স্টাফ রিপোর্টার: মূল লেখায় ঢোকার আগে সর্বপ্রথমে গোটা কয়েক পরিসংখ্যান দেখে নেওয়া যাক। ক্রিকেট ইতিহাসের বরেণ্য কয়েক জন ব্যাটারের পরিসংখ্যান।
শচীন তেণ্ডুলকর: ম্যাচ ২০০, ইনিংস ৩২৯, রান ১৫৯২১, গড় ৫৩.৭৮, সেঞ্চুরি ৫১, হাফসেঞ্চুরি ৬৮, সর্বোচ্চ ২৪৮ নট আউট।
রিকি পন্টিং: ম্যাচ ১৬৮, ইনিংস ২৮৭, রান ১৩,৩৭৮, ব্যাটিং গড় ৫১.৮৫, সর্বোচ্চ ২৫৭।
রাহুল দ্রাবিড়: ম্যাচ ১৬৩, রান ১৩২৬৫, গড় ৫২.৬৩, সেঞ্চুরি ৩৬, হাফসেঞ্চুরি ৬৩, সর্বোচ্চ ২৭০।
ব্রায়ান লারা: ম্যাচ ১৩১, ইনিংস ২৩২, রান ১১৯৫৩, ব্যাটিং গড় ৫২.৮৮, সর্বোচ্চ ৪০০ নট আউট।
সুনীল গাভাসকর: ম্যাচ ১২৫, ইনিংস ২১৪, রান ১০১২২, ব্যাটিং গড় ৫১.১২, সেঞ্চুরি ৩৪, হাফসেঞ্চুরি ৪৫, সর্বোচ্চ ২৩৬ নট আউট।
বিভিন্ন যুগের পাঁচজন ভুবনবিখ্যাত ব্যাটারের টেস্ট পরিসংখ্যান লেখার মুখবন্ধে রাখার যথেষ্ট কারণ আছে। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা প্রায়ই বলে থাকেন, টেস্ট ব্যাটার হিসাবে তুমি তখনই সর্বোচ্চ অভিজাত শৃঙ্গের আরোহী হবে, যখন তোমার নামের পাশে দশ হাজার রান থাকবে। শচীন তেণ্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়, ব্রায়ান লারা, রিকি পন্টিংরা যে শৌর্যের অধিকারী। কিন্তু হায়, ৭৭০ রানের জন্য সেই শৃঙ্গ ছোঁয়া হল না কোহলির! এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, ব্যাটিং শৈলী থেকে প্রভাব বিস্তার, টেস্ট ক্রিকেটে কম অবদান নেই বিরাটের। কম অবিস্মরণীয় ইনিংসও খেলেননি প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। এটা অনস্বীকার্য যে, দর্শকসংখ্যার অভাবে অধুনা প্রায় ‘অর্ধমৃত’ টেস্ট ক্রিকেটে শ্রেষ্ঠ প্রাণসঞ্চারক ছিলেন বিরাট। অতীতে নিজেই তিনি বারবার বলেছেন যে, লাল বলের ক্রিকেটই সবচেয়ে প্রিয় তাঁর। এ দিনও টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার পর বিরাট বুঝিয়ে দিয়েছেন, পাঁচ দিনের ক্রিকেটের প্রতি তাঁর ভালোবাসা। সমস্যা হল, শুনতে যতই অপ্রিয় লাগুক, দিন শেষে টেস্টের কুলীনতম গোত্রে নাম লেখানো হল না তাঁর। ৯২৩০ রানে থেমে গেলেন বলে শুধু নয়, টেস্ট ছাড়ার সময় পঞ্চাশ ব্যাটিং গড়ও তাঁর থাকল না। যা শচীন-গাভাসকর-লারা-দ্রাবিড়-পন্টিং, প্রত্যেকের আছে। শুধু বিরাট কোহলির থাকল না। টেস্টে ৪৬.৮৫ ব্যাটিং গড় নিয়ে শেষ করা আর যা-ই হোক, মহাসম্মানের কখনওই নয়।
অথচ একটা সময় কী পরাক্রমই না দেখাচ্ছিলেন বিরাট। দেখতে গেলে, ডিসেম্বর ২০১৪ থেকে মার্চ ২০২০-রীতিমতো পরশপাথর হয়ে উঠেছিল তাঁর ব্যাট। তৎকালীন পরিসংখ্যান শুনবেন? সেই সময়বৃত্তে ৫৪-টা টেস্ট খেলে ৫৩৮৫ রান করে ফেলেছিলেন বিরাট! ব্যাটিং গড় চলে গিয়েছিল ৬১-তে! সেঞ্চুরি করেছিলেন ২১-টা। দেশের তাবড় ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলতেন, শচীনের একশো সেঞ্চুরির রেকর্ড কেউ যদি ভাঙতে পারেন, তা হলে সেই ক্ষমতা ধরেন একমাত্র কোহলি। ‘লিটল মাস্টারে’র টেস্ট ক্রিকেটে ৫১ সেঞ্চুরির অবিশ্বাস্য রেকর্ডও সেই সময় অক্ষত থাকবে, মনে হয়নি। বরং লেখালিখি চলত, বিরাট কোহলি শেষ পর্যন্ত থামবেন কোথায়? শেষ করবেন ক’টা টেস্ট সেঞ্চুরি করে? নিঃসন্দেহে সে সমস্ত ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা ভাবতেও পারেননি যে, শচীনের ৫১ টেস্ট সেঞ্চুরি দূরে থাক, লাল বলের ক্রিকেটে তিরিশ সেঞ্চুরিতে থেমে যেতে হবে কোহলিকে!
টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাটারের তিরিশখানা সেঞ্চুরি, অবশ্যই অতুলনীয় রেকর্ড। কিন্তু কখনওই তা বিরাটোচিত নয়। আসলে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে টেস্ট ক্রিকেট ভালো যায়নি কোহলির। এটা ঘটনা যে, তার মধ্যবর্তী সময়ে কোভিড এসেছে। খেলা বন্ধ থেকেছে। চলে গিয়েছে প্রায় দুটো বছর, অনেকখানি সময়। ক্রিকেটারের সবচেয়ে বড় সম্পদ বয়স। সেখান থেকে বছর দু’য়েক চলে যাওয়ার অর্থ অপরিসীম ক্ষতি। যাক গে। ২০২০ সালের পর থেকে ৩৭ টেস্টে বিরাট রান করেছেন মাত্র ১৯৯০। ব্যাটিং গড় ৩২.০৯! সেঞ্চুরি সংখ্যা মাত্র ৩! গত অস্ট্রেলিয়া সফরেও একটা সেঞ্চুরি বাদে স্মরণীয় কিছু করতে পারেননি কোহলি। সফরজুড়ে তাঁর রানসংখ্যা মাত্র ১৯০।
আবারও লেখা যাক, বর্তমান টেস্ট বিশ্বে কোহলির থাকা না থাকার প্রভাব অনেক। না হলে তাঁর অবসরের খবর দিন দু’য়েক আগে ফাঁস হওয়ার পর লারা বলতেন না, টেস্ট ক্রিকেটের দরকার কোহলিকে। কিন্তু মুশকিল হল, পরিসংখ্যান বলেও যে একটা বস্তু রয়েছে। ‘স্ট্যাটসবুক’ বলে একটা বস্তু আছে। আসলে আগামী প্রজন্মের কাছে প্রভাব ও পরিসংখ্যান দুটোই কদর পায়। তারা কি টেস্ট ক্রিকেটের অভিজাততম ব্যাটারদের শ্রেণিতে রাখবে কোহলিকে? তারা কি বলবে না, ১২৩ টেস্ট খেলে ৯২৩০ রান করা কোহলি দুর্ধর্ষ ক্রিকেটার ছিলেন বটে, কিন্তু দশ হাজার রানের সরণিতে তিনি ঢুকতে পারেননি। এমনকী পরিসংখ্যানে সমসাময়িকদের মধ্যেও শ্রেষ্ঠতম হতে পারেননি। জো রুট, স্টিভ স্মিথদেরও যে টেস্ট ক্রিকেটে দশ হাজার করে রান আছে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.