ছবি এক্স
রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: পৃথিবীর খেলাধুলোর নিয়ম বলে, এক খেলার পরিপূরক কখনও আর একটা খেলা হয় না। প্রত্যেক খেলার মোহ আলাদা। আকর্ষণ আলাদা। মায়া আলাদা। ক্রিকেট আর ফুটবল কখনও একই রাজসিংহাসন পারে ভাগাভাগি করে নিতে? পারে না। মুশকিল হল, এ সমস্ত রোম্যান্স-আবেগের সীমানা শেষে আর একটা কর্কশ দুনিয়া থাকে। যে দুনিয়ায় এক এবং একমাত্র চলে চার্লস ডারউইনের দর্শন–‘সার্ভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট’! যার নিগূঢ় অর্থ, পরিবর্তনের সঙ্গে লড়ে বাঁচবে যে, টিকে থাকবে সে!
কে জানত, ইটালির খেলাধুলোর মানচিত্রে তা অধুনা এত প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে? কে জানত, এক খেলার পতনকে ‘আস্থার শালগ্রামশিলা’ করে জাগরণের পথ খুঁজবে আর এক খেলা? তাই যে চলছে কলোসিয়ামের দেশে! যে দেশে ফুটবলের ক্রমশ পতনকে সুযোগের দর্পণে দেখে উত্থানের পথ খুঁজছে ক্রিকেট!
কী, বিশ্বাস হচ্ছে না? ঠিক আছে, হ্যারি মানেন্তির কথা শুনুন। দিন কয়েক আগে ইটালির যে টিম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ছাড়পত্র জোগাড় করে ফেলল, সেই টিমের হয়ে খেলেছেন মানেন্তি। ইতিহাসের সাক্ষী থেকেছেন। এবং যিনি পরিষ্কার বলছেন, ইটালি ফুটবলের সম্ভাব্য সূর্যাস্তকেই ‘অস্ত্র’ করতে হবে ক্রিকেটীয় সূর্যোদয়ের!
ভাবার কোনও কারণ নেই যে, ইটালিতে ফুটবল অস্তাচলে চলে গিয়েছে। যতই তারা ক্রিকেটে আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করে ফেলুক, ফুটবল আজও সে দেশের শ্রেষ্ঠ খেলা। কিন্তু এটাও ঠিক যে, ফুটবল-পতনের ঘূর্ণিপাকে কোথাও গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে ইটালি। বিগত আট বছরে পরপর দু’বার ফুটবল বিশ্বকাপের টিকিট জোটাতে পারেনি তারা! রাশিয়ার পর কাতার বিশ্বকাপ। দিকপাল ফুটবলারদের সংখ্যাও তো কমছে দিন-দিন। হাতেগোনা কতিপয় নাম। ডোনারুম্মা। কালাফিউরি। ডি’মার্কো। কিয়েসা। জর্জিনহো। বাস্তোনি। ইতালি ফুটবল নামক বর্তমান ‘প্রেতপুরী’ দেখে বিশ্বাসই করা যায় না যে, একসময় সে দেশের হয়ে খেলে গিয়েছেন বাজ্জিও-রোসি-মালদিনি-নেস্তা-দেল পিয়েরো-পির্লোরা!
“ইটালি এখনও ফুটবল পাগল দেশ। কিন্তু গত কয়েকটা বিশ্বকাপে আমাদের টিম কোয়ালিফাই করতে পারেনি। তাই এই সুযোগটা আমাদের নিতে হবে। দেখতে হবে, এই শূন্যতাকে কাজে লাগিয়ে যদি ক্রিকেটের প্রসার ঘটানো যায়,” রোম থেকে ফোনে হাসতে হাসতে ‘সংবাদ প্রতিদিন’-কে বলছিলেন হ্যারি মানেন্তি। “আমরা যে বিশ্বকাপ কোয়ালিফাই করার পর দেশে দারুণ ক্রিকেট-জাগরণ ঘটেনি। কিন্তু আমরা যদি বিশ্বকাপে ভালো করতে পারি, নিশ্চয়ই আগ্রহ বাড়বে,” যোগ করেন ইটালি অলরাউন্ডার।
যা শত ভাগ ঠিক। ইটালি ক্রিকেট বিশ্বকাপ কোয়ালিফাই করে ফেললে কী হবে, এখনও সে দেশে টার্ফ নেই। খেলা হয় ম্যাটের উইকেটে। একখানা ক্রিকেট স্টেডিয়ামও নেই। “একদিন সব হবে। আগামী ছ’মাসের মধ্যে টার্ফ বসিয়ে দেবে ফেডারেশন। বিশ্বকাপের আগে,” বলতে থাকেন হ্যারি। যিনি আবার চুটিয়ে খেলেন অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশে। শোনা গেল, ইটালিতে ১১০টা ক্লাব রয়েছে। যেখানে ক্রিকেট খেলা হয়। ইটালি ক্রিকেট ফেডারেশন ঠিক করে ফেলেছে, আগামী দশ থেকে কুড়ি বছরের মধ্যে খেলাটার বিস্তর প্রসার ঘটানো হবে। “বলছি তো, একটু সময় দিন। একদিন ইডেন বা সিডনির মতো আমাদেরও ক্রিকেট মাঠ হবে।” কিন্তু তার জন্য ভূমিপুত্রদের আগ্রহী করে তুলতে হবে তো! বর্তমানে ইটালির ক্রিকেট দলে যাঁরা খেলেন, তাঁরা অনেকেই অন্যান্য দেশ থেকে আসা। হ্যারি নিজেই অস্ট্রেলিয়া-জাত। টমাস ড্রাকা তাই। টিমের অধিনায়ক যিনি, সেই জো বার্নস তো অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্ট খেলেছেন। “আমাদের মতো অনেকেই মাইগ্রেট করে এসেছে অস্ট্রেলিয়া থেকে। তবে এখানে কিন্তু স্কুল প্রোগ্রাম শুরু হয়ে গিয়েছে ক্রিকেট নিয়ে। জানেন, ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে আসব ভেবে টিমের অনেকেই উত্তেজিত। আমাদের অনেকেই পঞ্চাশ হাজার দর্শকের সামনে কখনও খেলেনি,” ব্যাখ্যা দেন ইটালি ক্রিকেটার।
বেশ বোঝা যায়, ভারত নামক ক্রিকেট-বুভুক্ষু দেশে বিশ্বকাপ উপলক্ষে খেলতে আসার তাড়নাই ইটালি ক্রিকেট টিমের নতুন জ্বালানি। তবে দেশটার নাম যখন ইটালি, খেলাটা ক্রিকেট হলেও তার সঙ্গে ফুটবলের যোগসূত্র না থেকে পারে? তা, আছেন একজন অনেক দিন ধরে, যিনি দুনিয়া কাঁপানো ফুটবলার হলেও, আর একদিকে প্রবল ক্রিকেট উৎসাহী। মানেন্তি বলছিলেন, “আমরা প্ল্যান করছি, বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে ওঁর সঙ্গে দেখা করার। ওঁর পেপ টক পেতে কে না চাইবে?”
সেই ফুটবল কিংবদন্তির নাম? সহজ তো– ক্রিশ্চিয়ান ভিয়েরি!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.