রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: আকাশ দীপের (Akash Deep) হাত ধরে এজবাস্টনে ভারতের ঐতিহাসিক জয়ের পর উৎসবের জল-রাশিতে রীতিমতো ছেয়ে গিয়েছে আসমুদ্রহিমাচল। স্বাভাবিক, অতি স্বাভাবিক। যে বার্মিংহামে আজ পর্যন্ত কখনও টেস্ট জিততে পারেনি ভারত, সেই অভিশাপের এজবাস্টনে প্রথম টেস্ট জয়। তার উপর আকাশ দীপের টেস্টের দু’ইনিংস মিলিয়ে দশ-দশটা উইকেট! বাংলাও অতিশয় উৎফুল্ল। যার জোড়া কারণ। প্রথম, আকাশ বাংলার ক্রিকেটার। তাঁর হাত ধরেই এজবাস্টনে ইতিহাস সৃষ্টি হল। দ্বিতীয়ত, এজবাস্টনের আকাশ কোথাও যেন রবিবার জিতিয়ে দিলেন সিএবি-র ‘ভিশন ২০২০’ প্রোজেক্টকেও (বর্তমানে যা ভিশন ২০২৫)। যার সূচনা হয়েছিল ভারতবর্ষেরই এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ অধিনায়কের হাত ধরে। যাঁর নাম– সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)!
আসলে সৌরভ বহু আগে বুঝেছিলেন যে, প্রতিভা তুলে নিয়ে আসতে গেলে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প প্রয়োজন। রাতারাতি ‘তারকা’ তৈরি করা যাবে না। সেই ভাবনা থেকেই শুরু ‘ভিশন ২০২০’। প্রথমে পেস বোলিং কোচ হিসেবে ওয়াকার ইউনিসকে নিয়ে এসেছিলেন সৌরভ। স্পিন বিভাগে নিয়ে মুথাইয়া মুরলিধরন। ব্যাটিংয়ের দায়ভার দেন ভিভিএস লক্ষ্মণকে। ওয়াকার চলে যাওয়ার পর সেই জায়গায় আসেন টি এ শেখর। সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় বাংলার রণদেব বসুদের মতো প্রাক্তন ক্রিকেটারকে। যাঁদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে থাকতেন আকাশরা। অবশ্য বঙ্গ পেসারের উত্থানের নেপথ্য অনেকের অবদান রয়েছে। আকাশ তখন সদ্য বাংলা ক্রিকেটে পা রেখেছেন। ইউনাইটেডের হয়ে খেলছেন। মনোজ তিওয়ারি ক্লাব ম্যাচে আকাশকে দেখার পরই ফোন করেন রণদেবকে। বলেন, ছেলেটার উপর নজর রাখতে। মনোজের কথা শুনে রণদেবও ক্লাব ম্যাচে আকাশকে দেখতে চলে যান। সঙ্গে জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। প্রথম দেখার পরই রণদেব, জয়দীপরা বুঝে যান এই ছেলের মধ্যে দেশের হয়ে খেলা মশলা রয়েছে।
তবে একা রণদেব নন। সৌরাশিস লাহিড়ী, লক্ষ্মীরতন শুক্লাদের অবদানও আকাশের ক্রিকেট জীবনে অপরিসীম। বাংলার অনূর্ধ্ব ২৩ টিমের কোচ থাকার সময় সৌরাশিস প্রতিটা মুহূর্তে আগলে রেখেছিলেন আকাশকে। মাঝে চোট-সমস্যায় ভুগছিলেন আকাশ। কিন্তু সৌরাশিস টিমের থেকে কখনও দূরে রাখেননি তাঁকে। বাংলা কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লা আবার আকাশকে বুঝিয়েছিলেন, পাটা উইকেটে কোন লাইন-লেংথে বোলিং করলে সাফল্য পাওয়া যাবে। যদিও লক্ষ্মীকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বললেন, ‘‘আকাশের ক্রিকেটজীবনে সবচেয়ে বড় অবদান সৌরাশিসের।’’
আর সৌরভ? ‘ভিশন প্রোজেক্ট’ শুরু করে শুধু আকাশ-মুকেশদের তুলে আনা নয়। তিনি এজবাস্টন টেস্ট চলাকালীন আকাশকে কিছু পরামর্শও দেন। সাফল্যের মন্ত্র দিয়ে দেন। প্রথম ইনিংসে আকাশ চার উইকেট নেওয়ার পর সৌরভ এক বার্তায় আকাশকে বলেন, ‘‘দারুণ বোলিং করেছিস। তোকে এবার পাঁচ উইকেট নিতে হবে। শুধু সামনে বল করবি আর সুইং করাবি। তা হলেই হবে।’’ এজবাস্টন টেস্ট দেখতে গিয়েছিলেন সৌরভ। রবিবার লন্ডন থেকে ফ্লাইট ধরার সময় ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর তরফে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘ভিশন প্রোজেক্ট’ নিয়ে। যা শুরু করেছিলেন তিনি। যা ভারতীয় ক্রিকেটকে সরবরাহ করেছে আকাশের মতো প্রতিভাকে। শুনে সৌরভ বললেন, “আকাশ-মুকেশ দু’জনের কথাই বলতে হবে। দু’জনেই ভিশন ২০২০ থেকে উঠে এসেছে। আসলে এভাবেই ক্রিকেটারদের তুলে নিয়ে আসতে হয়। ঠিক এই লক্ষ্য নিয়েই আমরা ভিশন প্রোজেক্ট শুরু করেছিলাম। যাতে ক্রিকেটারদের সঠিক ট্রেনিং করানো যায়। আর সবসময় সাপোর্ট করা যায়।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘এজবাস্টনে ভারতীয় দল দুর্দান্ত খেলেছে। প্রথমে ব্যাটিং। তারপর বোলারদের এরকম পারফরম্যান্স। বিশেষ করে আকাশ আর সিরাজ। দু’জনেই ব্রিলিয়ান্ট বোলিং করল। ইংল্যান্ডের থেকে ভারতীয় বোলিং অ্যাটাককে অনেক বেশি ভয়ংকর দেখিয়েছে। মনে রাখতে হবে ভারত এরকম পারফর্ম করল বুমরাহকে ছাড়া। অধিনায়ক হিসেবে গিলের কাছে এর থেকে ভালো টেস্ট জয় আর কিছু হয় না। ”
সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধয়ের মুখেও সেই ভিশন প্রোজেক্টের কথা। বলছিলেন, “এটা সিএবির প্রাক্তন সচিব আর প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রোজেক্ট। ঠিক এই কারণের জন্যই অ্যাসোসিয়েশনের পদে ক্রিকেটার দরকার। কারণ ক্রিকেটারদের নির্দিষ্ট একটা ভিশন থাকে। যেটা তারা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আকাশ, মুকেশ–সবাই ভিশন থেকে উঠে এসেছে। সৌরভ যেটা করেছিল, সেটা আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। অনেক প্লেয়ার উঠে আসছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.