Advertisement
Advertisement
Cat

দশহাজার বছর ধরে মানুষের বন্ধু, তবু বিড়ালকে ঘিরে এই রহস্যগুলির সমাধান আজও হয়নি

বিড়াল হয়তো চিরকালই রয়ে যাবে রহস্যময় কুয়াশার ভিতরে।

Predator for hire: Curious case of the Cat
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:September 6, 2025 6:00 pm
  • Updated:September 6, 2025 6:00 pm   

বিশ্বদীপ দে: “মার্জ্জারসুন্দরী, নির্জ্জাল দুগ্ধপানে পরিতৃপ্ত হইয়া আপন মনের সুখ এ জগতে প্রকটিত করিবার অভিপ্রায়ে, অতি মধুর স্বরে বলিতেছেন, “মেও!” বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘কমলাকান্তের দপ্তর’-এর ‘বিড়াল’ শীর্ষক এই রচনা প্রায় সকলেরই পড়া। এই একটি বাক্যে বঙ্কিম মানুষের চোখে বিড়ালের যে ছবিটি এঁকেছিলেন তা চিরকালীন হয়ে রয়েছে। আর সেখানেই বিড়ালের নিরীহ ‘মিউ’ ডাকের ভিতরে রয়ে গিয়েছে কমলাকান্তের কানে ভেসে আসা অমোঘ প্রশ্নটিও- ‘তোমরা মনুষ্য, আমরা বিড়াল, প্রভেদ কী?’ বহু পরে যার উত্তরও দিয়েছেন আর্নেস্ট হেমিংওয়ে। তাঁর মতে, ‘একটি বিড়ালের মধ্যে নিখাদ আবেগজনিত সততা রয়েছে। মানুষেরা কোনও এক বা একাধিক কারণেই নিজেদের আবেগকে ঢেকে রাখে। বিড়াল পারে না।’ অথচ এমন বৈপরীত্য সত্ত্বেও দশহাজার বছর ধরে অটুট মানুষ-বিড়ালের সম্পর্ক! তবু মার্জার রহস্য আজও আমরা ভেদ করতে পেরেছি কি? একগুচ্ছ রহস্যমালা বিড়ালকে ঘিরে আজও পাক খায়।

Advertisement

এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিস্ময় বোধহয় বিড়ালের ডাক। সুকুমার রায়ের ‘হযবরল’র শুরুতে ‘মোটা-সোটা লাল টক্‌টকে একটা বেড়াল’ বলে উঠেছিল, ম্যাও। যা শুনে গল্পের প্রধান চরিত্রের মনে হয়েছিল, ‘কী আপদ! রুমালটা ম্যাও করে কেন?’ রুমাল কেন ম্যাও করে, সেটা জানা যায়নি। যেমন জানা যায়নি, আদৌ কেন ম্যাও করে বিড়াল! লক্ষ করে দেখবেন বিড়াল একে অপরের দিকে তাকিয়ে কিন্তু ম্যাও ডাকে না। সাধারণত গরর কিংবা হিসস জাতীয় শব্দ করে। যাবতীয় ম্যাও কিন্তু মানুষেরই জন্য। খিদে পেলে, খেলতে চাইলে কিংবা স্রেফ পাত্তা পেতে চাইলেও মিহি গলায় ম্যাও ডেকে কাছে আসে তারা। এ এক আশ্চর্য বিষয়।

MP town reports India's first cases of H5N1 flu in domestic cats
পুষ্যি হিসেবে বিড়াল বড় আদরের

বিড়াল বললেই যেটা প্রথমেই মাথায় আসে সেটা ‘বাঘের মাসি’। ভেবে দেখুন দিব্যি মানুষের পুষ্যি হয়ে দিন কাটানো বিড়ালের সঙ্গে বাঘের জিনগত মিল মোটামুটি ৯৫.৬ শতাংশ! উভয়ই ঘন প্রোটিনযুক্ত খাবার খেয়ে বড় হয়। দুই প্রাণীর শাবকরাই ছোটবেলায় শিকার ধরা শেখে খেলতে খেলতে। ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যায় তাদের শিকার ধরার কায়দাও এক। অথচ জিনের ওই ফারাকটুকু কাউকে বিড়াল, কাউকে বাঘ হিসেবে গড়ে তোলে। তবে এও খেয়াল করলে দিব্যি বোঝা যায়, বিড়ালের মেজাজের মধ্যে সেই একই রাজকীয়তা রয়েছে। যতই সে মানুষের পোষা প্রাণী হয়ে উঠুক, দেখলেই বোঝা যায়, ‘মেজাজটাই আসল রাজা’। আরেকটা মজার বিষয়। যেমন মানুষের আঙুলের ছাপ একে অপরের থেকে আলাদা। তেমনই বিড়ালের নাকের ছাপ তথা নোজ প্রিন্ট সব সময়ই স্বতন্ত্র! এও এক বিস্ময়। প্রকৃতির অপার লীলা এভাবেই ছড়িয়ে রয়েছে সর্বত্র।

বিড়ালের যৌনতাও মানুষকে বিস্মিত করে। ‘বিড়ালের কান্না’কে অশুভ মনে করা হয়। অথচ আসলে এই কান্নার পিছনে যে যন্ত্রণা সেখানে মিশে থাকে রাগমোচনের সুখই! আসলে পুরুষ তথা হুলো বিড়ালের পুরুষাঙ্গে কাঁটা থাকে। ফলে স্ত্রী বিড়ালের যোনিতে পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করলে সে যন্ত্রণায় কঁকিয়ে ওঠে। তারা চেঁচায়, হিসস করে ওঠে, এমনকী সরে যেতেও চায়। এখানেই শেষ নয়, হুলোকে আক্রমণও করে বসে। সব মিলিয়ে সেই সুখ-যন্ত্রণায় সে কঁকিয়েও কাঁদে। আর যাই হোক, তাকে এতকাল অশুভ ভেবে কী ভুলই না করেছে মানুষ!

World’s fattest cat dies
বিশ্বের সবচেয়ে স্থূলকায় বিড়াল

বিড়ালের মৃত্যুও বিস্ময়কর। শেষদিন আসন্ন মনে করলে এই না-মানুষেরা চলে যায় লোকচক্ষুর অন্তরালে। কেন তারা এমন করে তা বলা মুশকিল। তবে আপাত ভাবে মনে করা হয়, সম্ভবত এর কারণ ‘শত্রু’র থেকে দূরে সরে যাওয়া। যেন শত্রু তাকে এমন অসহায় অবস্থায় না পায়, তাই সে সকলের থেকে দূরে একেবারে গোপনে চলে যায়। তবে এই বিষয়ে বহু মানুষের ধারণা, বিড়ালরা শান্তিতে মৃত্যুর কোলে মাথা রাখে। কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। বহু ক্ষেত্রেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অকথ্য যন্ত্রণা অনুভব করার পর তবেই মৃত্যুর কুয়াশাঢাকা প্রদেশে প্রবেশ করে তারা। মানুষের যত অসুখ, তার অধিকাংশই হয় বিড়ালের। হৃদরোগ, মধুমেহ, ক্যানসার ইত্যাদি। একটি বিড়াল মারা গেলে কি অন্য বিড়াল দুঃখ পায়? গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পায়। তবে তাদের সংখ্যা খুবই কম। অধিকাংশ বিড়ালই মৃত বিড়ালদের এড়িয়ে চলে।

Mother-son duo wanted to file missing diary for cat, Kolkata police stunned
কমলা বিড়াল

তবে সব রহস্যই যে অমীমাংসিত হয়ে রয়েছে তা নয়। অতি সম্প্রতি বিড়ালের এক রহস্য সমাধান করে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা। সেটা কমলা বিড়ালের রহস্য। কী করে কোনও বিড়াল এমন রঙের হয় সেটাই বহু বছর ধরে ভাবিয়েছে বিজ্ঞানীদের। সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণাপত্রে এই বিষয়ে আলো ফেলা হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, এর জন্য দায়ী ‘Arhgap36’ নামের এক জিন। এই জিনের কারণেই এমন অদ্ভুত রঙের বিড়াল দেখা যায়। সেই জিনে এমন এক ডিএনএর অনুপস্থিতি, যা প্রোটিন তৈরি করে না।

মানুষের আদর বিড়ালের ‘দাবি’

তবে এই ধরনের আবিষ্কারে কিন্তু বিড়ালের একগুচ্ছ রহস্যে যবনিকা পড়ার সম্ভাবনা নেই। কুকুর আরও বহু হাজার বছর আগে থেকে মানুষের সঙ্গী। তার আচরণ আরও সহজেই বোধগম্য। বিড়াল হয়তো চিরকালই রয়ে যাবে রহস্যময় কুয়াশার ভিতরই। যতই আদরের হোক, চেনা হোক… পুরোপুরি তারা বোধহয় চেনা হয়ে উঠতে চায় না বিড়ালের। কেন? সেও এক রহস্য বইকি।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ