ফাইল চিত্র
সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: অতীতেও বাঘের অস্তিত্ব ছিল বেলপাহাড়ি বিভিন্ন জঙ্গলে। ৬০ থেকে ৭০ বছর আগে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের রীতিমতো যাতায়াত ছিল বেলপাহাড়ি বিভিন্ন জঙ্গলে। এই মুহূর্তে বেলপাহাড়ির বিভিন্ন জঙ্গলে বাঘ থাকার মতো পরিস্থিতিও রয়েছে। এমনটাই মনে করছে বনদপ্তর।
বর্তমানে দেশের মধ্যপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। বাঘের সংখ্যা বেড়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। বাঘ নিজের পথ নতুন করে এক্সপ্লোর করছে। তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ জিনাত বা তার পিছু নিয়ে পুরুষসঙ্গীর আগমন। চলতি বছরের গোড়ায় এই পুরুষ বাঘটি প্রায় দু’মাস ছিল বেলপাহাড়ির ভুলাভেদা অঞ্চলের জঙ্গলগুলিতে। বাঘ থাকার জন্য প্রয়োজন ঘন ছায়াচ্ছন্ন জঙ্গল, জলের পর্যাপ্ত উৎস, বিশ্রাম নেওয়ার এবং লুকানোর জায়গা। আর সব থেকে বড় হল শুকর, হরিণ, মহিষের অবস্থান। ঝাড়খণ্ড রাজ্য লাগোয়া পুরুলিয়া, বাঁকুড়া জেলার সীমানা এলাকার বেলপাহাড়ির ভুলাভেদা, বাঁশপাহাড়ি জঙ্গলগুলিতে রয়েছে। আর এসব পশু বাঘেরও পছন্দের খাদ্যতালিকায়। এইসব এলাকায় আছে প্রকৃতিগতভাবে জলের উৎস – ঝর্না, নদী, হ্রদ। বাঘের শিকার করার জন্য প্রচুর খাদ্যের সংস্থানও রয়েছে বনাঞ্চলে।
এই বিষয়ে ঝাড়গ্রামের ডিএফও উমর ইমাম বলেন, “জঙ্গল বেড়েছে। বেলপাহাড়ির ময়ূরঝর্না এলাকায় বাঘ থাকার মতো উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। গতবার পুরুষ বাঘটি প্রায় দু’মাস ছিল। লোকালয়ের দিকেও আসেনি। জঙ্গলে উপযুক্ত পরিবেশ আছে বলেই এটি সম্ভব হয়েছিল। মানুষ সচেতন থাকলে বন্যপ্রাণগুলিও সুরক্ষিত থাকবে।” বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলা ছোটনাগপুর মালভূমির সম্প্রসারিত অংশের মধ্যে পড়ে। আর এই ধরনের ট্রপগ্রাফি হল বন্য জন্তুদের থাকার আদর্শ স্থান। বেলপাহাড়িতে রয়েছে তিন জেলাকে নিয়ে ময়ূরঝর্না এলাকা। ৪১৪ বর্গকিমির মধ্যে পড়ে পুরুলিয়া জেলার মানবাজার, ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি তথা বিনপুর দুই ব্লক এবং বাঁকুড়া জেলার সিমলিপাল,তালডাংড়া, খাতড়া ও রাইপুর। আর এই ক্ষেত্রটি এই মুহূর্তে বাঘ থাকার জন্য উপযুক্ত এলাকা।
জনশ্রুতি রয়েছে ৬০-৭০ বছর আগে এই বেলপাহাড়ির লালজল, বাঘগুহা এলাকায় প্রায় সময়ই বাঘের দেখা মিলত। ২০১৮ সালে ওড়িশার শিমলিপাল থেকে একটি বাঘ লালগড়ের জঙ্গলে ঢুকে পড়েছিল। প্রায় দু’মাস বাঘটি লালগড়, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়ার বিভিন্ন জঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়েছিল। যদিও দুর্ভাগ্যজনকভাবে জঙ্গলে শিকারিদের হাতে সেটি মারা যায়। গত বছর সিমলিপাল অভয়ারণ্য থেকে জিনাত নামে বাঘটি ঝাড়খণ্ডের জামসেদপুর বনাঞ্চলের চাকুলিয়া হয়ে বেলপাহাড়িতে ঢুকেছিল। জঙ্গলে দু’দিন থাকার পর সেটি চলে যায়।পরে বাঁকুড়াতে গিয়ে জিনাত ধরা পড়ে। এরপরও চলতি বছর আরেকটি পুরুষ বাঘ প্রায় মাস দু’য়েক ছিল বেলপাহাড়ির ভুলাভেদা, শিমূলপাল, বাঁশপাহাড়ির বিভিন্ন জঙ্গলে। বাঘটি লোকালয়ের দিকে আসার চেষ্টা করেনি। বনদপ্তর তাদের ট্রাপ ক্যামেরা মারফত নজরদারি করে দেখছে বাঘটি বেশ ভালোই ছিল জঙ্গলে। বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জেলায় জঙ্গলের ঘনত্ব বেড়েছে প্রায় পাঁচ শতাংশ। তার সঙ্গে রয়েছে মিষ্টি জলের সংস্থান। পাশাপশি শিয়াল, হায়না, হরিণ,বন শূকর, নেকড়ে-সহ অন্যান্য প্রাণি বৈচিত্রে এখন ভরপুর এইসব জঙ্গল। বনদপ্তরের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, অতীতের বাঘ এবার আর শুধু গল্পে সীমাবদ্ধ নেই। নতুন টেরিটরি ধরে ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ থেকে বাঘ, বাঘিনী আসার করিডর তৈরি হয়েছে। বাঘ ফের এইসব জঙ্গলে থাকতে পারে। এমন কথাও মনে করা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.