ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: ভোর প্রায় পৌনে চারটে। কলকাতা-সহ তামাম ভারতে পঞ্চমীর ভোরের আলো ফুটতে আরও কিছু দেরি। এক মহাজাগতিক ঘটনা ততক্ষণে ঘটে গিয়েছে কয়েক লক্ষ কিলোমিটার দূরের মহাকাশে। এক সূক্ষ্ম আঘাতে বেন্নু-র শরীর থেকে এক টুকরো পাথুরে মাংস খুবলে নিয়েছে নাসার মহাকাশযান ওসিরিস রেক্স! সে এক দুঃসাহসিক কাণ্ড।
মহাকাশ থেকে ক্রমে গত কয়েক মাসে বেন্নুর কক্ষপথে পাক খেতে খেতেই তার খুব কাছে গিয়ে পৌঁছে যায় ওসিরিস রেক্স। আজ ভোরে তার পিঠ ছুঁয়ে মাত্র পাঁচ সেকেন্ডে একটি পোগো স্টিকের সাহায্যে খুবলে নিল প্রায় ৬০ গ্রাম নুড়ি-পাথর। কিন্তু কী এই বেন্নু? ব্যাস পাঁচশো মিটার। পৃথিবীর সবথেকে কাছে থাকা একটি গ্রহাণু। যা প্রতি ছ’বছরে একবার পৃথিবীর কক্ষপথে ঢুকে পড়ে তার খুব কাছ ঘেঁষে চলে যায়।
Congratulations to the entire team and all of ’s partners on this mission! We are on the way to returning the largest sample brought home from space since Apollo. If all goes well, this sample will be studied by scientists for generations to come!
— Jim Bridenstine (@JimBridenstine)
মহাকাশ গবেষণায় উঠে এসেছে এইভাবে চলতে চলতে আগামী ২১৭৫ থেকে ২১৯৬ সালের মধ্যে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়বে এই গ্রহাণু। অর্থাৎ প্রায় দেড়শ থেকে পৌনে দু’শো বছর পর। মনে করা হয়, এই বেন্নুর জন্যই পৃথিবী থেকে হারিয়ে গিয়েছে ডাইনোসররা। আবার সে আছড়ে পড়লে দেড় হাজার মিটার গভীর ক্ষত সৃষ্টি হবে পৃথিবীর বুকে। বেন্নুর এত শক্তির উৎস কী? এই কারণ অনুসন্ধান করতেই নাসার বিশেষ মহাকাশ যান ওসিরিস রেক্স পাড়ি দেয় ২০১৬ সালে। যার মূল নকশা তৈরি করেছেন খড়গপুর আইআইটির এক প্রাক্তনী বাঙালি বিজ্ঞানী প্রতাপ প্রামাণিক। গত কয়েক বছরের গবেষণায় জানা গিয়েছে, বেন্নুর পিঠের কঠিন রূপ গড়ে উঠেছে কার্বন ও হাইড্রোজেন পরমাণুর সাহায্যে। যা প্রাণের উৎসের অন্যতম কারণ। এর বিস্তারিত বিশ্লেষণের জন্যই তার পিঠের অংশ থেকে কুড়িয়ে আনা হয়েছে পাথুরে অংশ।
ওসিরিস রেক্সের এই অভিযানের জন্য প্রয়োজন ছিল তিনটি জিনিস। কনিক্যাল করিউগেটেড মাইক্রোওয়েভ হর্ন অ্যান্টেনা, পোলারাইজার এবং মাইক্রোওয়েভ কমিউনিকেশনের জন্য ডিপ্লেক্সার। যার নকশা তৈরি হয়েছে প্রতাপবাবুর হাতে। শুধু ওসিরিস রেক্স নয়, জুনো, মাভেন, ইনসাইটের মতো নাসার একাধিক মিশনের সঙ্গে জড়িত এই বাঙালি বিজ্ঞানী। এই পাথর তুলে আনার পরও আরও এক বছর বেন্নুর কক্ষপথে থেকে যাবে ওসিরিস রেক্স। ২০২৩ সালে তার পৃথিবীতে ফেরার কথা। তখন পৃথিবীর কাছে এসে এই নুড়ি-পাথরগুলো একটা ক্যাপসুলে পুরে প্যারাসুটে করে ছুড়ে দেবে পৃথিবীতে। এই মুহূর্তে নাসার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যৎ মিশনের সঙ্গে জড়িত প্রতাপবাবু।
তারও খোঁজ দিলেন। বলছেন, “২০২১-এ লুসি নামে মহাকাশে আরও একটি যান পাঠাতে চলেছে নাসা। যা ট্রজান নামে কিছু গ্রহাণুর চরিত্র অনুসন্ধান করবে।” ট্রজান কী? খুব অদ্ভুত এই গ্রহাণুগুলি সূর্যের চারপাশে পাক খাচ্ছে বৃহস্পতির সঙ্গে সম দূরত্ব রেখে। এগুলি একটি গ্রাহণু গোষ্ঠীর অংশ। এমন আরও একটি গ্রহাণু গোষ্ঠী রয়েছে। এই অভিযান সৌরজগতের সূচনা এবং গ্রহের গঠন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত ধারনা দেবে। ২০২১-এর অক্টোবরে সেটির পৃথিবী থেকে রওনা দেওয়ার কথা। প্রতাপবাবুই জানাচ্ছেন, “কনিক্যাল করিউগেটেড মাইক্রোওয়েভ হর্ন অ্যান্টেনা, পোলারাইজার এবং মাইক্রোওয়েভ কমিউনিকেশনের জন্য প্রয়োজনীয় ডিপ্লেক্সার এই লুসির সঙ্গেও পাড়ি দেবে সৌরজগতে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.