দুলাল দে: অবশেষে এপ্রিল মাসের বকেয়া টাকা ফেডারেশনকে পাঠাল এফএসডিএল। চুক্তিমতো ৫০ কোটি টাকা চারটে কিস্তিতে ফেডারেশনকে দেওয়ার কথা এফএসডিএলের। শর্ত অনুযায়ী গত এপ্রিলে একটা কিস্তি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সময় মতো এফএসডিএল সেই কিস্তির টাকা না দেওয়ায় আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল ভারতীয় ফুটবলে। অবশেষে সেই বকেয়া কিস্তির টাকা পেল ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন। তাতে অবশ্য সমস্যা খুব একটা লাঘব হল না। অর্থ সমস্যাতে জাতীয় কোচের পদে ভালো বিদেশি কোচ নেওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
সাধারণত, যে কোনও সংস্থায় বাজেট তৈরি হয় এপ্রিল থেকে মার্চ পর্যন্ত। অদ্ভুতভাবে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের বাজেট তৈরি হয়েছে ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিছুদিন আগে ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটির সভায় পাশ করিয়েও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন মার্চের বদলে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাজেট ঠিক হল? সভাপতি কল্যাণ চৌবে মিটিংয়ে জানিয়েছেন, এফএসডিএলের সঙ্গে ডিসেম্বর পর্যন্ত চুক্তি রয়েছে। চুক্তি নতুনভাবে হওয়ার পর জানুয়ারি থেকে ফের বাজেট ঠিক হবে। অর্থাৎ, নতুন কোনও বিদেশি কোচ নিয়োগ করতে হলে জানুয়ারি থেকে তাঁকে বেতন দেবেন কোন চুক্তিতে? এদিকে, সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন কোচ নিতেই হবে। এসব দেখে শুনেই ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবের দুই পরামর্শদাতা, প্রাক্তন দুই কোচ আর্মান্দো কোলাসো এবং বিমল ঘোষ কল্যাণ চৌবেকে পরামর্শ দিয়েছেন, জাতীয় কোচের পদে ভারতীয় কোচকে বসাতে। আর এক্ষেত্রে তাঁদের প্রথম পছন্দ অবশ্যই খালিদ জামিল।
খালিদকে পছন্দ করার একটাই কারণ, গত চার বছর ধরে দেশের সর্বোচ্চ লিগ, আইএসএলে হেডকোচের পদে রয়েছেন তিনি। কারণ, কোনও ভারতীয় কোচকে যদি জাতীয় কোচের পদে বসাতেই হয়, তাহলে যে নামগুলো ফেডারেশন কর্তাদের মাথায় আসছে, তাতে খালিদ জামিল আর সঞ্জয় সেন ছাড়া আর কোনও ভারতীয় কোচের নাম নেই! পাশাপাশি কথা উঠছে, গত পাঁচ বছরে সঞ্জয় সেনের সন্তোষ ট্রফি জেতা ছাড়া কোচ হিসেবে কোনও সাফল্য নেই। আইএসএলে ছিলেন হাবাসের সহকারী হিসেবে। কোনও ক্লাবেও হেডকোচ ছিলেন না। আর মোহনবাগানের হয়ে আই লিগ জিতেছেন দশ বছর আগে ! সেক্ষেত্রে কথা উঠছে, সন্তোষ ট্রফি জেতা কোচ কীভাবে সিনিয়র জাতীয় দলের কোচ হতে পারেন? ভারতীয় ফুটবল এই মুহূর্তে ১৩৩-এ। সঞ্জয় সেনের হাত ধরে কি ভারতীয় ফুটবল এগোবে?
যদি এই জায়গা থেকে ভারতীয় ফুটবলকে টেনে তুলতে হয়, তাহলে সবারই ইচ্ছে, ভালো বিদেশি কোচের হাতে ভারতীয় ফুটবলকে দিয়ে নতুন করে পরিকল্পনা করা। কিন্তু ভালো বিদেশি কোচকে এই মুহূর্তে ভালো বেতন দেওয়ার ক্ষমতা নেই ফেডারেশনের। ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনওমতে জাতীয় কোচের পদে কাউকে রাখা। কারণ, ফেডারেশন কর্তারাও জানেন না, ডিসেম্বরের পর ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ কী? তাছাড়া ফেডারেশনের অন্দরেও মোটামুটিভাবে নির্বাচনের দামামা বেজে গিয়েছে।
সোমবারই খুলছে সুপ্রিম কোর্ট। সেক্ষেত্রে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের ভবিষ্যৎ ঠিক করতে জুলাই মাস ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করা যাচ্ছে, যা হওয়ার এর মধ্যেই হবে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত যদি ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের নতুন সংবিধান ঠিক করে দেয়, তাহলে নির্বাচন হতে বেশি দিন লাগার কথা নয়। কোন পদ্ধতি কিংবা সংবিধান ফলো করে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচন হবে, তা জানার জন্যই আদালতের দিকে তাকিয়ে আছেন সবাই। এরমধ্যেই নতুন জাতীয় কোচ নির্বাচন।
যা শোনা যাচ্ছে, একে বেতন কম, তারপর ডিসেম্বরের পর চুক্তি থাকবে কি না, এখনই বলা যাচ্ছে না। তাহলে আইএসএলের ক্লাবের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে খালিদ কেন আসবেন দেশের জাতীয় কোচ হতে? বিমল ঘোষ, আর্মান্দো কোলাসোরা যতই তাঁর নাম প্রস্তাব দিন, খালিদ যদি দেশের কোচ হতে রাজি না হন, তাহলে আর্থিক মন্দার কারণেই সঞ্জয় সেনের কপালে জাতীয় কোচের শিকে ছিঁড়লেও ছিঁড়তে পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.