দুলাল দে: রেফারিং করতে গেলে সবার আগে ভালোভাবে জানতে হবে ফিফা এবং এএফসি নির্দেশিত ফুটবলের নিয়ম কানুন। কিন্তু সেই বইগুলি যদি ইংরেজিতে হয়, তাহলে বাংলা মিডিয়ামে পড়া একজন মাধ্যমিক পাশ করা ছেলের পক্ষে আদৌ কি সম্ভব, ফুটবলের আইনের মারপ্যাঁচ ভালোভাবে রপ্ত করা? ভারতীয় ফুটবলের নিয়ম অনুযায়ী, রেফারি হতে হলে কম পক্ষে মাধ্যমিক পাশ আর ১৮ বছর বয়স হতে হবে। খেলাতে পারবেন ৪৫ বছর পর্যন্ত। তবে এই নিয়মটা জাতীয় ফুটবলে রেফারিং করার সময় প্রযোজ্য। কলকাতা ফুটবলে ৪৫ বছর পার করেও খেলাতে পারেন একজন রেফারি। সেক্ষেত্রে কলকাতা রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনের অনুমোদন লাগবে। একই সঙ্গে ফিটনেস টেস্টে পাস করতে হবে।
এই সবই রেফারিং করার জন্য যোগ্যতামান হলেও পরবর্তীক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, মাধ্যমিক পাশ করা একজনের পক্ষে ফুটবল আইনের কঠিন নিয়মগুলি রপ্ত করা কিছুটা সমস্যার হয়ে যাচ্ছে, যা পরবর্তী ক্ষেত্রে ম্যাচে রেফারিং করার সময় প্রতিফলিত হচ্ছে। একইসঙ্গে ম্যাচ শেষে রিপোর্ট তৈরির করা ক্ষেত্রেও নানা সমস্যা। ফলে শুরু থেকেই নানা সমস্যা নিয়েই চলছেন বিভিন্ন রেফারিরা। আর রেফারিদের এই সমস্যা মেটানোর জন্য অভিনব পরিকল্পনা করেছে আইএফএ, যা এর আগে কখনও দেখা যায়নি। আইএফএ-র রেফারিজ এলিট অ্যাকাডেমির দশজন রেফারিকে ইংরেজি এবং কম্পিউটার শিক্ষার জন্য গোলপার্কে রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারে ভর্তি করে দেওয়া হয়েছে। যাতে শুরু থেকে ইংরাজি ভাষা নিয়ে সেভাবে সমস্যায় না পড়েন রেফারিরা। সঙ্গে কম্পিউটারের সম্যক জান থাকলে রিপোর্ট এবং ম্যাচ বিশ্লেষণ লিপিবদ্ধ করতেও সমস্যা হবে না।
রেফারিদের মান উন্নয়নের জন্য তিন মাস আগে এলিট রেফারি অ্যাকাডেমি করার সিদ্ধান্ত নেয় আইএফএ। যেখানে নির্দিষ্ট ফিস নিয়ে অভিজ্ঞ রেফারি দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আইএফএ-র অ্যাকাডেমিতে সুযোগ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন প্রায় ৪০-৫০ জন জুনিয়র রেফারি। আইএফএ-তে রেফারিদের শিক্ষকের ভূমিকায় থাকায় তিন অভিজ্ঞ রেফারি আবেদনকারীদের মধ্য থেকে বেছে নিয়েছেন দশজন রেফারিকে। এমনিতে রেফারি হওয়ার জন্য ক্লাস টেন পাস হলেও, আইএফএ অ্যাকাডেমিতে সুযোগ পাওয়ার জন্য যোগ্যতামান হচ্ছে দ্বাদশ শ্রেণি পাস। যাতে শিক্ষাগতভাবে একটু এগিয়ে থাকেন রেফারিরা।
অ্যাকাডেমিতে যে তিনজন সিনিয়র রেফারি প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, তাঁরা হলেন, প্রদীপ নাগ, সুব্রত দাস এবং পীযূষ বিশ্বাস। সপ্তাহে তিনদিন করে আইএফএ অফিসে এই শিক্ষার্থী রেফারিদের থিওরি ক্লাস নেন প্রদীপ নাগরা। এর বাইরে রয়েছে ফিটনেস ট্রেনিং। আর তার বাইরে রামকৃষ্ণ মিশনে গিয়ে স্পোকেন ইংলিশ আর কম্পিউটার শেখা। যেখানে শেখানো হচ্ছে ওয়ার্ড, অফিস, এক্সেল এগুলি। যাতে রেফারিং করতে গিয়ে প্রাথমিক কাজগুলি ঠিকভাবে করতে কোনও অসুবিধা না হয়। তবে আইএফএর অ্যাকাডেমির পাশাপাশি যদি কলকাতা রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনে কোনও ক্লাস হয়, সেখানেও যোগ দেন এই দশজন রেফারি। কলকাতা লিগে ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বও দেওয়া হচ্ছে এই রেফারিদের। যেদিন এই অ্যাকাডেমির রেফারিরা ম্যাচ পরিচালনা করেন, সেদিন মাঠে গ্যালারিতে উপস্থিত থাকেন প্রশিক্ষকরা। পরের দিন আইএফএর থিওরি ক্লাসে আগেরদিনের ম্যাচে ভুলভ্রান্তি নিয়ে পর্যালোচনা হয়। সেখানেই শেখানো হয়, ম্যাচ পরিচালনা করতে গিয়ে কী কী ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এক বছরের এই কোর্সের জন্য সুযোগ পাওয়া প্রত্যেক শিক্ষার্থীর থেকে ২৫ হাজার টাকা করে নিচ্ছে আইএফএ। শিক্ষান্তে সার্টিফিকেট।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.