আলাপন সাহা, দুবাই: রাতের দুবাই স্টেডিয়ামকে বড় মায়াবী দেখাচ্ছিল। সাউন্ড সিস্টেমে অনর্গল বেজে চলেছে ‘বন্দেমাতরম’। গ্যালারি জুড়ে শুধুই তেরঙ্গা উড়ছে। কে বলবে, এটা দুবাই? পরে একটা ভিডিও ভাইরাল হয়। ‘বার দুবাই’ অঞ্চলের এক ভিডিও। জায়গার নাম ভিডিওয় দেখা না গেলে সেটা ‘বার দুবাই’ নাকি, ভারতের কোনও শহর, বোঝাই দুষ্কর হত।
রাস্তায় লোকজন নেমে পড়েছেন। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের ‘কাট আউট’ হাতে সবাই নাচছেন। উৎসব চলছে পুরো মরুদেশ জুড়ে। এমনিতে দুবাইয়ে প্রচুর ভারতীয় থাকেন। সেরকম একজনের সঙ্গে এদিন কথা হচ্ছিল। ভদ্রলোক দশ বছর ধরে দুবাইয়ের বাসিন্দা। তিনি বলছিলেন যে, দুবাইয়ে ভারতের খেলা খুব একটা হয় না। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ম্যাচ খেলেছিলেন। তা-ও প্রায় আড়াই বছর আগে। তাই যখনই মরুরাজ্যে টিম ইন্ডিয়ার খেলা থাকে, উৎসব শুরু হয়ে যায়।
ঠিক যেমন এখন চলছে। যে ক্রিকেট উৎসবের টানে ভারতের বিভিন্ন শহর থেকে লোকজনও আসতে শুরু করে দিয়েছেন। হায়দরাবাদ থেকে সমর্থকদের একটা গ্রুপ এসেছে। তাঁরা রোহিতদের ফাইনালে যাওয়া নিয়ে এতটাই নিশ্চিত ছিলেন যে, আগামী রবিবার পর্যন্ত যাবতীয় বুকিং আগাম সেরে রেখেছেন! শোনা গেল, টিম ফাইনালে ওঠার পর আরও সমর্থক আসছেন ভারত থেকে। এখানকার ভারতীয় রেস্তঁরাগুলোতে সন্ধের পর থেকে বেশ ভিড় শুরু হয়। দেখা গেল, সে আড্ডায় সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে বিরাটকে নিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ জেতানো ইনিংসের পর চর্চার তীব্রতা আরও বেড়ে গিয়েছে। স্বাভাবিক। প্রথমে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি। তারপর অস্ট্রেলিয়া সেমিফাইনালে ম্যাচ জেতানো ৮৪। আলোচনা বিরাট ছাড়া আর হবে কাকে নিয়ে?
ভাবলেও অবাক লাগে, মাস খানেক আগেও কী পরিমাণ সমালোচনায় বিদ্ধ হতে হচ্ছিল বিরাটকে! তাঁর অবসরের গণদাবিও উঠতে শুরু করে দিয়েছিল। অন্য সময় হলে বিরাট হয়তো রিঅ্যাক্ট করতেন। মেজাজ হারাতেন। কিন্তু এই বিরাট আগের চেয়ে আলাদা। অনেক বেশি শান্ত হয়ে গিয়েছেন তিনি এখন। ক্রিকেটীয় অধ্যবসায় আগের মতোই আছে। সঙ্গে আধ্যাত্মিক কিছু ব্যাপার কোহলির মধ্যে বিরাট বদল নিয়ে এসেছে। তিনি এখন সময় পেলেই মাঝেমধ্যে বৃন্দাবনে যান প্রেমানন্দ মহারাজের কাছে। ২০২৩-এ স্ত্রী অনুষ্কাকে নিয়ে প্রথমবার বিরাট গিয়েছিলেন প্রেমানন্দ মহারাজের কাছে। বিশ্বকাপে টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটার হয়েছিলেন তারপর। ভারতের ফাইনালে ওঠার ব্যাপারেও বিরাটের অবদান সুবিশাল ছিল। বর্ডার গাভাসকর ট্রফিতে ব্যর্থতার পরেও শোনা গেল, অনুষ্কাকে নিয়ে ফের বৃন্দাবন চলে গিয়েছিলেন বিরাট।
প্রেমানন্দ মহারাজ নাকি প্রাক্তন ভারত অধিনায়ককে বলেন, সবসময় ঈশ্বরের উপর ভরসা রাখতে। আর কঠোর পরিশ্রম করে যেতে। হাজার কঠিন পরিস্থিতিতেও ভরসা না বিরাট হারাতে। তাই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে রান না পেলেও বিরাট হতাশ হয়ে পড়েননি। বরং অনুশীলন আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এ দিন বোর্ডের ওয়েবসাইটে কোহলি বলেও দিয়েছেন, “আমি ক্রিকেট খেলতে অসম্ভব ভালোবাসি। ব্যাট করে যেতে ভালোবাসি। আর যত দিন আমার মধ্যে ব্যাট করার, ক্রিকেট খেলার ইচ্ছেটা জীবিত থাকবে, তত দিন অন্য কিছু নিয়ে ভাবার কোনও প্রয়োজন নেই।” এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেছেন, “কেরিয়ারের এই পর্যায়ে এসে আমি শুধু ক্রিকেটকে, ক্রিকেটের সমস্ত কিছুকে উপভোগ করতে চাই। তা সে দৌড়নো, পরিশ্রম করা, টিমকে জেতানো, যা-ই হোক না কেন।”
কী বুঝছেন? কেমন সাধক-সাধক শোনাচ্ছে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.