ছবি: শিল্টন পালের সোশাল মিডিয়া
প্রসূন বিশ্বাস: রূপং দেহি, জয়ং দেহি, যশো দেহি… মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা থাকে সাধারণ মানুষের। আর মা কি কখনও সন্তানকে ফেরান? শিল্টন পালের জন্য ২০২৫ সাল যেন ‘সব পেয়েছির দেশ’। মোহনবাগানের ‘বাজপাখি’ এই বছর দ্বিতীয়বার বাবা হয়েছেন। নতুন দায়িত্বে ‘ঘরে’ ফিরেছেন। সেই ‘কৃতজ্ঞতা’ নিয়েই শিল্টন মেতে উঠবেন দুর্গোৎসবে। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে জানালেন তাঁর পুজোর পরিকল্পনার কথা।
গত বছর ফুটবলকে বিদায় জানান শিল্টন। সেটাও ছিল পুজোর ঠিক আগের সময়ই। কিছুটা অভিমান কি ছিল তাতে? এই এক বছরে ছবিটা অনেকটাই বুঝি বদলে গিয়েছে। মোহনবাগানের প্রাক্তন গোলকিপার এখন প্রশাসনিক দায়িত্বে, সবুজ-মেরুনের যুব ফুটবল সচিব পদে। আগস্টের শুরুতে দ্বিতীয়বার বাবা হয়েছেন। তিন থেকে চার হয়েছে শিল্টন-সায়নার পরিবার। সব মিলিয়ে এবারের পুজোটা ‘স্পেশাল’। তা এই ‘স্পেশাল’ পুজোয় কী পরিকল্পনা শিল্টনের?
তিনি জানালেন, “পুজোয় প্রথম দুয়েকদিন আমার কিছু উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আছে। এবার কয়েকটা পুজো পরিক্রমাতে বেরনোরও কথা আছে। এর বাইরে নিজের ব্যবসা আছে, রিসর্ট বা রেস্টুরেন্টে যেতে হয়। অন্যান্য বার নবমী-দশমীতে বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সঙ্গে বেরতাম। কলকাতাতেই থাকি, একটু রাতের দিকে ঘুরতে বেরতাম।” তবে এবার ঘরে ছোট্ট সন্তান রয়েছে, তাই হয়তো ঘুরতে বেরনো হবে না। অতএব? মোহনবাগানের হয়ে ২০১৫ সালে আই লিগ জয়ী অধিনায়ক বলছেন, “প্রতি বছর বন্ধুবান্ধব আসে, বাড়িতেই পার্টি হয়। বলা যায়, বাড়িতেই একটা উৎসব হয়। এবারও সেটা হবে। হয়তো আশপাশ একটু ঘুরে দেখলাম।”
তাতে কোনও আক্ষেপ নেই। আর থাকবেই বা কেন? অনেক পরিশ্রম, অনেক আত্মত্যাগের পর এবছর ‘স্পেশাল’ পুজো। শিল্টন বললেন, “২০২৫ আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। তার মধ্যে দ্বিতীয়বার বাবা হওয়া আমার কাছে অন্যতম বড় প্রাপ্তি। এর চেয়ে ভালো অনুভূতি আর কী হতে পারে? এই বছরটা আমার কাছে অন্যরকম। তার মধ্যে ব্যবসায় সাফল্য আছে। কিছু নতুন স্টার্ট আপ শুরু করেছি। মোহনবাগানে ফিরে আসা আছে। সব মিলিয়ে ২০২৫-টা স্পেশাল।”
আরেকটা কারণেও ‘স্পেশাল’। সম্প্রতি সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের তরফ থেকে একটি বিশেষ ফটোশুট হয় শিল্টনকে নিয়ে। সঙ্গে ছিলেন অভিনেত্রী সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়। ফটোশুট এর আগে শিল্টন অনেকবার করেছেন। কিন্তু এবার তিনি যেন অন্য অবতারে আবির্ভূত হলেন। কেমন লাগল রোমান্টিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে? শিল্টন বললেন, “আমি এর আগে অনেক শুটিং করেছি। পুজোতেও ফ্যাশান শুট করেছি। কিন্তু এরকম রোমান্টিক শুটিং প্রথমবার করলাম। দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছিল। লোকে খুব প্রশংসাও করছে।”
কথায় কথায় উঠে এল ছোটবেলার পুজোর কথা। আসলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বদলায়। এখন দায়িত্ব অনেক বেড়েছে, কাজও অনেক। ছোটবেলার পুজো কি মিস করেন? না, ততটাও ঠিক নয়। শিল্টন জানালেন, “আমি তো ১২ বছর বয়স থেকেই বাইরে। টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমিতে ছিলাম। সেখানেও পুজো দেখেছি। দল বেঁধে ঠাকুর দেখতে বেরোতাম। পুজোর ছুটিতে বাড়িতে আসতাম।” আর এখন? তাঁর বক্তব্য, “ছোটবেলার পুজোর থেকে এখনের ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা। আগে মনে হত কোথাও ঘুরতে যাব, কী জামাকাপড় পাব? প্যান্ডেল দেখতে যাব। এখন কী পাব, তার চেয়ে বেশি মনে হয় কী দিতে হবে। ব্যবসার সঙ্গে এতজন কর্মচারী জড়িয়ে। তাদের জন্যও আমার একটা দায়িত্ব আছে। তাঁরাও তো অপেক্ষা করে থাকেন, পুজোটা ভালো কাটবে। তার মধ্যে থেকে সময় বের করা কিন্তু কঠিন কাজ।” সত্যিই শিল্টন এখন ‘বহুরূপে সম্মুখে’। আগে গোলকিপার হিসেবে দলের দুর্গ সামলাতেন। এখন বহু দায়িত্ব একা হাতে সামলান। বাবা, স্বামী, প্রশাসক, ব্যবসায়ী- শিল্টন বহু হাতে এখনও ‘গোলকিপিং’ করে চলেছেন। তারই ফাঁকে বচ্ছরকার দিনে মায়ের সামনে জানাবেন মনের কথা। চাইবেন এগিয়ে চলার শক্তি। যে শক্তি বিগত বছরগুলিতে তাঁকে এগিয়ে চলার সাহস দিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.