অভ্র বরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: দুর্গাপুজো এলেই মনটা খারাপ হয়ে যায় ঘোষ পরিবারের। একদিকে মায়ের ঘরে ফেরার আনন্দ। কিন্তু সেই সময় ঘরের মেয়েটাকে ঘরে পাওয়া যায় না। ছোটবেলায় পাড়ার পুজো মণ্ডপ মাতিয়ে রাখত সে। বাবা-মা তো ছিলই, সেই সঙ্গে বন্ধুদের সঙ্গেও শিলিগুড়ির অনেক পুজোমণ্ডপ টইটই করে ঘুরে বেড়াত। সেদিনের সেই ছোট্ট রিচা আজ দেশের আশাভরসা। প্রথমবার মহিলাদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিততে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন ব্যাটার-উইকেটকিপার রিচা ঘোষ। তাই হোক, মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা তাঁর মা-বাবার।
৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু মহিলাদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। তার আগে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজ খেলছে ওমেন্স ইন ব্লু। সেখানে ভালো ফর্মে আছেন রিচা। কিন্তু আসল পরীক্ষা হবে বিশ্বকাপে। ছোটবেলা থেকে তো এই দিনটার জন্যই স্বপ্ন দেখে এসেছেন রিচা। বাবা মানবেন্দ্র ঘোষের তত্ত্বাবধানে কোচিং নেওয়া শুরু। পুজো এলেও রিচা কিন্তু অনুশীলনে ঘাটতি রাখতেন না। বরং ওই ১০ দিনের ছুটি একটু বিরক্তিকর! ফিটনেস ধরে রাখতে হালকা অনুশীলন বা শরীরচর্চাই ছিল ভরসা।
তবে মায়ের সঙ্গে অষ্টমীতে অঞ্জলিও দিতেন। পুজোর দিনগুলো পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতেন। আর সুযোগ পেলেই বন্ধুদের নিয়েও ঘুরতে যেতেন। যদিও ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর সেসব এখন অতীত। অনেক সময় বাড়ি আসার সুযোগই পায় না রিচা।
তাই দুর্গাপুজো নিয়ে কিছুটা মনখারাপ থাকে ঘোষ পরিবারের। আবার একটা গর্বও কাজ করে। মেয়ে এখন দেশের সেবা করে। দেশের স্বার্থে তাঁরা সকলে সবটাই মেনে নিয়েছেন। পুজোর দিনগুলো এক মা আর এক মায়ের কাছে প্রার্থনা করে, মেয়ে যাতে আরও সফল হয়। দেশকে জেতাতে যেন তার অবদান থাকে।
রিচার মা স্বপ্না ঘোষ বলছেন, “মায়ের কাছে একটাই প্রার্থনা, ও যেন আরও এগিয়ে যায়। আরও সফল হয়। ওর হাত ধরে অনেক ট্রফি জিতুক আমাদের দেশ। তাই তো পুজোয় মন খারাপ হলেও মানিয়ে নিই আমরা।” বাবা মানবেন্দ্র ঘোষের কথায়, “দেশ আগে, তারপর সব কিছু। প্রথম দিকে মন খারাপ হত। এখন আমরাও বুঝতে শিখেছি। এই তো এখন বিশ্বকাপ আছে, আমরা সকলে মিলে মায়ের কাছে প্রার্থনা করছি, যাতে ভারত এবার বিশ্বকাপ জিতে যায়। সেখানে আমাদের মেয়ে রিচার অবদান থাকুক। তাহলেই আমরা খুশি। ও ছোট থেকেই নিষ্ঠার সঙ্গে ক্রিকেট খেলেছে। পুজোয় একটানা ছুটি কাটাত না। অনুশীলন করেই পুজো মণ্ডপ দেখতে বেরোতাম আমরা। একসঙ্গেই কত পূজো দেখেছি। ও আবার পাড়ায়ও ঘুরত। এখন প্রায় ৩ বছর হয়ে গেল ও আর পুজোর সময় আসে না। আমরা জানি ও দেশের জন্য খেলছে এটা অনেক বড় গর্বের। সবাই সেই সুযোগ পায় না। তাই ওর ভালো খেলার জন্যই মায়ের কাছে প্রার্থনা করি।”
প্রার্থনা দেশবাসীরও। ভারত বিশ্বকাপ জিতুক। দশভুজা হয়ে দেশকে জগৎসেরা করে তুলুক এগারোজন নারী। রিচা তাঁদের মধ্যে একজন। অনেক আত্মত্যাগের অধ্যায় পার করে স্বপ্নপূরণের মুখে দাঁড়িয়ে ২১ বছর বয়সি ক্রিকেটার। মায়ের কাছে মেয়ের জন্য সেই স্বপ্নপূরণের প্রার্থনা গোটা পরিবারের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.