দুলাল দে: যা ভাবা হয়েছিল, সেরকমটাই হতে চলেছে শেষ পর্যন্ত। ফেডারেশনের নির্বাচনের পর নতুন কমিটি এলে তাদের সঙ্গেই চুক্তি নবীকরণ নিয়ে আলোচনায় বসবে এফএসডিএল। কিন্তু তার আগে ভারতীয় ফুটবলের উদ্ভূত সঙ্কট মেটাতে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে মিটিংয়ে এফএসডিএল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিল, বর্তমান কমিটির সঙ্গে এই মুহূর্তে চুক্তি নবীকরণ নিয়ে কিছুই করা হচ্ছে না। তবে ভারতীয় ফুটবলের সমস্যার কথা ভেবে, তারা এই মরশুমের জন্য আইএসএল করবে। কিন্তু ঠিক কবে থেকে শুরু করা হবে, তা আইএসএলের ক্লাবগুলির সঙ্গে আলোচনার পরই ঠিক করবে এফএসডিএল। আশা করা হচ্ছে, অক্টোবরের শেষ কিংবা নভেম্বরের শুরুর দিকে হতে পারে আইএসএলের প্রথম ম্যাচ। কিন্তু এই মরশুমে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন ইন্টার কাশী আইএসএলে খেলবে কি না, এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
বেশ কিছুদিন ধরেই ভারতীয় ফুটবল সমর্থকরা চিন্তায় ছিলেন, এই মরশুমের আইএসএল কি আদৌ হবে? বিশেষ করে কিছুদিন আগে সুপ্রিম কোর্ট থেকে জানানো হয়েছিল, চুক্তি নবীকরণ নিয়ে এফএসডিএলের সঙ্গে কোনও মিটিংই করতে পারবে না ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন। যে চুক্তি নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর গত তিন বছর ধরে কিছু করতে পারেনি, শেষ মুহূর্তে ফেডারেশন সেই সমস্যা মেটাবে এটা কেউই আশা করতে পারেনি। বরং বিষয়টি বিচারাধীন বিষয় বলে ফেডারেশন কর্তাদের আইএসএলের প্রসঙ্গ সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া খুবই সুবিধের হচ্ছিল।
এরমধ্যেই আইএসএলের ক্লাবগুলি এফএসডিএলের সঙ্গে মিটিংয়ে বসে জানতে চায়, আইএসএল নিয়ে তাদের ভাবনা কী হবে? সরকারি ভাবে এফএসডিএলের তরফে কিছু না বলা হলেও বেসরকারি ভাবে প্রত্যেকটি ক্লাবকেই এফএসডিএলের তরফে জানানো হচ্ছিল, দল তৈরি করতে। কারণ, এই মরশুমের আইএসএলটা তারা শেষ পর্যন্ত হয়তো চালিয়ে দেবে।
ফেডারেশনের সঙ্গে এফএসডিএলের চুক্তি রয়েছে ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু আইএসএল শেষ হবে এপ্রিলে। তাহলে চুক্তি ছাড়া ডিসেম্বরের পর এফএসডিএল আইএসএল চালাবে কী করে? তখন বেসরকারিভাবে শোনা যায়, এফএসডিএল এবং ক্লাবগুলির একসঙ্গে আলোচনায় ঠিক হয়েছে, আদালতের সমস্যা না হলে শেষ পর্যন্ত এই মরশুমের আইএসএলটা চালিয়ে দেবে এফএসডিএল। কিন্তু চুক্তি নবীকরণের কী হবে?
যতদূর জানা যায়, কল্যাণ চৌবের বর্তমান কমিটির উপর এফএসডিএলের খুব একটা আস্থা নেই। কারণ, যে কমিটি গত তিন বছর ধরে চুক্তির কোনও সমাধা করতে পারেনি, তারা যে আর কিছুই করতে পারবে না, বুঝে যায় এফএসডিএল। তাহলে উপায়? ফেডারেশনের নতুন সংবিধান নিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই রায় দিতে পারে সুপ্রিম কোর্ট। ভারতীয় ফুটবলের সবাই তাকিয়ে আছেন সেই সংবিধানের দিকেই। আর তারপরেই ফেডারেশেনর কার্যকরী কমিটিতে তা পাস হয়ে গেলে এক মাস পরেই হবে নির্বাচন। এফএসডিএল চাইছে, নির্বাচিত নতুন কমিটির সঙ্গেই চুক্তি নবীকরণ নিয়ে কথা বলতে। তার মধ্যে এপ্রিল পর্যন্ত যদি তারা আইএসএলটা চালু রাখে, তাহলে দেশের এক নম্বর লিগও হবে, পাশাপাশি চুক্তি নবীকরণ নিয়ে ফেডারেশনের নতুন কমিটির সঙ্গে কথা বলার সুযোগও পাবে তারা। সেই কারণেই ক্লাবগুলোকে বেসরকারিভাবে তৈরি থাকার জন্য বলার পাশাপাশি, জাতীয় রেফারিদেরও বেসরকারি ভাবে জানিয়ে রাখা হয়, ফিটনেস ঠিক রেখে অক্টোবরের শেষ অথবা নভেম্বরের শুরুতে আইএসএলের ম্যাচ খেলানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে। সেভাবেই পরিকল্পনা রয়েছে।
সব কিছুই আটকে ছিল সুপ্রিম কোর্টের জন্য। যে মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্ট থেকে ফেডারেশনকে জানানো হয়, এফএসডিএলের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমস্যার সমাধান করতে, ফেডারেশন জানায়, তারা রবিবার রাতে অথবা সোমবার সকালে এফএসডিএলের সঙ্গে তারা আলোচনায় বসতে চায়। সেই মতো সোমবার সকালে দু’পক্ষের আলোচনার পর এফএসডিএল জানিয়ে দেয়, এই মরশুমের লিগটা তারা শেষ করে দেবে। চেষ্টা হবে মার্চ মাসের মধ্যে শেষ করতে। ২৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টে এই প্রসঙ্গে যে শুনানি রয়েছে, সেখানেই এফএসডিএল এবং ফেডারেশনের পক্ষ থেকে জানানো হবে এই কথা। সঙ্গে এফএসডিএল এদিন মিটিংয়ে জানিয়ে দেয়, চুক্তি নবীকরণ নিয়ে পাশাপাশি আলোচনা চলবে। কারণ, পরের মরশুমে আইএসএল শুরু করার আগে আলোচনার জন্য দু’পক্ষই অনেকটা সময় পেয়ে গেল।
তবে এরমধ্যেই আবার আই লিগের দলগুলি একযোগে চিঠি দিয়েছে ফেডারেশনকে। তারা জানিয়েছে, আইএসএলের চ্যাম্পিয়নশিপ এবং অবনমন দুটোই এই মুহূর্তে চালু করতে হবে। তবে এবার যেহেতু চুক্তির বাইরে গিয়ে আইএসএলে করবে এফএসডিএল, তাই আই লিগের ক্লাবগুলির বক্তব্য আদৌ তারা শুনবে কি না, যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.