স্টাফ রিপোর্টার: কেএল রাহুল ২.০-র নেপথ্যে কারা? কারা রাহুলের বর্তমান দ্বিতীয় সংস্করণ তাঁর ভেতর থেকে হিঁচড়ে বার করে এনেছেন, যার ফলে এখন বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মা বিহীন ভারতীয় দলের অন্যতম ব্যাটিং স্তম্ভ হয়ে উঠেছেন তিনি? দু’টো নাম রয়েছে। দু’জনের নাম। ভারতীয় ক্রিকেটের আভ্যন্তরীণ বিষয়পত্রের খোঁজখবর রাখেন যাঁরা, প্রথম নামটা তাঁরা জানেন। তিনি, ভারতের প্রাক্তন সহকারি কোচ অভিষেক নায়ার। যাঁর অবদানের কথা প্রকাশ্যে বলে গিয়েছেন রাহুল। দ্বিতীয় নামটা সে ভাবে প্রকাশ্যে আসেনি কখনও। যা এবার খুলে-আম বলে দিয়ে গেলেন স্বয়ং নায়ার!
রোহিত গুরুনাথ শর্মা!
গৌতম গম্ভীর যখন ভারতের কোচ হয়ে আসেন, তাঁর সহকারি হিসেবে টিম ইন্ডিয়ার সংসারে যোগ দেন নায়ার। সেই সময় ভারত অধিনায়ক রোহিত। তিনিই নায়ারকে দায়িত্ব দেন, পুরনো রাহুলকে ফিরিয়ে দিতে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে। “রোহিতই আমাকে বলেছিল, কেএলের আগ্রাসী দিকটা বার করে আনতে। রোহিত বিশ্বাস করত, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বড়সড় ভূমিকা নেবে রাহুল। শুধু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিই নয়। আসন্ন বিশ্বকাপ। বর্ডার গাভাসকর ট্রফি, ইংল্যান্ড সফর, সর্বত্র,” বলে দিয়েছেন নায়ার। যাঁকে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে ১-৩ সিরিজ হারের পর সরিয়ে দেওয়া হয় ভারতীয় দল থেকে। যার পর থেকে যিনি কেকেআরে।
বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে শুরুটা ভালো হয়েছিল রাহুলের। কিন্তু শেষটা অতটাও ভালো হয়নি। তার আগে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সফরে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন একটা মাত্র টেস্ট। তারপর সোজা বাদ দিয়ে দেওয়া হয় বর্তমান ভারতীয় টিমের সবচেয়ে সৃজনশীল ব্যাটারকে। কিন্তু সেই নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকেই রাহুল-নায়ার পার্টনারশিপের শুরু। নিউজিল্যান্ড সিরিজ, তার নিজের মতো চলেছে। আর তিনি রাহুল, পড়ে থেকেছেন নায়ারের সঙ্গে। “আসলে অস্ট্রেলিয়া এমন একটা সফর, যেখানে কিছু না করতে পারলে প্রশ্ন উঠে যেত, রাহুলের কেরিয়ার নিয়ে। আমি ওকে তখন বলেছিলাম, দেখো অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে দিন পনেরো আছে। আমরা অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পরেও দিন দশেক পাব। এবার বলো তুমি কী ভাবে সব কিছু করতে চাও? তোমার মানসিকতা কী,” রাহুলকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন অভিষেক। উত্তরে ধ্রুপদী কর্নাটকী ব্যাটার বলতে থাকেন, অতীতে কোন কোন ফ্যাক্টর তাঁর পক্ষে গিয়েছে। কী কী বিষয়, তাঁর পক্ষে কাজ করেছে।
“আমার ভাবনাচিন্তা আবার আলাদা ছিল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে কথা বলে আমি আমার মতামত বলি রাহুলকে। কারণ, রাহুলকে নিজের প্র্যাকটিস, নিজের স্টান্স, ফ্রিজ পজিশন, বদলাতে হলে সবার আগে আমাকে বিশ্বাস করতে হত,” বলতে থাকেন নায়ার।
এবং অস্ট্রেলিয়া সফর থেকেই নিজের পুরনো ছন্দ ধীরে ধীরে পেতে শুরু করেন রাহুল। নায়ারকে বলেনও যে, “খেলাটাকে আমার এখন গানের মতো লাগছে। উপভোগ করছি।” কিন্তু ঠিক কী হয়েছিল রাহুলের? কেন তিনি গ্রেট প্লেয়ার না হয়ে বারবার ‘প্লেয়ার অফ গ্রেট ইনিংস’-এর পরিসরে সীমাবদ্ধ থেকে যেতেন বারবার? “বাইরের ক্যাঁচরম্যাঁচর। ওটাই সমস্যার। আসলে প্রত্যাশা এমন একটা জিনিস, আপনি না চাইলেও ঘাড়ে চেপে বসবে। আপনার বারবার মনে হবে, কী কী করা উচিত? কী কী অর্জন করতে হবে? কারণ, লোকে সব সময় বলে যাচ্ছে যে আপনি প্রতিভাবান। আপনার পারফর্ম করার ক্ষমতা আছে। এ সব যত হয়, তত কাঁধের উপর চাপের পাহাড় বড় হতে থাকে। আমার মনে হয়, রাহুলের ক্ষেত্রেও একই জিনিস ঘটেছিল। আর এ সমস্ত যত হয়, খেলা থেকে আনন্দের ব্যাপারটাই চলে যায়,” ব্যাখ্যা করেন নায়ার। তবে রাহুলের সঙ্গে তিনি ঠিক কোন কাজটা করেছিলেন, বিশদে বলেননি প্রাক্তন জাতীয় সহকারি কোচ। “শুধু এটুকু বলব, আমি প্রথমে প্লেয়ারের স্কিল বোঝার চেষ্টা করি। তার পর সেই স্কিলকে ব্যবহার করে তার মন বোঝার চেষ্টা করি। আমি প্লেয়ারের মনকে বোঝাই, যে প্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে, সেটাকে কী ভাবে বাস্তবে রূপান্তর করা যায়। তার সঙ্গে ট্যাকটিক্যাল বিষয় যোগ হয়। আমি সচরাচর রেজাল্ট নিয়ে না ভেবে, প্ল্যানকে কী ভাবে বাস্তবে রূপান্তর করা যায়, সেটা দেখি,” বলে দিয়েছেন নায়ার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.