তিনি নিজেও বহু পাকিস্তান ম্যাচ খেলেছেন। জানেন ভারত বনাম পাকিস্তানের ক্রিকেটীয় যুদ্ধের আগে বাইরের কতটা চাপ থাকে। এবার চাপটা হয়তো আরও বেশি থাকবে। পহেলগাঁও সন্ত্রাসের পর এই প্রথম দুই দেশ মুখোমুখি হতে চলেছে। ক্রিকেটারদের মধ্যে যে আবেগটা বেশি থাকবে, সেটা বলে দেওয়াই যায়। রবিবারের মহাযুদ্ধের আগে সংবাদ প্রতিদিন-কে একান্ত সাক্ষাৎকারে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, ভারত ফেভারিট হয়েই এই ম্যাচে নামবে। পাকিস্তান জিতলে, সেটাই অঘটন হবে।
প্রশ্ন : দুদিন পরই এশিয়া কাপে ভারত বনাম পাকিস্তান মহাযুদ্ধ। এই ম্যাচটা বাকি আর পাঁচটা ম্যাচের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। আপনি নিজেও বহু পাকিস্তান ম্যাচ খেলেছেন। বাইরের ব্যাপার-স্যাপার কতটা প্রভাব ফেলে?
সৌরভ : এটা ঠিক, এই ম্যাচ নিয়ে প্রত্যাশা থাকে। এটা সবসময় থাকে। আমরা যখন খেলতাম, তখনও ব্যাপারটা একইরকম ছিল। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলা থাকলে, সবাই বলবে ম্যাচটা জিততেই হবে। ২০০৩ বিশ্বকাপের কথা এখনও মনে রয়েছে। পাকিস্তান ম্যাচের আগে অনেকেই মেসেজ করেছিল। সবার বার্তার সারমর্ম একটাই-এই ম্যাচে হারা চলবে না। সেঞ্চুরিয়নে পাকিস্তান ম্যাচটা ছিল। হোটেলের সামনে প্রচুর ভারতীয় সমর্থক চলে এসেছিল। বুঝতে পারছিলাম চাপটা কীরকম। তবে ড্রেসিংরুমে এগুলো খুব একটা প্রভাব ফেলে না। কারণ সবাই প্রফেশনাল। ওরা জানে কীভাবে চাপ সামলাতে হয়। তাছাড়া ড্রেসিংরুমে ঢুকে যাওয়ার পর বাইরের চাপ আর অনূভূত হয় না। আমাদের সময়ও ব্যাপারটা একই ছিল। আমার ধারণা এখনও তাই আছে। এখন আরও বেশি ক্রিকেট হয়। সবাই জানে, বাইরের চাপ থেকে কীভাবে নিজেকে দূরে রাখতে হয়।
প্রশ্ন : কিন্তু পাকিস্তান এখন থেকেই হুঙ্কার দিয়ে দিয়ে রাখছে। বলছে, এশিয়া কাপে তারা ভারতকে হারাবে। শুধু গ্রুপে নয়, পরের রাউন্ডেও হারাবে।
সৌরভ : ধুর! আমার মনে হয় না। একটা ম্যাচেই হারাতে পারবে কি না, সন্দেহ রয়েছে। আবার পরপর দুটো ম্যাচে হারানোর কথা বলছেন। এই পাকিস্তান আর আগের পাকিস্তান নয়। তখন ওদের টিম খুব ভালো ছিল তার উপর বাবর আজম নেই। মহম্মদ রিজওয়ান নেই। ওরা যাই বলুক না কেন, পাকিস্তান হারাতে পারবে না। ভারত অনেক বেশি শক্তিশালী। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এক-আধটা ম্যাচে রেজাল্ট একটু এদিক-ওদিক হতে পারে। কিন্তু ধারাবাহিকতার দিক থেকে ভারত অনেক বেশি এগিয়ে। যদি কোনওভাবে পাকিস্তান জেতে, সেটাই সবচেড়ে বড় অঘটন হবে।
প্রশ্ন : পাকিস্তানের পেস অ্যাটাক কিন্তু যথেষ্ট ভালো। শাহিন শাহ আফ্রিদি রয়েছেন। হ্যারিস রউফ আছেন। শাহিন ভারতীয় ব্যাটিংকে বেশ ভুগিয়েছে।
সৌরভ : শাহিন এর আগেও খেলেছে। ভারত কি তখন জেতেনি? দেখুন এক-আধজন ক্রিকেটারের উপর নির্ভর করে আপনি জিততে পারবেন না। টিম হিসেবে ভারত অনেক এগিয়ে।
প্রশ্ন : এই প্রথম কোনও বড় ইভেন্টে ভারত বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মাকে ছাড়া নামছে। গতবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার ক্ষেত্রে দু’জনেরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
সৌরভ : বিরাট আর রোহিত, দুজনেরই সাদা বলের ক্রিকেটে রেকর্ড দুর্ধর্ষ। তবে এই দুজন ছাড়াও ভারতের টিম খুব শক্তিশালী। শুভমান আছে। সূর্য আছে। হার্দিকরা আছে। তাছাড়া বয়স একটা ফ্যাক্টর। সবাইকে একটা সময়ের পর ছাড়তে হয়। আমাকেও ছাড়তে হয়েছে। শচীনকে ছাড়তে হয়েছে। আমার বিশ্বাস, এই ভারতীয় দলও খুব ভালো পারফর্ম করবে।
প্রশ্ন : প্রথম ম্যাচে আমিরশাহীকে উড়িয়ে দিয়েছে সূর্যরা।
সৌরভ : আমিরশাহীর বিরুদ্ধে ভারত সহজেই জিতবে, সেটা জানাই ছিল। ঠিক তাই হয়েছে। পাকিস্তান ম্যাচের আগে এই পারফরম্যান্স আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দেবে।
প্রশ্ন : কুলদীপ যাদবকে কেমন দেখলেন?
সৌরভ : আমি বরাবরই বলে এসেছি, কুলদীপ টিমের এক্স ফ্যাক্টর। আমার মতে, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজেও কুলদীপকে খেলানো উচিত ছিল। ইংল্যান্ড স্পিন খুব একটা ভালো খেলে না। কুলদীপের যা বৈচিত্র্য, তাতে আরও অসুবিধেয় পড়ে যেত ইংল্যান্ড ব্যাটাররা। ভারত টেস্ট সিরিজ জিততেও পারত। আমি তো বলব, ওই সিরিজ অবশ্যই জেতা উচিত ছিল শুভমানদের। লর্ডসে একটু ভালো খেললেই ভারত ৩-১ সিরিজ জিতত।
প্রশ্ন : এশিয়া কাপেও তাহলে ভারত ফেভারিট বলছেন?
সৌরভ : হান্ড্রেড পার্সেন্ট। এটা নিয়ে দ্বিমতের কোনও জায়গা নেই। এশিয়া কাপে যে টিমগুলো খেলছে, ভারত তার থেকে অনেক এগিয়ে। কয়েক মাস আগে দুবাইয়ের মাঠে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছে। আমার বিশ্বাস সূর্যরা এশিয়া কাপ জিতবে। যদি কোনও টিম ভারতকে সামান্য লড়াইয়ের মধ্যেও ফেলতে পারে, সেটা শ্রীলঙ্কা। পাকিস্তানকে আমি খুব একটা নম্বর দেব না। কারণ, ওদের টিমের কোনও ধারাবাহিকতা নেই। তাছাড়া দুবাইয়ের কন্ডিশনে ভারত খুব ভয়ঙ্কর। ওখানকার উইকেট একেবারে ভারতের মতোই। স্লো, টার্নার। স্পিনাররা অনেক বেশি সাহায্য পায়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও ঠিক সেটাই হয়েছিল। আমাদের টিমে অক্ষর, বরুণ আর কুলদীপের মতো তিনজন সেরা স্পিনার রয়েছে। ভারতকে হারানো খুব কঠিন। টেস্টের থেকেও সাদা-বলের ক্রিকেটে ভারতের টিম অনেক বেশি এশিয়া কাপের কথা তো ছেড়েই দিলাম। শক্তিশালী। বিশ্বের দু’একটা দল ছাড়া ভারতকে চ্যালেঞ্জে ফেলার মতো কেউ নেই।
প্রশ্ন : টি-টোয়েন্টিতে শুভমান গিলকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।
সৌরভ : খুব ভালো সিদ্ধান্ত। ওর অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে। শুভমান চলে আসায় ব্যাটিং শক্তি আরও বেড়ে গিয়েছে। অভিষেক শর্মার সঙ্গে গিল ওপেন করছে। একদম সঠিক সিদ্ধান্ত। সঞ্জুকে তিন নম্বরে খেলালে ভালো হয়। চারে সূর্য আসবে। পাঁচ আর ছয় যথাক্রমে তিলক আর হার্দিক। দু’জনেরই ম্যাচ ফিনিশ করার ক্ষমতা রয়েছে। তাই ওরা নিচের দিকে থাকলে টিমের ব্যালান্স আরও ভালো হবে। টপ অর্ডারে সঞ্জু অনেক বেশি সাকেসেসফুল। ওপেন করতে নেমে সেঞ্চুরি করেছে। তিন নম্বর স্লটটা সঞ্জুকেই দেওয়া হোক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.