Advertisement
Advertisement
ODI World Cup

প্রতিভার খোঁজ দিয়েছিলেন প্রাক্তন নাইট কোচ চন্দ্রকান্ত, গৌড়ের উত্থানের নেপথ্যে ঝুলনও

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে পাক-ব্যাটিংয়ের এক-একটা ‘ঘাঁটি’ চূর্ণবিচূর্ণ করে ছেড়েছে ক্রান্তির গনগনে বোলিং।

Jhulan Goswami is happy for Indian star Kranti Goud's performance in ODI World Cup

ফাইল ছবি

Published by: Sulaya Singha
  • Posted:October 7, 2025 2:40 pm
  • Updated:October 7, 2025 3:46 pm   

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ‌্যায়: ক্রান্তি গৌড়কে চট করে দেখলে ক্রিকেটার বলে বিশ্বাসই হবে না। পুরোদস্তুর ছিমছাম, যেন গড়পড়তা সাধারণ, আটপৌড়ে যাপনে চির-অভ‌্যস্ত। কিন্তু ক্রান্তি গৌড় কী, ঠিক কোন ধাতুতে মধ‌্যপ্রদেশ-কন‌্যা তৈরি, রোববারের পর থেকে আর কেউ জানুক না জানুক, ফতিমা সানার পাকিস্তান জানে! তারা জানে, কতটা ছাইচাপা আগুন ছেয়ে রয়েছে ভারতীয় পেসারের অবয়বকে!

Advertisement

কলম্বোয় মহিলা ওয়ানডে বিশ্বকাপের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে পাক-ব‌্যাটিংয়ের এক-একটা ‘ঘাঁটি’ যে চূর্ণবিচূর্ণ করে ছেড়েছে ক্রান্তির গনগনে বোলিং। তাঁর নিখুঁত লাইন-লেংথ, বলের ‘অফ দ‌্য উইকেট মুভমেন্টের’ বিন্দুমাত্র ঠিক-ঠিকানা পায়নি পাকিস্তান। মূলত, পাওয়ার প্লে-তে তিনি আর রেণুকা সিং ঠাকুর মিলে পাক ব‌্যাটিংয়ের ‘শ্বাসরোধ’ করে ছেড়ে দিয়েছিলেন। লাগাতার, পরের পর ওভারে কৃপণ বোলিংয়ে। ক্রান্তির বোলিং হিসেব শুনবেন? ১০-০-২০-৩! আর কার কার উইকেট নিয়েছেন ক্রান্তি? শাদাফ সামাস। নাতালিয়া পারভেজ। আলিয়া রিয়াজের। পাকিস্তান ব‌্যাটারদের মধ‌্যে যেটুকু যা রান করেছেন যিনি, সেই শির্দা আমিনকে পর্যন্ত নাকানিচোবানি খাইয়ে ছেড়েছিলেন ক্রান্তি!

এবং ভারতীয় ক্রিকেটের গৌড়ের উত্থানের নেপথ্যে রয়েছেন দেশজ ক্রিকেটের কিংবদন্তি ঝুলন গোস্বামীও। ভারতবর্ষ তো বটেই। গোটা ক্রিকেটবিশ্বের সর্বকালের অন‌্যতম সেরা মহিলা পেসার যিনি। ডব্লিউপিএল বা মহিলা আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ঝুলন। টিম মেন্টর এবং বোলিং কোচ হিসেবে। বছর দু’য়েক আগে প্রতিভা অণ্বেষণ করতে গিয়ে তিনি খোঁজ পান ক্রান্তির। মধ‌্যপ্রদেশের কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের (যিনি আবার প্রাক্তন নাইট কোচও বটে) সঙ্গে কথায়-কথায় ঝুলন জানতে পারেন ক্রান্তির কথা। সে সময় বঙ্গকন‌্যা জানতেনও না আদৌ ক্রান্তি কী বোলিংটা করেন? পেস? নাকি স্পিন?

‘‘ততদিনে ডব্লিউপিএল শেষ হয়ে গিয়েছিল। টুর্নামেন্ট একবার শেষ হয়ে গেলে বিশেষ কেউ আর খোঁজখবর চালাতে চায় না। কিন্তু আমরা নতুন প্রতিভা খুঁজছিলাম। তখনই চান্দু স‌্যরের (চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত) সঙ্গে কথা বলার সময় জানতে পারি ক্রান্তির কথা। উনি খুব প্রশংসা করেছিলেন। বলেছিলেন, ভালো জোরে বোলিং করে। তার পর মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ট্রায়ালে আসে। টিমে নেওয়া সম্ভব হয়নি সেবার। ইউপি ওয়ারিয়র্সে চলে যায় ক্রান্তি। পরে কখনও ওকে টিমে পাব, আশা করি,’’ সোমবার ফোনে বলছিলেন ঝুলন।

ভারতীয় দলে ক্রান্তির প্রবেশও অদ্ভুত ভাবে। গত মে মাসে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রেমদাসা স্টেডিয়ামে তাঁর অভিষেক হয়। সেই সময় ভারতীয় দলের দুই সিনিয়র পেসার রেণুকা সিং ঠাকুর এবং পুজা বস্ত্রাকর- দু’জনেই চোট-আক্রান্ত। দু’জনেরই রিহ‌্যাব চলছিল। নাহ্, অভিষেক ম‌্যাচে দারুণ কিছু করতে পারেননি ক্রান্তি। কিন্তু শ্রীলঙ্কার চামারি আতাপাত্তু, যিনি কি না ‘পুল’ শটের জন‌্য বিখ‌্যাত, তাঁর পাঁজরে বল ‘হিট’ করেন। ‘‘ক্রান্তির বলের গতি বেশ ভালো। সঙ্গে যথেষ্ট ভালো বাউন্সারি দিতে পারে। অফ দ‌্য উইকেট বল ভালো কাট করে। সঙ্গে প্রচণ্ড ফিট। এখনকার দিনে ক্রিকেটে ফিটনেসটা প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিকেট খেলতে গেলে আপনাকে ভালো অ‌্যাথলিট হতে হবে। ক্রান্তি কতটা ফিট প্লেয়ার, কতটা ভালো অ‌্যাথলিট, সেটা ওর ফিল্ডিং দেখলেই বুঝতে পারবেন,’’ যোগ করলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩৫৫ উইকেটের মালিক ঝুলন।

অবশ‌্য নিজেকে প্রতিনিয়ত ঘষামাজা করে উন্নত না করে উপায়ও বা কী ছিল বাইশ বছরের ক্রান্তির? মধ‌্যপ্রদেশের গ্রামে কৃষক পরিবারে বেড়ে ওঠা ভারতীয় পেসারের। ছোট থেকে টেনিস বলে ক্রিকেট খেলে বেড়াতেন। আর কোচেরা একটাই পরামর্শ দিতেন ক্রান্তিকে- যত জোরে সম্ভব, বোলিং করতে। ‘‘আবারও বলছি, শুধুই বলের গতি নয়। ক্রান্তির রান আপ, নিয়ন্ত্রণ সবই ভালো। আরে, আমরা (বাংলা) যে সিনিয়র ওয়ানডে ফাইনালে মধ‌্যপ্রদেশের কাছে হেরে গেলাম, তার নেপথ্যে তো ক্রান্তি ছিল। চারটে উইকেট তুলে নিয়েছিল ও সেদিন। সেই টুর্নামেন্টের পর থেকে ওকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দেখলাম, ক্রমশ উন্নতি করে চলেছে। দারুণ জায়গায় বোলিং করছে। লেট মুভমেন্ট পাচ্ছে। লম্বা স্পেল করছে। আসলে টানা ভালো পারফর্ম করতে-করতে প্রয়োজনীয় বিশ্বাসটা পেয়ে গিয়েছে ক্রান্তি,’’ টানা বলে চলেন ঝুলন। বলে-টলে তাঁর শেষ সংযোজন, ‘‘আমি অবশ‌্য এখানে টিম ম‌্যানেজমেন্টের কথাও বলব। টিম ক্রান্তিকে সাপোর্ট দিচ্ছে। একজন প্লেয়ারের পারফর্ম করার ক্ষেত্রে টিম ম‌্যানেজমেন্টের সহায়তাটা খুব দরকার।’’

তা, এহেন প্রতিভার পাশে না দাঁড়ালে, টিম ম‌্যানেজমেন্ট আর দাঁড়াবেও বা কার পাশে? রেণুকার সঙ্গে তাঁর বোলিং পার্টনারশিপ যে চলতি ওয়ান ডে বিশ্বকাপে মহাগুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। এত দিনের হাহাকার আর অভিশাপ কাটিয়ে বিশ্বচ‌্যাম্পিয়ন হতে গেলে যে, স্মৃতি-হ‌্যারির (হরমনপ্রীত কউর) ব‌্যাটিংয়ের সঙ্গে আরও একটা জিনিস প্রবল ভাবে লাগবে ভারতের।
গৌড়ের ‘কবচ’!

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ