দুলাল দে: ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে পত্রবোমা ফিফার। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় ফুটবলে যে বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থা চলছে, তা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে বিশ্ব ফুটবল নিয়ামক সংস্থাও। এআইএফএফ-কে চিঠি লিখে ফিফা সংবিধান তৈরি করে নির্বাচনের সময়সীমা পর্যন্ত বেঁধে দিয়েছে। আর সেটা কার্যকরী না হলে ফের নির্বাসনের খাঁড়া পর্যন্ত নেমে আসতে পারে ভারতীয় ফুটবলের জন্য।
এর আগে ২০২২ সালে ফিফা নির্বাসিত করেছিল ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে। সেই নির্বাসন তোলার জন্য দ্রুত নির্বাচন করে একটা কমিটি তৈরি করা হয়েছিল। যার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন বর্তমান এআইএফএফ প্রেসিডেন্ট কল্যাণ চৌবে। যদিও তখনই ঠিক হয়েছিল, সংবিধান তৈরি করে নতুন করে নির্বাচন হবে। সেটা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছিল। তার শুনানি শেষ, দ্রুত তার রায়দানও করা হতে পারে।
কিন্তু ফিফার পর্যবেক্ষণ, ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের যারা ক্ষমতায় রয়েছে, তারা কোনও ভাবেই এই নতুন সংবিধান তৈরির জন্য উদ্যোগ নেয়নি। এমনকী নির্বাচন করা নিয়েও আশ্চর্যজনকভাবে ‘নীরব’ তারা। এই পরিস্থিতি দেখে দু’পাতার চিঠির ছত্রে ছত্রে ফিফা ফেডারেশনকে ভর্ৎসনা করেছে। বিশ্ব ফুটবল নিয়ামক সংস্থার বক্তব্য, ভারতীয় ফুটবলের মার্কেটিং শূন্য, কার্যত অন্ধকারে থাকার মতো অবস্থা, যে দেশে লিগ হবে কি না পর্যন্ত ঠিক নেই। সেই সঙ্গে নির্বাচন করা নিয়েও কোনও পদক্ষেপ নেই। এই দীর্ঘ অচলাবস্থার ফলে প্রশাসনিক এবং পরিচালনাগত সংকট তৈরি হয়েছে। নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ক্লাব ও ফুটবলাররা অন্ধকারে, আর্থিক চুক্তি কী হবে, কেউ জানে না। যা ভারতীয় ফুটবলের সার্বিক অবস্থা, মূলত আইএসএলের ক্লাবগুলোর বিরাটভাবে ক্ষতি করছে। আন্তর্জাতিক ফুটবলারের যে সংগঠন অর্থাৎ FIFPRO, তারা পর্যন্ত ফিফাকে চিঠি লিখে জানিয়েছে, ভারতে ফুটবলাররা বেকার, কর্মহীন। কারণ ভারতের ফুটবল লিগটাই হবে কি না কোনও ঠিক নেই।
ফিফার চিঠিতে স্পষ্ট বলা আছে, ‘সংশোধিত সংবিধান তৈরি ও তার প্রয়োগে এআইএফএফের ধারাবাহিক ব্যর্থতা নিয়ে আমরা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন।’ ফিফা ও এএফসি’র তরফ থেকে তিনটি পয়েন্টে বলা হয়েছে,
১। ভারতের মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুসারে সংশোধিত সংবিধান তৈরি করতে হবে।
২। ফিফা ও এএফসি’র নিয়মনীতি অনুসারে এআইএফএফের সংশোধিত সংবিধান তৈরি করতে হবে।
৩। এআইএফএফের পরবর্তী সাধারণ সভায় এই সংবিধানকে অনুমোদিত করতে হবে।
আর এই পুরো প্রক্রিয়াটা করতে হবে চলতি বছরের ৩০ অক্টোবরের মধ্যে। আর এই সময়সীমার মধ্যে ব্যর্থ হলে ফিফা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। আর সেটা যে নির্বাসন, সেটাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ফিফা জানে যে, ভারতে সম্প্রতি ক্রীড়া বিল পাশ হয়েছে। সেক্ষেত্রে তাদের নির্দেশ, ক্রীড়া বিল, ফিফা ও এএফসি-র নিয়ম অনুসারে দ্রুত নতুন সংবিধান তৈরি করতে হবে। তার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে ফিফা। চলতি বছরের ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটিতে সেই সংবিধান পাশ করিয়ে নির্বাচনের দিকে এগোতে হবে। কিন্তু এখানে একটা সাবধানতাও আছে। যদি ফিফা, ক্রীড়া বিল ও এএফসি সম্মিলিত নিয়মের বাইরে, তৃতীয় পক্ষ এর মধ্যে হস্তক্ষেপ করে, তাহলে ফের নির্বাসন দিতে পারে ফিফা।
অভিজ্ঞমহলের ধারণা, ফিফার এই পত্রবোমায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়লেন কল্যাণ চৌবে। কারণ, কেউ যদি একটি টার্মে কার্যকরী কমিটিতে না থাকে, তাহলে প্রেসিডেন্ট পদে তিনি লড়তে পারবেন না। কল্যাণ প্রেসিডেন্ট আছেন তিন বছর। অর্থাৎ এখনই যদি নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যায়, তাহলে চার বছরের পূর্ণ মেয়াদ তিনি কাটাতে পারবেন না। ফলে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে পারবেন না। কিন্তু যদি সংবিধান তৈরি বা নির্বাচন একবছর পিছিয়ে যায়, তাহলে কল্যাণ ভোটে লড়তে পারবেন। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, সংবিধান তৈরি বা নির্বাচন করা নিয়ে ফেডারেশনের দীর্ঘসূত্রিতার নেপথ্যে কল্যাণ চৌবের ভূমিকাও রয়েছে। কিন্তু ফিফার চিঠিতে বেকায়দায় পড়লেন তিনি।
বুধবার বিকেলেই ফেডারেশন ও এফএসডিএলের একটি আলোচনা রয়েছে। কারণ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি রয়েছে। যেখানে আইএসএল আয়োজন করা নিয়ে কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, সেই নিয়ে জানাতে হবে। মোটামুটি যে খসড়া তৈরি হয়েছে, তাতে ২৪ অক্টোবর থেকে আইএসএল শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। অস্থায়ীভাবে চুক্তি বাড়িয়ে ডিসেম্বর থেকে মার্চের জন্য ১২.৫ কোটি টাকাও দিয়ে দেবে এফএসডিএল। তার আগে ফিফার চিঠিতে শোরগোল ভারতীয় ফুটবল মহলে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.