প্রতীকী ছবি।
অণ্বেষা অধিকারী: আরসিবি মানেই তারকার সমাহার। সেরা ফর্মের ক্রিস গেইল, এবি ডি’ভিলিয়ার্স, জ্যাক কালিস, বিরাট কোহলি-কে খেলেননি আরসিবি জার্সিতে? সমসাময়িক ক্রিকেটদুনিয়ার সেরা তারকাদের দলে নিতে কখনই ভুল করেনি আরসিবি ম্যানেজমেন্ট। কোটি কোটি টাকা খরচ করে সেরা ক্রিকেটারদের নিয়ে বারবার দল গড়েছে আরসিবি। কিন্তু এতকিছুর পরেও নিট ফল শূন্য। ১৭ বছর ধরে প্রত্যেকবার সমর্থকরা স্লোগান তুলেছেন, ‘ই সালা কাপ নামদে’। কিন্তু কাপ আর তাঁদের হয়নি।
কাট টু ২০২৫। মেগা নিলামের আগে মাত্র তিনজন ক্রিকেটারকে রিটেন করল আরসিবি। বিরাটের মতো তারকার পাশাপাশি সেই তালিকায় ছিল রজত পাতিদার এবং যশ দয়ালের নাম, যাঁদের সাধারণ মানুষ কতখানি চেনেন সেই নিয়ে প্রচুর সংশয়। নিলামের সময়ে একঝাঁক ক্রিকেটারকে কিনলেও, তথাকথিত তারকা ছিল না আরসিবি শিবিরে। টিম ডেভিড, রোমারিও শেফার্ড, লিয়াম লিভিংস্টোন, ক্রুণাল পাণ্ডিয়া, জশ হ্যাজেলউড, লুঙ্গি এনগিডি, জিতেশ শর্মা-স্টারডমের নিরিখে এঁরা নেহাতই মধ্যমানের। কিন্তু এই সৈনিকদের নিয়েই রণকৌশল সাজিয়েছিল আরসিবি। তারকাবোঝাই টিম নয়, কাপ ঘরে ফেরানোর লক্ষ্যে সাধারণ ব্রিগেডের উপরে ভরসা রাখল ম্যানেজমেন্ট।
চিরাচরিত তারকাপূজার ছায়া থেকে বেরিয়ে আরসিবি আদৌ সাফল্য পাবে? নিলামের পর প্রশ্ন তুলেছিলেন দলের ভক্তরাই। তবে মাঠে নেমে কামাল করেছে সেই ‘মধ্যমানে’র দলই। পরিসংখ্যান বলছে, চলতি মরশুমে (ফাইনালের আগে) ৯টি ম্যাচে জিতছে আরসিবি। আর ৯ জন আলাদা ক্রিকেটারের ঝুলিতে গিয়েছে ম্যান অফ দ্য ম্যাচের শিরোপা। সেই তালিকাতেও তথাকথিত তারকা একমাত্র বিরাট। কখনও ক্রুণাল, কখনও সুয়াশ, কখনও রোমারিও-অখ্যাতদের ‘ফাইভস্টার’ পারফরম্যান্সেই জয় ছিনিয়ে এনেছে আরসিবি। গোটা মরশুমজুড়ে খানিকটা আন্ডারডগ হিসাবে বিবেচিত হলেও শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছে আরসিবি।
খেলা মানেই হারজিত। গোটা মরশুম জুড়ে দুর্দান্ত খেলেও একটা খারাপ ওভার বদলে দেয় দলের ভাগ্য। ২০১৬ সালে বিরাট-এবি-গেইল ত্রয়ীর আরসিবি সেভাবই স্বপ্নভঙ্গের শিকার হয়েছিল। তীরে এসে তরী ডুবেছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদের কাছে। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের কমলা টুপি জিতেও ট্রফি হাতছাড়া হওয়ায় যন্ত্রণাক্লিষ্ট বিরাট-সেই ছবি আজও গেঁথে রয়েছে আরসিবি ভক্তদের মনে। সেই ছবিটা বদলাতে মরিয়া ছিল আরসিবি শিবির। চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোহলিকে উপহার দিতে হবে, এই মন্ত্রেই একজোট হয়ে গোটা মরশুম খেলেছে গোটা দল। তারকা নয়, অতি সাধারণ কয়েকজন ক্রিকেটারের হাত ধরেই স্বপ্ন দেখেছিল আরসিবি।
তারকাবর্জিত আরসিবির দাঁতে দাঁত চাপা লড়াই ভাঙাল ক্রিকেটদেবতার আঠারো বছরের ‘ঘুম’। ট্রফি জিততে নিজেদের খোলনলচে বদলে, আমূল পরিবর্তিত হয়ে এবারের আইপিএলে ধরা দিয়েছিল আরসিবি। দলের সাফল্য চেয়ে মন্দির-দরগায় গিয়ে প্রার্থনা করেছিলেন ভক্তরা। সকলের এমন সম্মিলিত আবেদন ফেলতে পারেননি ক্রিকেটদেবতাও। আঠারো বছর ধরে চাতক পাখির মতো অপেক্ষার পর অবশেষে সেরার শিরোপা উঠল বিরাটদের মাথায়। তারকার বাহুল্য বাদ দিয়েও যে খেতাবি যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত জিতে যাওয়া যায়, জীবনের সেই পাঠ শেখাল নতুন আরসিবি। জাঁকজমক, বহুমূল্য রত্ন নয়, সাধারণকে সম্বল করেই লড়াই জেতা যায়, এগনো যায় অভীষ্টের দিকে, ফাইনাল জিতে তা বোঝাল আরসিবি। ‘সাধারণ’দের ক্ষমতাও যে কম নয়, প্রমাণ করল বদলে যাওয়া আরসিবি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.