স্টাফ রিপোর্টার: আসন্ন সিএবি নির্বাচনে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কেই সমর্থন দিচ্ছেন মোহনবাগান সচিব সৃঞ্জয় বোস। যিনি বিশ্বাস করেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে যিনি আসবেন, তাঁর পুরো প্যানেলেরই আসা উচিত। তবে তিনি একই সঙ্গে মনে করেন, ভোটের পরে সৌরভ এবং অভিষেক ডালমিয়া, ‘বিবাদ’ ভুলে দু’পক্ষেরই একসঙ্গে কাজ করা উচিত।
আগামী ২২ সেপ্টেম্বর সিএবি নির্বাচন। ১৪ সেপ্টেম্বর মনোনয়ন জমা করার শেষ দিন। প্রাক্তন সিএবি প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়া প্রকাশ্যে কোথাও বলেননি, তিনি বিরোধী। বলেলনি, তিনি সিএবি নির্বাচনে প্রার্থী দেবেন কি না? কিন্তু ময়দানে এটা বেসরকারি ভাবে সবাই জানে যে, আসন্ন সিএবি নির্বাচনে দু’টো পক্ষ। একটা সৌরভ-শিবির। আর একটা অভিষেক-শিবির।
যে ‘বিভাজনের’ দ্রুত সমাপ্তি দেখতে চান মোহনবাগান সচিব। সোমবার সৃঞ্জয় বলছিলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি, বাংলা ক্রিকেটের স্বার্থে নির্বাচন হয়ে গেলে সৌরভ-অভিষেকের বসা উচিত। এই বিভাজন থামা উচিত।’’ কিন্তু সত্যি কি ময়দান সিএবি নির্বাচনের আগে দু’টো শিবিরে বিভক্ত? কারণ, বিরোধী হিসেবে যাঁদের বলা হচ্ছে, তাঁরা প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলছেন না। ‘‘অবশ্যই দু’টো শিবিরে ভাগ হয়ে গিয়েছে। দু’পক্ষেরই অনেক বক্তব্য রয়েছে। কিন্তু সৌরভ সিএবি প্রেসিডেন্ট হয়ে গেলে, তার পর যেন এই অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ আর না চলে। দেখুন, অভিযোগ করতে কিছু যায়-আসে না। যার নামে অভিযোগ জমা পড়ছে, কলঙ্কিত সে হয়। আর হয় অ্যাসোসিয়েশন,’’ টানা বলতে থাকেন সৃঞ্জয়। সঙ্গে দ্রুত যোগ করেন, ‘‘আবারও বলছি, এটা মিটে গেলেই ভালো। দু’জনেরই অনেক দিনের চেনাশোনা। পারিবারিক সম্পর্কও আছে। আমার মনে হয় না, যা চলছে, সেটা আর টানা উচিত। আমি জানি না, দু’জনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক কোথায় দাঁড়িয়ে। আমি তার মধ্যে ঢুকতেও চাই না। তবে বলব, দু’জনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক যদি ঠিক না-ও হয়, সিএবি-র স্বার্থে একসঙ্গে চলা উচিত। দু’পক্ষেরই মনে রাখা দরকার, কলঙ্কের কালি অ্যাসোসিয়েশনের গায়েই লাগছে।’’
ইস্টবেঙ্গল ইতিমধ্যে বলে দিয়েছে যে, সৌরভকে তারা সিএবি প্রেসিডেন্ট পদে সমর্থন জানাচ্ছে। ক্লাবের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার কয়েক দিন আগে প্রচারমাধ্যমকে বলেন, ‘‘সৌরভ আমাদের জানিয়েছে যে, ও সভাপতি পদে দাঁড়াবে। এর জন্য নির্বাচনে সমর্থন চেয়েছে। আমরা ওকে সমর্থন করব। বাকি চারটে পদ নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনার কথাও জানিয়েছে সৌরভ। এখনও সেই আলোচনা হয়নি। হয়তো ভবিষ্যতে হবে।’’
যা শুনে সৃঞ্জয় বললেন, ‘‘সৌরভ না চাইলে ইস্টবেঙ্গল সমর্থন জানাত না? শুনে ভালো লাগল! তবে সৌরভ আমার কাছে ভোট চাইতে আসেনি।’’ একটু থেমে সৃঞ্জয়ের নতুন সংযোজন, ‘‘দেখুন, নির্বাচন আমি দেখছি না। সবাই চাইবে সিএবি ভালো ভাবে চলুক। আমি বিশ্বাস করি, যে আসবে, তার পুরো প্যানেল নিয়ে আসা উচিত। আশা করব, সৌরভের প্যানেল ভালো হবে। যোগ্যদের নিয়ে হবে। সৌরভের পক্ষে সব সময় সময় দেওয়া তো সম্ভব হবে না। তাই দেখতে হবে, হাতের বাকি চারটে আঙুল যাতে ঠিক থাকে। তা হলে বুড়ো আঙুলও ঠিকঠাক কাজ করবে। পাঁচমেশালি কমিটি কখনও ঠিক করে কাজ করতে পারে না। মোহনবাগানের অবস্থানটা বলছি আমি। আমরা দেখব, প্যানেল কেমন হচ্ছে? তা হলে আলোচনা করলে ভালো। না হলেও ভরসা আছে। কারণ সৌরভ নিশ্চয়ই এমন চারজনকে প্যানেলে রাখতে চাইবে, যাদের কারণে ওর সুনাম নষ্ট না হয়। কিন্তু কোনও চাপের কাছে নতি স্বীকার করে যদি কারও প্রার্থী প্যানেলে ঢোকে, তখন আমরা আবার চিন্তাভাবনা করব।’’
সিএবি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিশ্বরূপ দে-র ‘কাছাকাছি’ আসা নিয়ে সরগরম ময়দান। এক সময় সৌরভের প্রবল বিরোধী বলে পরিচিত ছিলেন বিশ্বরূপ। কিন্তু বর্তমানে তিনি সৌরভের পক্ষে। সিএবি-র প্রাক্তন অ্যাপেক্স কাউন্সিল সদস্য হিসেবে কী ভাবে দেখছেন বিষয়টা? এবার জবাবে সৃঞ্জয় বললেন, ‘‘পৃথিবীটা গোল, তাই বিশ্বরূপদা (বিশ্বরূপ দে) এখন সৌরভের দিকে! বিশ্বরূপদা আর সৌরভের মধ্যে অতীতে যা হয়েছে, আশা করছি দু’জনেই সেটা ভুলেছে। এটাও আশা করব যে, নির্বাচনের পর পুরনো ব্যাপারস্যাপার আবার ফিরে আসবে না!’’
তবে একটা জিনিস মোহনবাগান সচিব অবিলম্বে দেখতে চান। তা হল, সিএবিতে আর্থিক দুর্নীতির শেষ। সম্প্রতি পরের পর আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে এফোঁড়-ওঁফোড় হয়েছে স্থানীয় ক্রিকেট থেকে সিএবি। আর্থিক কেলেঙ্কারিতে পদাধিকারীরা পর্যন্ত ‘আক্রান্ত’ হয়েছেন। সিএবি যুগ্ম সচিব দেবব্রত দাসকে তো সরিয়েও দেওয়া হয়েছে। ‘‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক পুরো বিষয়টা। আমরা মোহনবাগান ক্লাবেও নির্বাচন লড়েছি। কিন্তু আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে কখনও অভিযোগ আসেনি। সিএবি নির্বাচনকে ঘিরে যা যা হল, কহতব্য নয়। দেবুদা (দেবব্রত দাস), প্রবীরদা (কোষাধ্যক্ষ প্রবীর চক্রবর্তী), অমলেন্দুদা (সিএবি ভাইস প্রেসিডেন্ট অমলেন্দু বিশ্বাস), অম্বরীশ (অম্বরীশ মৈত্র) সবার নামে অভিযোগ। দেবুদারটা বলতে চাই না। কারণ, ওর ব্যাপারটা ওম্বুডসম্যানের কাছে রয়েছে। কিন্তু ওর বিরুদ্ধে কিছু সিরিয়াস অভিযোগ ছিল। সিএবি-র পদে ছিল দেবুদা। ওর সেটা ভাবা উচিত ছিল। আমার তো মনে হয়, যারাই এবার আসবে, তাদের ক্লাব থেকে আগাম ডিক্লারেশন দেওয়া উচিত যে, তাদের পাঠানো প্রতিনিধির নামে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ নেই,’’ সাফ বক্তব্য সৃঞ্জয়ের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.