দুলাল দে: মোহনবাগানকে যেবার আই লিগ দিয়েছিলেন, সেই ২০১৯-এর শুরুতে সবুজ-মেরুনে কিবু ভিকুনার ইনিংসটা মনে আছে? শুরুতে কিছুতেই যেন গ্রিপ পাচ্ছিলেন না। সেই সময় মুম্বইয়ে রিলায়েন্স আকাডেমিতে সহকারী কোচের ভূমিকায় ছিলেন জোস ব্যারেটো। ছুটি কাটাতে কিছুদিনের জন্য কলকাতায় এসেছিলেন। কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে কিবু ভিকুনার সঙ্গে প্র্যাকটিসে নেমে পড়েছিলেন। কী আশ্চর্য। তারপর থেকেই বদলে যায় কিবুর মোহনবাগান। সেই ব্যারেটো এই মুহূর্তে সুদূর ব্রাজিলের পোর্তো আলেগ্রেতে। সেখান থেকে ডুরান্ড কাপ ফাইনালের পূর্ব মুহূর্তে ফোনে বলছিলেন, “কিছু কিছু কোচ রয়েছেন, যাঁদের বাইরে থেকে বোঝা যায় না, তাঁরা ভিতরে ভিতরে কতটা অ্যাগ্রেসিভ। কিবু সেরকম একজন কোচ। তবে ভীষণ ভালো ট্যাকটিসিয়ান। প্রতিপক্ষ দেখে নিজের মতো করে স্ট্যাটেজি তৈরি করেন। দেখলেন না, ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোকে কীভাবে আটকে দিলেন।”
ব্যারেটো হয়তো এদিন বললেন। কিন্তু সেমিফাইনালে ইস্টবেঙ্গল ম্যাচের আগেরদিন প্রেস কনফারেন্সে, কিবু যেভাবে প্রবল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে যাবতীয় ট্যাকটিক্যাল প্রশ্নের মোকাবিলা করছিলেন, তখনই একটা অন্যরকম ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। এদিনও নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে খেলার আগে সাংবাদিক সম্মেলনে বেশ ফুরফুরে মেজাজে ডায়মন্ড হারবার কোচ।
আগেরদিন নিজেদের জন্য ডুরান্ড কর্তৃপক্ষ থেকে ২৫ হাজার টিকিট তুলেছিলেন ডায়মন্ড হারবার কর্তারা। একটা সময় ভাবছিলেন, ২৫ হাজার টিকিট তো তুললেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব টিকিট সমর্থকদের মাঝে বন্টন করতে পারবেন তো? শুক্রবার ফাইনাল ম্যাচের টিকিট ঘিরে ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে যেভাবে ফোন এসেছে, তাতে সবাইকে টিকিট বন্টন করতে গিয়ে বেশ বেসামাল অবস্থা আকাশের। ডুরান্ড জয়ী দল পাবে ১.২১ কোটি টাকা।
যেবার মোহনবাগানের হয়ে আই লিগ জিতেছিলেন, সেই মরশুমেই ডুরান্ড ফাইনালে উঠেও শেষ পর্যন্ত গোকুলাম কেরালার কাছে পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছিল কিবু ভিকুনাকে। ফের সুযোগ এসেছে ডুরান্ড জয়ের। আর সেই পুরনো ইতিহাস সামনে ভেসে উঠতেই কিবু বলছেন, “সেবার আমরা সবাই ছিলাম, আই লিগের দল। কিন্তু এবার সামনে প্রতিপক্ষ আইএসএলের দল। ফলে লড়াইটা সহজ নয়। তবে আরেকদিক থেকে সুবিধাও আছে। মোহনবাগানে ট্রফি জেতার চাপ রয়েছে। সেখানে ডায়মন্ড হারবারে অনেক খোলা মনে করা যায়। সমর্থকদের তরফে সেই প্রবল চাপটা নেই।”
প্রতিপক্ষ নর্থইস্ট শুধুই আইএসএলের দল নয়। গতবার আইএসএল তৃতীয় স্থান পেয়েছিল। তার উপর দলে রয়েছে আলাদিনের মতো প্রবল গোলক্ষুধা থাকা উইঙ্গার। যে এখনও পর্যন্ত ৭ গোল করে ডুরান্ডের সর্বোচ্চ গোলদাতা। গত মরশুমের আইএসএলে ২৩ গোল করে ছিলেন সর্বোচ্চ গোলদাতা। যা এক মরশুমে সর্বোচ্চ গোল করার আইএসএলের ইতিহাসে রেকর্ড। ফলে এ হেন ফরোয়ার্ড যদি প্রতিপক্ষ দলে থাকে, তাহলে ডায়মন্ডহারবার কোচ নিশ্চিন্তে থাকেন কী করে? এদিন প্র্যাকটিসের আগে কিবু সাংবাদিক সম্মেলনে আলাদিন নিয়ে বলছিলেন, “দুর্দান্ত গোলস্কোরার। ফলে আমাদের নজর ওর উপরে থাকবেই। আলাদিনকে কীভাবে আটকাতে হবে, তা নিয়ে আমাদের পরিকল্পনাও হয়েছে। তবে নর্থ-ইস্টে একমাত্র আলাদিনই ভালো ফুটবলার নন। ওদের ডিফেন্ডার মাইকেল জাবাকো দারুণ ফর্মে রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের গোল পেতে গেলে জাবাকোকে পরাস্ত করতে হবে। সঙ্গে নর্থ-ইস্টের ভারতীয় ফুটবলার রিক্রুটও দারুণ হয়েছে। ওদের গোলকিপার গুরমিত সিংও আপাতত দেশের অন্যতম সেরা গোলকিপার।”
ইস্টবেঙ্গলকে হারনোর পর থেকেই লাল-হলুদের বিভিন্ন অংশ থেকে ম্যাচের ফল নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে সেই প্রসঙ্গে এদিন সাংবাদিক সম্মলনে। উঠতেই বিরক্ত কিবু বলছিলেন, “যে বিষয়গুলি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, সেগুলি নিয়ে আমার কোনও আগ্রহ নেই। আমি শুধু ভাবছি, ফাইনালে নর্থ-ইস্টের বিরুদ্ধে কীভাবে প্রস্তুতি নেব। সেটাই একমাত্র আমার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তবে একেবারে শেষ প্রান্তে এসে ডায়মন্ডহারবার কোচ বলেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে আমাকে খোলা মনে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন, তাতে ডায়মন্ড হারবারে নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারছি। এটা সত্যিই দলের জন্য ভালো দিক।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.