রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: বক্তা যিনি, তিনি রবিবারের আগে পর্যন্ত ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারতবর্ষের একমাত্র দশ উইকেট নেওয়া বোলার ছিলেন। যে মহাকীর্তি তিনি গড়েছিলেন ছিয়াশির বার্মিংহাম টেস্টে। বিগত উনচল্লিশ বছর ধরে যা অক্ষত থাকার পর রোববার ভেঙে গেল। ভাঙলেন আকাশ দীপ। এবং সোমবার নয়াদিল্লিতে সেই চেতন শর্মার সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মনে হল না, আকাশ-আবেগ থেকে সম্পূর্ণ বেরিয়ে আসতে পেরেছেন বলে। ‘সংবাদ প্রতিদিন’-কে দেওয়া ফোন সাক্ষাৎকারে চেতন যা বললেন, হুবহু তুলে দেওয়া হল…।
‘… আকাশ দীপ দশ উইকেট নেওয়ার সময় আমি কমেন্ট্রি করছিলাম। দ্বিতীয় ইনিংসে ও পাঁচ উইকেট নিয়ে ফেলার পর ভেতরে ভেতরে একটা আলাদা উত্তেজনা কাজ করছিল। দেখুন, ছিয়াশি সালের পর ইংল্যান্ডের মাটিতে আমার পরে আর কেউ কখনও টেস্টে দশ উইকেট নিতে পারেনি। বারবার মনে হচ্ছিল, আকাশকে যেন এত কাছে এসেও সেই মহাকীর্তি অধরা রেখে ফিরে না যেতে হয়। এ সমস্ত ভাবছি যখন, হঠাৎ আকাশের বলে সিরাজ একটা ক্যাচ ফেলে দিল। মনে হল, শায়েদ ইসকা কিসমত মে নহি লগ রহা হ্যায় আজ। খারাপও লাগছিল কিছুটা। তবে কিছুক্ষণ পরেই ক্যাচ তুলল ব্রাইডন কার্স। সেই ক্যাচ ধরতে ভুল করেনি শুভমান। এবং আকাশেরও এক টেস্টে
দশ উইকেট হয়ে গেল!
দ-শ উইকেট, ভাবলেও কেমন শিরশির করে, তাই না? কী জানেন, আমরা যারা বোলার, আমাদের সর্বপ্রথম টার্গেট থাকে, টেস্টে পাঁচ উইকেট নেওয়ার। পাঁচ হয়ে গেলে আমরা তার পর দশ উইকেট নেওয়ার পিছনে ছুটি। আমার মতে, প্রতিটা আন্তর্জাতিক বোলারের নামের পাশে অন্তত একটা করে দশ উইকেটের কীর্তি থাকা উচিত। দেখুন, টেস্ট ক্রিকেটে যদি আপনি সেঞ্চুরি করেন, দশ উইকেট নেন, লোকে আপনাকে বহু বছর মনে রেখে দেবে। আমরা, ক্রিকেটাররা তো দেশের জন্যই খেলি। কার না ইচ্ছে হয়, দেশের জার্সিতে এমন গর্বের মুহূর্ত সৃষ্টি করতে।
এজবাস্টনে আকাশ যা বোলিং করেছে, এক কথায় ব্রিলিয়ান্ট। উনচল্লিশ বছর পর আমার রেকর্ড কেউ ছুঁল। বলা ভালো, টপকে গেল। মাঝের এত বছরে কোনও ভারতীয় বোলার ইংল্যান্ডের মাটিতে দশ উইকেট নিতে পারেনি। ওয়ান অফ দ্য গ্রেটেস্ট অ্যাচিভমেন্ট। ভারতীয় হিসেবে আকাশের জন্য আমরা গর্বিত। আশ্চর্য লাগতে পারে। কিন্তু ছিয়াশিতে আমার ইংল্যান্ডে দশ উইকেটের সঙ্গে আকাশের এবার নেওয়া দশ উইকেটের মধ্যে মিল কিন্তু প্রচুর। প্রথমত, ছিয়াশিতেও টেস্ট ম্যাচটা বার্মিংহামেই ছিল। এবারও তাই। ছিয়াশির টেস্ট শুরু হয়েছিল ৩ জুলাই। এবার হল ২ জুলাই। আকশের মতো আমিও প্রথম ইনিংসে চার উইকেট নিয়েছিলাম আর দ্বিতীয় ইনিংসে ছয়। আকাশ ১০ উইকেট নিয়েছে ১৮৭ রান দিয়ে। আমি নিয়েছিলাম ১৮৮ রানে। আর আকাশের মতো আমিও বাংলারই প্লেয়ার ছিলাম! একমাত্র তফাত হল, এবার এজবাস্টনে ভারত টেস্ট জিতেছে। আর আমরা সেই টেস্ট ড্র করেছিলাম। এমনিই সিরিজ তখন ২-০ জিতছিলাম আমরা।
গতকাল থেকে দেখছি, অনেকেই আকাশের বোলিং দেখে বলছেন যে, পরের মহম্মদ শামি এসে গিয়েছে। আমারও মনে হয়, আকাশ পারবে ভবিষ্যতের শামি হতে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো পারফর্ম করতে গেলে একজন পেসারের যা যা গুণ প্রয়োজন, সমস্ত রয়েছে আকাশের। ওর মধ্যে আগ্রাসন রয়েছে। বলের গতি ভালো। গতকাল একমাত্র আকাশকেই দেখলাম, বল দু’দিকে মুভ করাচ্ছে। যা বুঝছি লর্ডসে তৃতীয় টেস্টে আমাদের বোলিং শক্তি আরও বেশি ভয়ানক হবে। কারণ, জশপ্রীত বুমরাহ চলে আসছে। বুমরাহ-আকাশ-সিরাজ, ভারতের পেস এয়ী ঠিক কত ভয়ঙ্কর হবে, ভাবতে পারছেন? আমরা সবাই জানি যে, বুমরার পক্ষে পাঁচটা টেস্ট খেলা সম্ভব হবে না। তিনটের বেশি ও খেলবে না। ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের কারণে। তাতে অসুবিধে নেই। এজবাস্টন বুঝিয়ে দিয়েছে যে, বুমরাহ ছাড়াও ভারতীয় বোলিংয়ের ক্ষমতা আছে বিপক্ষের দশ উইকেট নেওয়ার। খেয়াল করবেন, এজবাস্টনে পড়া ইংল্যান্ডের কুড়িটা উইকেটের মধ্যে সতেরোটাই কিন্তু নিয়েছে পেসাররা। হুইচ ইজ আ গুড সাইন!
শেষে সিনিয়র হিসেবে আকাশকে একটা বার্তা দিতে চাই। এ ভাবেই চালিয়ে যাও। আমি নিশ্চিত তুমি আরও টেস্টে দশ উইকেট নেবে। সিরিজে আরও তিনটে টেস্ট বাকি। চেষ্টা করো, পনেরো-কুড়িটা উইকেট নিতে। সম্ভব হলে পঁচিশটা। আর হ্যাঁ, শেষ তিন টেস্টে আকাশ যদি গোটা কুড়ি উইকেট নিতে পারে, এখনই বলে রাখি যে আমরা টেস্ট সিরিজ জিতছি…।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.