রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: গঙ্গাপাড়ের মতো পদ্মাপাড়ের ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন নিয়েও নাটকের পর নাটক। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের তুলনায় তারা নিজেই। কে কবে শুনেছে, ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচনে ‘হুমকির’ মুখে পড়তে হয় বর্তমান প্রেসিডেন্টকে? যার জেরে নিরাপত্তায় ‘গানম্যান’ চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। মনে করিয়ে দেওয়া যাক, বিসিবি নির্বাচনে আমিনুলের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হতে পারেন একসময় তাঁরই সতীর্থ তামিম ইকবাল।
ফলে বাংলাদেশ বোর্ডের আসন্ন নির্বাচন ক্রিকেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ ভাবলে ভুল করবেন। ‘নতুন’ বাংলাদেশের রাজনীতির পাকচক্রের থেকে কোনও অংশে কম হতে চলছে না এই নির্বাচন। আমিনুলের পিছনে রয়েছে প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের ‘হাত’। অন্যদিকে তামিম বিএনপি ঘনিষ্ঠ। এখন বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী ও অর্থবান সংস্থার সমর্থন পাচ্ছেন তিনি। কিন্তু বিসিবি সভাপতি হওয়ার কাজটা একেবারেই সহজ হবে না তামিমের জন্য। যার নেপথ্যে তাদের নির্বাচনী গঠনতন্ত্র।
বিসিবির নির্বাচন ৪ অক্টোবর। নিয়ম অনুসারে, নির্বাচনের ৩০ দিন আগে থেকে সমস্ত প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়। এই পরিস্থিতিতে শোনা যাচ্ছে, ভোটে না দাঁড়ানোর ‘হুমকি’ দিয়ে ফোন এসেছে আমিনুলের কাছে। যেখানে সামনে নির্বাচন, তাই সভাপতির নিরাপত্তায় কোনও ত্রুটি রাখা উচিত নয়। এই মর্মে বিসিবি তরফ থেকে ইউনুস সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে। সেই ‘অতীব জরুরি’ চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বোর্ড সভাপতি মহোদয়ের দৈনন্দিন যাতায়াতের ক্ষেত্রে তার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং যে কোনোও অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গানম্যান (Gunman) নিয়োজিতকরণ আবশ্যক।’ সেই ‘সবিনয় অনুরোধ’ দ্রুত মেনেও নেওয়া হবে। অর্থাৎ প্রাক্তন সতীর্থের বিরুদ্ধে নির্বাচনের আগে ‘গানম্যান’ নিয়ে ঘুরবেন বর্তমান বোর্ড প্রেসিডেন্ট।
দেশের ক্রিকেট নির্বাচন নিয়ে এরকম পরিস্থিতি কবে কোন দেশে দেখা গিয়েছে? শেখ হাসিনার অপসারণের পর ছাত্রদের ‘বিপ্লবে’র ভয়ে একসঙ্গে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালন সমিতির সদস্যরা। গোটা ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসও। কার্যত ইউনুসের হস্তক্ষেপেই সভাপতি হন আমিনুল। প্রথমে তাঁর পরিকল্পনা ছিল নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে করা। নির্বাচনে দাঁড়ানোর নাকি তাঁর কোনও ইচ্ছাই ছিল না। এখন সেই মত বদলেছে। তাতেও যে ইউনুস সরকারের ‘হাত’ রয়েছে, সেটা অস্বীকার করা যাচ্ছে না।
আর যিনি একসময়ে তাঁর সতীর্থ ছিলেন, সেই তামিম হতে পারেন সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ। সম্ভাব্য বলা হচ্ছে কারণ, তামিমকে সভাপতি পদের জন্য দাঁড়াতে হলে একটা বাড়তি ধাপ পেরোতে হবে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়ম হচ্ছে, আগে পরিচালক পদে নির্বাচিত হতে হয়। সরাসরি সভাপতি হওয়া যায় না। যদি পরিচালক হিসেবে যথেষ্ট সমর্থন পান, তাহলে সভাপতির জন্য দাঁড়াতে পারবেন। ইতিমধ্যে তিনি একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতিও দিয়ে রেখেছেন। সে তো গেল তামিমের প্রস্তুতি। আর আমিনুলের প্রস্তুতি কি ‘গানম্যান’ সঙ্গে নিয়ে ঘুরে? বাংলাদেশের ক্রিকেটে বোধহয় সবই সম্ভব!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.