স্টাফ রিপোর্টার: ভবানীপুর বনাম ইস্টবেঙ্গল সিএবির প্রথম ডিভিশন লিগ ফাইনালে দ্বিতীয় দিন থেকেই উত্তেজনার রেশ ভালোরকম ছিল। ম্যাচের শেষ দিন ইডেনে যা হল, তা সিএবি ক্রিকেট ইতিহাসের রীতিমতো কলঙ্কের হয়ে থাকবে। মাঠে দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে কথাকাটি দিয়ে সূত্রপাত। তার রেশ ড্রেসিংরুম পর্যন্ত গড়ায়। তারপর পরিস্থিতি এমন পর্যায় পৌঁছয় যে হাতাহাতির মতো অবস্থা তৈরি হয়ে যায়। পরিস্থিতি এতটা জটিল হায়ে যায় যে, সিএবির তরফে পুলিশি পাহারা বসাতে হয়। তবে পুরো ঘটনার জন্য সিএবিকেই কাঠগড়ায় তুলতে হবে। লিগ ফাইনালে কলঙ্কের ছিটে লাগল সিএবি কর্তাদের অপদার্থতার জন্যই। অশান্তির ম্যাচে যুগ্মজয়ী ঘোষণা করে দেওয়া হয় ভবানীপুর এবং ইস্টবেঙ্গলকে।
প্রথম ইনিংসে ভবানীপুর বিশাল রান তোলার পর ইস্টবেঙ্গলের একটাই লক্ষ্য ছিল কোনওভাবে যুগ্মজয়ী হওয়া। নিয়ম অনুযায়ী দু’টো টিমের প্রথম ইনিংস যদি শেষ না হয়, তাহলে যুগ্মজয়ী ঘোষণা করা হয়। লাল-হলুদ ক্রিকেটাররা শুরু থেকে সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবারও তাই সেটাই ঘটে। শেষ দিন ইকুয়েশনটা ছিল এরকম-ভবানীপুরকে জিততে গেলে ছয় উইকেট নিতে হবে। ইস্টবেঙ্গলের জয়ের জন্য দরকার প্রায় পাঁচশোর কাছাকাছি রান। যা একপ্রকার অসম্ভব। তাই ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়রা বারবার চোটের ‘অজুহাতে’ সময় নষ্টের খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন। যা নতুন নয়। অনেক টিমই করেছে অতীতে ময়দানে। শেষমেশ ইস্টবেঙ্গলের আট উইকেট চলে গিয়েছিল। ভবানীপুরের ৬৪৩/৬ ডিক্লেয়ারের জবাবে ইস্টবেঙ্গল ২৪৩/৮। কিন্তু বৃষ্টির জন্য ম্যাচ বন্ধ হয়ে যায়। লিগে যুগ্মজয়ী হল ইস্টবেঙ্গল আর ভবানীপুর। অনেকের মতে, দোষটা ইস্টবেঙ্গলের নয়, দোষ আসলে সিএবির। কারণ নিয়মেই গলদ রয়েছে। ইস্টবেঙ্গল নিয়মের বাইরে গিয়ে কিছু করেনি। ওই পরিস্থিতিতে অন্য কোনও দল থাকলে হয়তো একই জিনিস করত।
সিএবি প্রশাসক থাকাকালীন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় উদ্যোগী হয়ে লিগ ফাইনাল গোলাপি বলে শুরু করেছিলেন। ভারতীয় ক্রিকেটে সেটাই গোলাপি বলে প্রথম দিন-রাতের ম্যাচ ছিল। যে ম্যাচে মহম্মদ শামি, ঋদ্ধিমান সাহার মতো তারকারা খেলেছিলেন। তারপর থেকে লিগ ফাইনাল দিন-রাতের হয়। কখনও সেই ফাইনাল ঘিরে এমন কলঙ্কিত হতে হয়নি সিএবিকে। না হলে কেউ কোনওদিন শুনেছেন, ম্যাচ চলাকালীন বদলে যাচ্ছে নিয়ম! পাড়ার খেলার এসব হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু সিএবির প্রথম ডিভিশন ফাইনালে? বাংলা ক্রিকেটমহলে বলাবলি চলছে, ম্যাচটা লাইভ দেখানো হয়েছে। দেশের সব প্রান্তের অনেকে দেখেছেন। বাংলা ক্রিকেটের পক্ষে কি এটা ভালো বিজ্ঞাপন হল? লিগের ফাইনালের মতো এরকম একটা ম্যাচে এক ঘণ্টায় তিন ওভার হচ্ছে, যা বাংলা ক্রিকেটের পক্ষে লজ্জার। খবর নিয়ে জানা গেল, পাঁচ ঘণ্টা ম্যাচ বন্ধ থাকার জন্য আম্পায়াররা ঠিক করেছিলেন, গত দু’দিন নির্ধারিত সময়ের পর এক ঘণ্টা করে বেশি খেলানো হবে। সেটা নিয়মে রয়েছে। হঠাৎ করে জানা যায়, সিএবি আম্পায়ারদের বলেছে এক ঘণ্টা নয়, দিনের খেলার মেয়াদ বাড়ানো যাবে আধ ঘণ্টা। ঠিক কী কারণে এক ঘণ্টার বদলে আধ ঘণ্টা করা হয়, কোনও স্পষ্ট জবাব পাওয়া যায়নি সিএবির তরফে।
কেউ কেউ এটাও বলাবলি করছেন, রনজি চলাকালীন কোনও দল যদি আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে খুশি না হয়ে টিম তুলে নেয়, তাহলে কী বোর্ড প্রেসিডেন্ট নিজে ছুটে আসবেন ওই টিমকে বোঝাতে? দু’দিন আগে ঠিক সেই কাজটাই করেছিলেন সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। কোনও টিম যদি খেলতে না চায়, তার জন্য স্পষ্ট নিয়ম রয়েছে। আম্পায়ার, ম্যাচ পর্যবেক্ষকরা রিপোর্ট জমা দেবেন। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেট সংস্থা সিদ্ধান্ত নেবে। সে’সব আর হল কোথায়। এটাও বলা হচ্ছে, সিএবি যদি কঠোর হত, তাহলে এত বিতর্ক এড়ানো যেত। গেল না শুধু সিএবি কর্তাদের ব্যর্থতার জন্য। বদলে, পাঁচদিন ধরে ইডেনে লিগ ফাইনালের নামে যা হল, শুধু একটা শব্দ দিয়েই তার বর্ণনা সম্ভব- প্রহসন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.