অর্ণব দাস, বারাকপুর: পার্থিব নয়, বরং অনন্ত মহাজাগতিক বিষয় নিয়ে বেশি আগ্রহ থাকে অনেকের। তবে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে সেই আগ্রহের বশে মাথার ঘাম পায়ে ফেলা পরিশ্রম! তা কল্পনারও বাইরে। অথচ বারাকপুরের ছাত্র ইন্দ্রনীল মণ্ডল সেই অভাবনীয় কাণ্ডটাই ঘটিয়ে ফেলেছে। মঙ্গলে প্রাণধারণ নিয়ে মৌলিক গবেষণা কাজের জন্য নাসা থেকে ডাক পেল সে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমেরিকা উড়ে যাবে ইন্দ্রনীল, কেনেডি স্পেস সেন্টারে কাজ করতে। নাসা আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় চার ধাপ পেরিয়ে তবেই শীর্ষ স্থানে পৌঁছেছে বারাকপুরের ছাত্র। তাই আনন্দের অন্ত নেই তার পরিবার, স্কুল, পাড়া – কোথাও।
বারাকপুরের মোহনপুরের বাসিন্দা ইন্দ্রনীল কলকাতার এক নামী ইংরাজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্র। বরাবর তার আগ্রহের বিষয় ডেটা সায়েন্স, রকেট সায়েন্সে। সেই আগ্রহ থেকেই সিলেবাসের বাইরে নানা বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে সে। এভাবেই একদিন তার কাছে সুযোগ চলে আসে। ইন্দ্রনীল জানতে পারে, নাসা স্কুলপড়ুয়াদের নিয়ে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে আন্তর্জাতিক স্তরে। একটি নির্দিষ্ট বিষয় দিয়ে দেওয়া হবে তাদের। তার উপর গবেষণাপত্র জমা দিতে হবে। যার গবেষণা যত মৌলিক ও সমৃদ্ধ হবে, সে-ই সেরার শিরোপা পাবে। রাজ্য, দেশ, মহাদেশ এবং আন্তর্জাতিক – চার ধাপে এই প্রতিযোগিতা হবে। এতগুলি সিঁড়ি ভেঙে তবেই নাসায় যেতে পারবে বিজয়ী।
ইন্দ্রনীল এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। তাদের বিষয় ছিল মঙ্গল। ২০৭০ সালের মধ্যে লালগ্রহে জীবনধারণ কতটা সম্ভব, তা নিয়ে গবেষণাপত্র জমা দিতে বলা হয়েছিল স্কুলপড়ুয়াদের। ইন্দ্রনীল নিজের মেধা প্রয়োগ করে, দিনরাত পরিশ্রম করে এই সংক্রান্ত একটি গবেষণা রিপোর্ট তৈরি করে। তার মূল বিষয় ছিল মঙ্গলে প্রাণধারণ করতে গেলে ন্যূনতম কী কী প্রয়োজন। বারাকপুরের ছাত্রের সেই রিপোর্ট তাক লাগিয়ে দিয়েছে নাসার আয়োজকদের। প্রথমে রাজ্যস্তরে শীর্ষস্থান অধিকার করে ইন্দ্রনীল সুযোগ পায় জাতীয় স্তরে। তারপর সেখান থেকে ভারত ও এশিয়ার সেরা হয়ে এখন সে পা বাড়িয়েছে নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারের পথে।
নিজের সাফল্যে আপ্লুত ইন্দ্রনীল বলছে, ”মা, স্কুলের সবাই খুব সাহায্য করেছে। নাহলে এতটা পারতাম না। এবারের প্রতিযোগিতায় আমাদের স্কুল খুব ভালো ফল করেছে। আমার রকেট আর ডেটা সায়েন্সে খুব আগ্রহ। নাসা, স্পেস এক্স থেকে আমি কাজের অনুপ্রেরণা পেয়েছি।” মা জ্যোতি মণ্ডলের মুখে চওড়া হাসি। ছেলের পরিশ্রমের কথা বলছেন বারবার। তাঁর কথায়, ”এই কাজটার জন্য ও ভীষণ পরিশ্রম করেছে। আমি দেখেছি, আমেরিকার সঙ্গে আমাদের সময়ের ফারাকের কারণে ও অনেক সময় রাত আড়াইটে-তিনটে পর্যন্ত কাজ করেছে। তারপর আবার ৬টায় উঠে স্কুল গিয়েছে। ওর সাফল্যে এত ভালো লাগছে কী বলব!” গবেষণা কাজে খুদে বিজ্ঞানীর পথ আরও দীর্ঘ হোক, শুভেচ্ছা সকলের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.