সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়ছে ষোড়শী কন্যা। আর ৫৫ বছর বয়সে বাবা জেলা ক্রিকেটে অভিষেক ঘটিয়ে সাড়া ফেলে দিলেন। শিলিগুড়ির সুভাষপল্লির মানবেন্দ্র ঘোষকে ধন্যধন্য করছে উত্তরবঙ্গের ক্রিকেট মহল।
দীর্ঘদিন ধরেই ক্রিকেটে বাংলার রাজ্য দলের নিয়মিত সদস্য শিলিগুড়ির কিশোরী রিচা ঘোষ। এই মুহূর্তে ভারতীয় জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলে ঢোকার অন্যতম দাবিদার টপ-অর্ডারের এই আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান। আপাতত ওড়িশার কটকে ইন্ডিয়া ‘সি’ দলের হয়ে চ্যালেঞ্জার্স ট্রফিতে অনুশীলনে ব্যস্ত শিলিগুড়ির সুভাষপল্লির রিচা। ঠিক সেই সময় ৫৫ বছর বয়সে শিলিগুড়িতে প্রথম বিভাগীয় ক্রিকেট লিগে অভিষেক ঘটিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছেন রিচার বাবা মানবেন্দ্র ঘোষ। বুধবার প্রথম বিভাগীয় ক্রিকেট লিগে স্থানীয় নবোদয় সংঘের হয়ে মাঠে নেমে এক প্রকার নজির গড়েছেন বলা যায়। যদিও মাঠে নেমে ব্যাটে শূন্য এবং বল হাতেও দু’ওভার হাত ঘুরিয়ে কোনও উইকেট পাননি। দলও হেরেছে বিশ্রীভাবে। ফলে ক্রিকেটীয় পারফরম্যান্স বলার মত কিছু নয়। তবুও তাঁর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ক্রীড়ামহল।
ইতিমধ্যেই মানবেন্দ্রবাবুর মেয়ে রিচা শিলিগুড়িকে গর্বিত করেছে। র (Wriddhiman Saha) পর ফের জাতীয় দলে আরেকজন ক্রিকেটার হিসেবে তাঁকে খেলতে দেখা শুধু সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছেন দেশের ক্রিকেট বোদ্ধারাও। আশাবাদী শিলিগুড়িও। বর্ষীয়ান খেলোয়াড় সোমনাথ মিত্র জানান, হার জিত বা পারফরম্যান্সটা বড় কথা নয়। এই বয়সেও মানবেন্দ্রবাবু যেভাবে মাঠে নেমেছেন, সমস্ত রকম ‘ইগো’ এবং পিছুটান বাদ দিয়ে, তাতে ক্রিকেটের প্রতি তাঁর ভালোবাসাই প্রকাশ পাচ্ছে। সবারই উচিত তাঁর পদক্ষেপকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নেওয়া। শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সচিব অরূপরতন ঘোষও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন মানবেন্দ্রবাবুর এই পদক্ষেপে। তবে এই বয়সে মানবেন্দ্র নিজে মাঠে নামবেন তা ভাবতে পারেননি বলে জানান তিনি। সচিবের দাবি, “তাঁর উদ্যোগ অবশ্যই অনুকরণীয়।” অন্যদিকে যাঁকে নিয়ে এত আলোচনা তিনি অবশ্য নির্বিকার। সদাহাস্যময় মানবেন্দ্র পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, এই বয়সে মাঠে নেমে বড় কোনও কাজ করেছেন বলে মনে করেন না। তাঁর দাবি, ক্রিকেট ভালবাসেন। আগেও টুকটাক খেলেছেন। মাঝে বহু বছর কোনও প্রত্যক্ষ ক্রিকেটের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না। মেয়েকে নিয়েই মেতেছিলেন। মেয়ে এখন জেলা, রাজ্যের গণ্ডি পেরিয়ে জাতীয় একাডেমিতে রয়েছে। জাতীয় দলের সঙ্গে খেলছে। ফলে তিনি এখন অনেকটাই চাপমুক্ত।
মানবেন্দ্রবাবুর দাবি, “রিচা জাতীয় দলে সুযোগ পাবে কি না, তা ভবিষ্যতই বলবে। কিন্তু এখন সে যেমন নিজের লক্ষ্য বুঝতে পেরেছে তেমনিই তাঁকে গাইড করার মত বিশ্বমানের কোচেরা রয়েছেন। ফলে আমি এখন অনেকটাই ভারমুক্ত। তাই পুরনো ভালোবাসা কে আঁকড়ে ধরতে ফের ক্রিকেট মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” লিগের পরবর্তী ম্যাচগুলিও খেলবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। মেয়ে কি জানে তাঁর এবারে খেলার কথা। গর্বিত বাবা জানালেন, বলেছি। ও শুধুই হেসেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.