Advertisement
Advertisement
Mohammed Siraj

বিশ্বাসে মিলায় সিরাজ, সমালোচনা-ক্লান্তিকে ক্লিন বোল্ড, ক্যাচ মিসের প্রায়শ্চিত্ত করে জনগণমনের নায়ক ‘মিঁয়া’

ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট কথাটা মনে হয় সিরাজের ডিকশনারিতে নেই।

Mohammed Siraj played huge role in India series draw against England
Published by: Anwesha Adhikary
  • Posted:August 4, 2025 5:16 pm
  • Updated:August 4, 2025 5:50 pm   

অণ্বেষা অধিকারী: একটা সময় ক্রিকেটবোদ্ধাদের মনে হয়েছিল, ম্যাচ চলে গিয়েছে ইংল্যান্ডের ঝুলিতে। দুই সেরা ব্যাটার ক্রিজে জমে গিয়েছেন, সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সিরিজ জয়ের হুঙ্কার দিচ্ছেন। কিন্তু আশা ছাড়েননি তিনি। যাঁর একটা ভুলেই দাঁতনখ বের করে ঝাঁপিয়ে পড়ে সমালোচকরা, ভালো বল করেও যিনি থেকে যান কেবল পার্শ্বচরিত্র হয়েই। তবে সেসবের পরোয়া না করে এবার তিনি বিশ্বাস রেখেছেন নিজের উপর। আর সেই বিশ্বাসে ভর করেই ওভালে জয়ী ভারত। জিতে গেলেন বরাবরের সমালোচিত তিনি-মহম্মদ সিরাজ।

Advertisement

যিনি দেশের আগে বাকি সমস্ত কিছুকে বিসর্জন দেন। বাবার মৃত্যু- তবু তিনি রয়ে গেলেন সুদূর অস্ট্রেলিয়ায়। দেশের জার্সিতে খেলতে নেমে ছারখার করে দিলেন বিপক্ষকে। দেশের জন্য নির্দ্বিধায় খেলে যান টানা পাঁচ টেস্ট। ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট কথাটা মনে হয় সিরাজের ডিকশনারিতে নেই। তাই তো চোট-আঘাত, ক্লান্তি, ধকল-সব উপেক্ষা করেই তিনি সর্বদা প্রস্তুত। পরপর টেস্ট খেললেও তাঁর পিঠে টান ধরে না, চোট লাগে না। রক্তমাংসে গড়া হলেও সিরাজ যেন লৌহমানব। আগ্রাসন, সিউ সেলিব্রেশনে তিনিই যেন দলের অলিখিত নেতা। কাঁধ ঝুলে যাওয়া টিমকে ফের চাঙ্গা হয়ে ওঠার অক্সিজেনও যোগান তিনি।

ওভাল টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে শতরানকারী ব্যাটারের ক্যাচ ছেড়েছিলেন সিরাজ। ওই একটা ভুলের পরেই সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছে তাঁর উপর দিয়ে। প্রথম ইনিংসে তাঁর অনবদ্য বোলিং, যার দাপটে দ্বিতীয় ইনিংসে লড়াইয়ের রসদ পেল ভারত-সেসব বেমালুম ভুলে গেল ক্রিকেটমহল। বরং একবাক্যে সকল ক্রিকেটবোদ্ধার আদালত রায় দিল, ‘সিরাজ তো ওভাল টেস্টটাই হাতছাড়া করে দিল।’ সমালোচকমহল মনে রাখে না, এই সিরাজই টানা ৫ টেস্ট খেলেন। ওয়ার্কলোড আর চোট-আঘাতে যখন পেস ব্রিগেড মূর্ছা যায়, তখনও ভাঙাচোরা বোলিং লাইন আপকে নেতৃত্ব দেন। শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার বার্তা দেন। তবে এত কিছু করেও সিরাজের নায়কের সম্মান আর পাওয়া হয় না।

তাই তো ক্যাচ ছাড়ার প্রায়শ্চিত্তযজ্ঞে শামিল হন নিজেই। ম্যাচ যখন প্রায় হাতছাড়া, তখন শতরান হাঁকানো তারকার উইকেট নিলেন। সিরিজ হার যে বাঁচানো যায়, সেই বিশ্বাস ফেরালেন দলের মধ্যে। চতুর্থ দিনের শেষে সিরাজের আগ্রাসন সঞ্চারিত হল বাকি পেসারদের মধ্যে। ম্যাচ গড়াল পঞ্চম দিনে। সাতসকালে খেলা শুরুর পর একের পর এক বল একটুর জন্য মিস করেছে ব্যাটের কানা-স্টাম্পস। তখনও সমালোচক ক্রিকেটবোদ্ধারা বলে চলেছেন, এই জায়গায় অমুকে থাকলে মাথা ঠাণ্ডা রেখে বল করত।

রান তাড়া করতে করতে মাত্র এক অঙ্কে নেমে এল ইংল্যান্ডের টার্গেট। ফিল্ডারদের গাফিলতিতে এক এক করে রান জুড়ে যাচ্ছে স্কোরবোর্ডে। স্কোরবোর্ডে তখন দেখাচ্ছে, আর সাত রান করতে পারলেই ম্যাচ আর সিরিজ ইংল্যান্ডের পকেটে। ঠিক সেই মুহূর্তেই এলেন সিরাজ, হায়দরাবাদি ঝাঁজ নিয়ে। আহত ব্যাটারকে আক্রমণের অখেলোয়াড়ি আচরণ নয়, পাক্কা জেন্টলম্যানের মেজাজে ছিটকে দিলেন বিপক্ষের শেষ ব্যাটারের স্টাম্প। ম্যাচ ভারতের।

ম্যাচ শেষে বললেন মাত্র কয়েকটি শব্দ। সঠিক লক্ষ্যে বল করে যাচ্ছিলেন। আর বিশ্বাস রেখেছিলেন নিজের উপর। সেটুকুই তো সম্পদ। আসমুদ্র হিমাচল এদিক-ওদিক হয়ে গেলেও এই বিশ্বাসটুকুতে ভর করে তিনি খেলে ফেলেন টানা ৫ টেস্ট। অন্য কারোর উপর নয়, নিজের উপর বিশ্বাস করেই জয় এনে দিলেন দলের জন্য। বুঝিয়ে দিলেন, দেশের জার্সিতে খেলতে হলে চাই এই বিশ্বাসটুকুই। বাকি সব সমস্যা-প্রতিকূলতা ফিকে হয়ে যায় এই বিশ্বাসের কাছেই। ওভাল টেস্টের সিরাজ শেখালেন, অন্য কারোর উপরে আস্থা রাখলে মনোমত ফলাফল নাও মিলতে পারে। কিন্তু নিজের উপর বিশ্বাসেই মেলে সাফল্য। জীবনের পাঠ শিখিয়ে হয়তো দেশের কিংবদন্তি বোলারদের তালিকায় স্থান হবে না সিরাজের। তবে হায়দরাবাদের অটোচালকের পুত্র ‘সিরাজ মিঁয়া’ থেকে যাবেন আমজনতার নায়ক হয়ে। 

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ