত অবস্থায় বায়োফোটনের নির্গমন অনবরত হয়। প্রাণের স্পন্দন স্তব্ধ হওয়ার পর সেই দুর্বল আলোও নিভে যায়। এই ফোটন কণার তরঙ্গদৈর্ঘ্য থাকে ২০০ থেকে ১০০০ ন্যানোমিটারের মধ্যে, যা মানুষের চোখে ধরা পড়ে না। শুধু মানবশরীর নয়, বায়োফোটনের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে গরু থেকে ব্যাকেটরিয়া – সমস্ত প্রাণীর দেহেই। এবং মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তা একেবারে শেষ হয়ে যায়।
প্রাণীর জগতে আলোকছটার অস্তিত্বের কথা কীভাবে জানতে পারলেন বিজ্ঞানীরা? ‘সায়েন্স অ্যালার্ট’ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে তাও বিশদে জানানো হয়েছে। চারটি ইঁদুর, দুটি ভিন্ন প্রজাতির গাছের উপর পরীক্ষা করা হয়েছে। চারটি ইঁদুরকে সম্পূর্ণ অন্ধকার জায়গায় ঘণ্টাখানেক আটকে রেখে পর্যবেক্ষণ চালানো হয়েছে। পরে তাদের মৃত্যুর পরও আর একঘণ্টা ধরে পর্যবেক্ষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাতেই এই বায়োফোটনের অস্তিত্ব স্পষ্ট হয়েছে বলে দাবি গবেষকদের। আবার গাছেদের ক্ষেত্রে টানা ১৬ ঘণ্টা ধরে পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে, কোনও দুর্বল বা আঘাতপ্রাপ্ত গাছের তুলনায় সুস্থ, স্বাভাবিক গাছ বেশি আলোকোজ্জ্বল। এ থেকে আরও প্রমাণিত হয়, অতি দুর্বল ফোটন কণার নিঃসরণ সম্পূর্ণভাবে জীবনক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত।
এসবই দেখা গিয়েছে ইলেকট্রন মাল্টিপ্লায়িং চার্জ কাপল ডিভাইস অর্থাৎ অতি শক্তিশালী কোনও ক্যামেরায়। প্রাণীজগতের শরীরের এই আলোকপ্রভার যে অস্তিত্ব দেখা গেল, তার প্রয়োগ ঠিক কী? বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, প্রয়োজনে চিকিৎসাক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করা যেতে পারে। মানবশরীরে সেল কিংবা টিস্যুর দুরূপ রোগনির্ণয়ে এই পদ্ধতি কাজে লাগতে পারে। অতি দুর্বল হলেও বায়োফোটনের তরঙ্গ ও গতি দেখে বিশেষ কিছু নির্ধারণ করা সম্ভব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.