প্রথম ইনিংস
ভারত: ৫৮৭ (শুভমান গিল ২৬৯, জাদেজা ৮৯. যশস্বী ৮৭, বশির ১৬৭/৩)
ইংল্যান্ড: ৪০৭ (জেমি স্মিথ ১৮৪, হ্যারি ব্রুক ১৫৮, সিরাজ ৭০/৬, আকাশ দীপ ৮৮/৪)
দ্বিতীয় ইনিংস
ভারত: ৪২৭/৬ ডিক্লেয়ার (শুভমান গিল ১৬১, জাদেজা ৬৯, পন্থ ৬৫, টং ৯৩/২)
ইংল্যান্ড: ২৭১/১০ (জেমি স্মিথ ৮৮, আকাশ দীপ ৯৯/৬, সুন্দর ২৮/১)
ভারত ম্যাচ জেতে ৩৩৬ রানে।
সিরিজের ফলাফল আপাতত ১-১।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এজবাস্টনে নতুন ইতিহাস ‘নতুন ভারতে’র। শুভমান গিলের দল প্রমাণ করল ভারতের জয়যাত্রা চলছে, চলবে। মহাতারকারা অবসরে যাক, প্রথম টেস্টে হারের জ্বালা থাক, ‘সেরা’ পেসার বিশ্রাম নিক, একরাশ সমালোচনাও জুড়ুক, সব কিছুর উত্তর আসবে ফ্রন্ট ফুটে। ব্যাটের ঠিক মাঝখান দিয়ে বা বিপক্ষের মিডল স্টাম্প উড়িয়ে। ‘এজবাস্টনে ভারত কোনও টেস্ট জেতে না’, এই বাক্যটার পাশে এখন এক মস্ত কাটা চিহ্ন। বোলিং-ব্যাটিংয়ে ইংরেজদের শাসন করে দ্বিতীয় টেস্ট ৩৩৬ রানে জিতল ভারত। গিলের ব্যাটিং বিক্রমের পর, সিরাজ-আকাশ দীপদের দাপটে এই প্রথম এজবাস্টনে টেস্ট জিতল টিম ইন্ডিয়া। সিরিজ এখন ১-১। আকাশ দীপের ৬ উইকেটের আলোয় প্রথম জয় পেলেন অধিনায়ক শুভমান গিল।
প্রথম ইনিংসে ‘শুভমান শো’ দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছেন তিনি। একের পর এক রেকর্ড গড়ে ২৬৯ রান করেন তিনি। যোগ্য সঙ্গ দেন যশস্বী জয়সওয়াল (৮৭) ও রবীন্দ্র জাদেজা (৮৯)। ইংল্যান্ডের সামনে ৫৮৭ রানের পাহাড় খাড়া করে ভারত। সেটা যে দুর্লঙ্ঘ্য হয়ে উঠবে, তা দ্বিতীয় দিনের শেষেই বোঝা গিয়েছিল। দ্বিতীয় দিনের শেষে ইংল্যান্ডের রান ছিল ৩ উইকেটে ৭৭। শুরুতেই ইংরেজদের ঝটকা দেন মহম্মদ সিরাজ। ২২তম ওভারে তিনি পরপর ফেরান জো রুট (২২) এবং বেন স্টোকসকে (০)। তবে এরপরেই ম্যাচের পাশা যেন পালটে যায়। একসময় ৮৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। সেখান থেকে ৩০৩ রানের পার্টনারশিপ গড়েন জেমি স্মিথ (১৮৪) ও হ্যারি ব্রুক (১৫৮)। বাজবলের মেজাজে দুজনে রীতিমতো তাণ্ডব চালান ভারতীয় বোলারদের উপর।
সেই জুটি ভেঙে ভারতকে ম্যাচে ফেরান বাংলার আকাশ দীপ (৮৮/৪)। বাকিটা ‘ডিএসপি’ সিরাজের (৭০/৬) হাতে বন্দি হল ইংরেজরা। শেষ ৫ উইকেট পড়ল ২০ রানে। ইংল্যান্ডের ইনিংস থামে ৪০৭ রানে। লিড ছিল ১৮০ রানের। তৃতীয় দিনের শেষে ভারতের রান ছিল ১ উইকেট হারিয়ে ৬৪। এগিয়েছিল ২৪৪ রানে। চতুর্থ দিনে ফের ইংরেজদের নাস্তানাবুদ করে ছাড়েন শুভমান। দ্বিতীয় ইনিংসে করলেন ১৬১। সিরিজ শুরুর আগে অনেকেই তাঁর অধিনায়কের টুপি পরা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। নিঃসন্দেহে তাঁদের জন্য এর চেয়ে যোগ্য জবাব হয় না। কেএল রাহুল (৫৫), ঋষভ পন্থ (৬৫), রবীন্দ্র জাদেজারা (৬৯) যোগ্য সঙ্গ দেন। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেট হারিয়ে ৪২৭ রানে ডিক্লেয়ার করে দেয় ভারত। ইংল্যান্ডের জন্য লক্ষ্য ছিল ৬০৮।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে চতুর্থ দিনের শেষে ৭২ রানে ৩ উইকেট খুইয়ে পরিত্রাহি অবস্থা ছিল ইংরেজদের। আকাশ দীপের সুইংয়ে পরাস্ত হন জো রুট, বেন ডাকেটরা। শেষদিনে ইংল্যান্ডের পরিত্রাতা হয়ে উঠতে পারত বৃষ্টি। সকাল থেকে এজবাস্টনের আকাশের মুখ ভার। কখনও ঝেঁপে, কখনও ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েই চলেছে। তাহলে কি তীরে এসে তরী ডুববে? প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঐতিহাসিক জয় হাতছাড়া হবে? কিন্তু ওই যে, ভাগ্যও সাহসীদের সঙ্গ দেয়। বৃষ্টি থামল, রোদ উঠল। প্রায় দেড় ঘণ্টার বিলম্বে শুরু হয় ম্যাচ। ইংল্যান্ডের চতুর্থ উইকেট পড়ে ৮০ রানে। সৌজন্যে বাংলার আকাশ দীপ। তাঁর ইনসুইং বুঝতে না পেরে ব্যক্তিগত ২৪ রানে সাজঘরের পথ দেখেন অলি পোপ। এরপর আকাশের বিষাক্ত ইনকাটারের কোনও উত্তর না পেয়ে লেগবিফোর হন হ্যারি ব্রুক।
প্রথম ইনিংসের মতো ইংল্যান্ড তখন ৮৩/৫। সেখান থেকে জেমি স্মিথকে সঙ্গে নিয়ে কিছুটা প্রতিরোধ করেন অধিনায়ক বেন স্টোকস। ৩৩ রানের মাথায় তাঁকে আউট করেন ওয়াশিংটন সুন্দর। এবার আসরে নামলেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। প্রথম ইনিংসে বাজে বোলিংয়ের জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন। এদিনও যে সেরা ছন্দে ছিলেন তা নয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্রিস ওকসের উইকেটটা তুলে নেন। এরপর আকাশ দীপের বলে জেমি স্মিথ (৮৮) আউট হতেই ভারতের জয় কার্যত নিশ্চিত হয়ে যায়। কেরিয়ারে প্রথমবার ‘পাঞ্জা’ অর্থাৎ পাঁচ উইকেট পান আকাশ দীপ। শেষ উইকেটও পান তিনি (৯৯/৬)। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের ইনিংস থামে ২৭১ রানে। ভারত জেতে ৩৩৬ রানে। গাব্বা হোক বা এজবাস্টন, প্রতিপক্ষের সব দুর্গেই অপ্রতিরোধ্য ভারত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.