Advertisement
Advertisement
Carlo Ancelotti

আন্সেলোত্তিই কি ব্রাজিলের প্রথম বিদেশি কোচ! কী বলছে ইতিহাস?

কেন তাঁকেই ব্রাজিল ফুটবল দলের প্রথম বিদেশি কোচ বলা হচ্ছে?

Is Carlo Ancelotti Brazil's first foreign coach? What does history say?
Published by: Prasenjit Dutta
  • Posted:May 28, 2025 2:52 pm
  • Updated:May 28, 2025 3:59 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সমস্ত জল্পনাকে সত্যি করে ব্রাজিলের কোচ হয়েছেন কার্লো আন্সেলোত্তি (Carlo Ancelotti)। রিও ডি জেনেইরোতে পা রেখেছেন তিনি। ব্রাজিলে পা রাখার পরেই একেবারে ‘অ্যাক্টিভ মুডে’ পাওয়া গিয়েছে তাঁকে। ইতিমধ্যেই আসন্ন বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের দু’টি ম্যাচের জন্য ব্রাজিলের ২৫ জনের দল ঘোষণা করে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু প্রশ্ন হল, আন্সেলোত্তি কি ব্রাজিলের জাতীয় ফুটবল দলের প্রথম বিদেশি কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিলেন? ব্রাজিল ফুটবলের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, ইতালির এই বর্ষীয়ান কোচের আগেও আরও তিন বিদেশি কোচ তাদের জাতীয় ফুটবল দলের দায়িত্ব সামলেছেন। তাহলে কেন আন্সেলোত্তিকেই ব্রাজিল ফুটবল দলের প্রথম বিদেশি কোচ বলা হচ্ছে?

Advertisement

এখন পর্যন্ত ব্রাজিল ফুটবল দলের দায়িত্ব সামলেছেন ৮৪ জন কোচ। এর মধ্যে স্থায়ী এবং অস্থায়ী কোচও ছিলেন। ৮৫তম কোচের দায়িত্ব নিতে চলেছেন আন্সেলোত্তি। যদিও আন্সেলোত্তির আগেও ব্রাজিল ফুটবল দলে তিনজন বিদেশি কোচ ছিলেন। যদিও তাঁরা এখন বিস্মৃতির আড়ালে। কেন তাঁদের মনে রাখেনি ইতিহাস? প্রথমত, তাঁরা কেউই দীর্ঘকালীন কোচ ছিলেন না। দ্বিতীয় কারণটা অবশ্যই সাফল্য। ব্রাজিল পাঁচবার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দেশীয় কোচের অধীনেই। যদিও ব্রাজিল দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিশেষ ভালো নয়। ‘সেলেসাও’রা শেষবার বিশ্বকাপ জিতেছে সেই ২০০২ সালে। সেই কারণে কোনও অ-ব্রাজিলিয়ানকে জাতীয় দলের দায়িত্ব দেওয়া হোক বলে দাবি উঠেছিল। অবশেষে সেই দাবিকে মান্যতা দিয়ে ব্রাজিল ফুটবল সংস্থা ‘অ-ব্রাজিলীয়’ আন্সেলোত্তিকে কোচ করার কথা ঘোষণা করে।

একটু ফ্ল্যাশব্যাকে গেলে দেখা যাবে ১৯২৫, ১৯৪৪, ১৯৬৫ – এই তিন বছর কোচ হিসেবে ব্রাজিলের দায়িত্ব সামলেছিলেন তিন বিদেশি। ১৯২৫-এ ছিলেন উরুগুয়ান কোচ র‍্যামন প্লেটেরো, ১৯৪৪-এ পর্তুগিজ কোচ জোরেকা গোমস, ১৯৬৫-তে আর্জেন্টিনীয় ফিলপো নুনেজ।

র‍্যামন প্লেটেরো (১৯২৫)
দক্ষিণ উরুগুয়ের ছোট্ট শহর ক্যানেলোনে জন্ম প্লেটেরোর। কোচ হিসেবে দায়িত্ব সামলেছিলেন ফ্লেমেঙ্গো, ভাস্কো দা গামা রেগাতাস, প্যালেস্ট্রা ইতালিয়া (বর্তমানে পালমেইরাস) এবং সাও পাওলোর। ব্রাজিলে যাওয়ার আগে তিনি উরুগুয়ের জাতীয় দলেরও কোচ ছিলেন (১৯১৭-১৯১৯)। বলা বাহুল্যই যে, ফুটবল ক্লাব সাও পাওলোতে সাফল্যই ব্রাজিল ফুটবল দলের কোচ হিসেবে তাঁর জন্য জায়গা খুলে দেয়। ১৯২৫ সালে দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য ব্রাজিল ফুটবল দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। দু’টি জয়, একটি ড্র এবং একটি ম্যাচে হেরে প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে ব্রাজিল। শিরোপা জেতে আর্জেন্টিনা। উল্লেখ্য, ব্রাজিল দলের মূল কোচ জোয়াকিম গুইমারেসের সঙ্গে দায়িত্ব ভাগ করেছিলেন এহেন প্লেটেরো।

জোরেকা (১৯৪৪)
পর্তুগিজ কোচ জোরেকা ১৯০৪ সালে লিসবনে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও এরপর ব্রাজিলে চলে আসেন তিনি। ১৯৪৩ সালে সাও পাওলো ফুটবল দলের কোচের দায়িত্ব নেওয়ার আগে জোরেকা পেশায় একজন রেফারি এবং সাংবাদিক ছিলেন। এর ঠিক এক বছর পর তিনি উরুগুয়ের বিরুদ্ধে দু’টি ম্যাচে ব্রাজিলের কোচ ছিলেন। সেই দু’টি ম্যাচে ৬-১ এবং ৪-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে ব্রাজিল। যদিও এর পিছনে সুন্দর একটা গল্পও রয়েছে। সাও পাওলোর দায়িত্ব নিয়ে তিনি প্রথম বছরেই ক্লাবকে কাম্পিওনাতো পাওলিস্তা (ফুটবল লিগ) জিতিয়েছিলেন। জোরেকার নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ব্রাজিল দলের মূল কোচ তখন ফ্লাবিও কস্তা। তাঁর সঙ্গেই জোরেকাকে ব্রাজিলের ডাগআউটে দাঁড়ানোর জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। উরুগুয়ের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচ পর তিনি ফের সাও পাওলো ফিরে যান। ১৯৪৫ এবং ১৯৪৭ সালে ব্রাজিলের শীর্ষ লিগ জয়ী হয় সাও পাওলো। এরপর ১৯৪৯ সালে করিন্থিয়ান্স পলিস্তা স্পোর্ট ক্লাবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন জোরেকা।

ফিলপো নুনেজ (১৯৬৫)
ব্রাজিল জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা একমাত্র আর্জেন্টিনীয় ফিলপো নুনেজ। ব্রাজিলে আসার আগে তিনি লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দলে কোচিং করিয়েছিলেন। ১৯৫৫ সালে তাঁর প্রথম ক্লাব ছিল সাও বেন্টো-আরএস। তাছাড়াও তিনি কোচ হিসেবে দায়িত্ব সামলেছিলেন ব্রাজিলিয়ান পেশাদার ফুটবল ক্লাব করিন্থিয়ান্স এবং পালমেইরাসেও। ১৯৬৫ সালে ব্রাজিলের তখন নিয়মিত কোচ ছিলেন ভিসেন্তে ফিওলা। পেলে তাঁর অধীনেই ব্রাজিল দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। যাই হোক, ৬৫-তে কোনও কারণে উরুগুয়ের বিপক্ষে দু’টি প্রীতি ম্যাচে কোচিং করাতে পারেননি ভিসেন্তে। সেই দু’টি প্রীতি ম্যাচের একটিতে ব্রাজিলের কোচ হিসেবে ডাগআউটে দাঁড়িয়েছিলেন নুনেজ। বেলো হরিজন্তের মিনেইরাও স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক এই প্রীতি ম্যাচে রিনান্ডো, টুপাজিনহো এবং জার্মানিওর গোলে ব্রাজিল ৩-০ গোলে জিতেছিল।

বিষয় হল, এই তিন কোচই আমন্ত্রিত কোচ হিসেবে ব্রাজিল ফুটবল দলের আংশিক সময়ের জন্য দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সেই কারণেই বর্ষীয়ান ইতালীয় কোচ কার্লো আন্সেলোত্তিকেই (Carlo Ancelotti) বলা হচ্ছে ব্রাজিলের জাতীয় ফুটবল দলের প্রথম বিদেশি কোচ। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এমন দাবিই আপাতত করা হচ্ছে।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement