Advertisement
Advertisement
India Football Team

‘ঘুমন্ত দৈত্য’ মৃতপ্রায়! ভারতীয় ফুটবলের শাপমুক্তির উপায় কী?

দেশীয় কোচ বা ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিদেশি ফুটবলারই একমাত্র সমাধান?

Sanjoy Sen and Ranjan Chowdhury gave opinion on India Football team failure
Published by: Arpan Das
  • Posted:June 11, 2025 6:05 pm
  • Updated:June 11, 2025 6:05 pm  

অর্পণ দাস: এ কোন সকাল, রাতের চেয়েও অন্ধকার! একসময় বলা হত বিশ্ব ফুটবলের ‘ঘুমন্ত দৈত্য’ ভারত। সেই ঘুম যে কবে ভাঙবে কেউ জানে না। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় দলের যা ফর্ম, তাতে ঘুম ভাঙার কোনও আশা দেখা যাচ্ছে না। এ তো আর রূপকথার গল্প নয়, যে জাদুদণ্ডে মুহূর্তের মধ্যে সব বদলে যাবে। তবু আশায় বাঁচে চাষা। একদিন আসবে, যেদিন ভারত বিশ্বকাপ খেলবে। জর্ডান, উজবেকিস্তানরা পারে, দেড়শো কোটি জনতার দেশ ভারতও নিশ্চয়ই পারবে।

কিন্তু কেন পারছে না? প্রশ্নগুলো সহজ, উত্তরও তো জানা। কিন্তু সোজা ভাষায় সেগুলো খাতায় লেখাটা আর হচ্ছে না। মঙ্গলসন্ধ্যায় এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে হংকংয়ের কাছে হারের পর ফের সেই কথাগুলোই ফিরে আসছে। এশিয়ান কাপও যেন এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবু সমাধান কি সম্ভব? বা কোন পথে আসতে পারে সমাধান? সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে মতামত জানালেন দুই কোচ সঞ্জয় সেন ও রঞ্জন চৌধুরী।

প্রায় দেড় বছর হয়ে গেল ভারতীয় দল জয়ের মুখ দেখে না। ইগর স্টিমাচ গিয়েছেন, এসেছেন মানোলো মার্কেজ। আবার হয়তো বিদেশি কাউকে কোচ করা হবে। সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলিতেছে। যুবভারতীতে রাজকীয় সংবর্ধনায় ফুটবলকে বিদায় নিয়েছিলেন সুনীল ছেত্রী। ভারতীয় ফুটবলের GOAT। বছরও ঘোরেনি, আবার নীল জার্সি পরেছেন ছেত্রী। কারণ বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। গোলখরা কাটাতে হবে, নতুন স্ট্রাইকার নেই। এ এক অদ্ভুত চক্রব্যূহ। সমর্থকরা প্রশ্ন তুলেছেন, নতুন স্ট্রাইকারই বরং খোঁজা হোক। কিংবদন্তিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার কী দরকার? প্রশ্নটা সোশাল মিডিয়াতেই ঘুরেছে। যাদের কান পর্যন্ত পৌঁছনো দরকার, তারা শুনেছেন কি?

Sanjoy Sen and Ranjan Chowdhury gave opinion on India Football team failure

বেশ, নাহয় মেনে নেওয়া গেল স্ট্রাইকার নেই। যদি থাকেও, কী লাভ হচ্ছে? বাংলার ফুটবল দলের কোচ সঞ্জয় সেন বললেন, “আমাদের স্টাইকার নেই বলে সুনীল ছেত্রীকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। হংকংয়ের বিরুদ্ধে সুনীল শুরু থেকে খেলেনি। কিন্তু সুহেলকে সুযোগ দেওয়া হয়নি। কী হিসেবে কোচ আশিককে স্টাইকারে খেলালেন, সেটা উনিই বলতে পারবেন। আমরা চাই ভারতীয় ফুটবল উন্নতি করুক। শুধু সমালোচনা করতে চাই না। ডেভিড এত ভালো খেলল। সে জাতীয় দলে নেই। এটা যারা নির্বাচক, তারাই ভালো বলতে পারবে।”

Sanjoy Sen and Ranjan Chowdhury gave opinion on India Football team failure

ভুলে গেলে চলবে না, বাংলার এই দলকে হারাতে হিমশিম খেয়েছিল ভারতীয় দল। বিশ্বের বড় দলগুলো সাধারণত প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলে সমকক্ষ দেশগুলির সঙ্গে। সেখানে রাজ্য দল, জেলা দলের পর থাইল্যান্ডের সঙ্গে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে নেমেছিল ভারত। থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচটাও ব্লু টাইগার্সরা হেরেছিল ০-২ গোলে। সঞ্জয় সেনের মত, “আমাদের আত্মসমীক্ষার দরকার আছে। কোচ নির্বাচন, সাপ্লাই লাইন, পরিকাঠামো, সব জায়গাতেই আমরা কিছু ভুল করে ফেলেছি। স্ট্রাইকারের অভাব বা অন্যান্য সমস্যা, এগুলো জেনেই তো কোচেরা দায়িত্ব নেন। আর তারপর বিভিন্ন অজুহাত দেন। ফলাফলের জন্য দীর্ঘ পরিকল্পনা দরকার। জর্ডান বা উজবেকিস্তান বিশ্বকাপে খেলবে। ওরাও পরিকল্পনা করে এগিয়েছে। আমরা পরিকল্পনার অভাবে পিছিয়ে পড়েছি। কোচ নির্বাচনেও যোগ্য লোক দরকার। তবে কোনওটাই রাতারাতি হবে না।”

Sanjoy Sen and Ranjan Chowdhury gave opinion on India Football team failure
ফাইল চিত্র।

রঞ্জন চৌধুরীর মতে জেলা দলের বদলে সেই ম্যাচটা হতে পারত কোনও শক্তিশালী দেশের সঙ্গে। তাঁর বক্তব্য, “এভাবে প্রস্তুতিটা সঠিকভাবে হয় না। এশিয়ান কাপের মতো টুর্নামেন্ট খেলার আগে অন্তত দুটো-তিনটে ইউরোপ ট্যুর দরকার। এই ধরনের ম্যাচ খেললে প্লেয়ারদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে। তাতে প্রতিযোগিতার মানসিকতা বাড়ে। প্লেয়াররা এক্সপোজার পায়। সারা পৃথিবীতে সেটাই হয়। কিন্তু ভারতীয় ফুটবল তো সেরকম নয়।”

Sanjoy Sen and Ranjan Chowdhury gave opinion on India Football team failure

ভারতের অনূর্ধ্ব-২০ দলের দায়িত্ব সামলেছেন রঞ্জন চৌধুরী। ফলে ভারতীয় ফুটবলের যাকে ‘সাপ্লাই লাইন’ বলে, সেটা খুব ভালোমতোই চেনেন। সেক্ষেত্রে সমাধান কী? রঞ্জনবাবু বললেন, “যে কোনও দেশের জন্য গ্রাসরুট লেভেলটাই আসল। এটা এআইএফএফের কাজ। কিন্তু আমাদের মতো এত বড় দেশে, কীভাবে করা উচিত, সেটা করে উঠতে পারছে না। আমরা তো শুধু আন্তর্জাতিক ম্যাচে ব্যর্থ হলেই আলোচনা করি। সেক্ষেত্রে ভালো করে স্কাউটিং দরকার। আমার মতে, ১২-১৪ বছরের অন্তত ৩০-৩৫ জন ছেলেকে বেছে নিয়ে বিদেশে পাঠানো উচিত। এই দলটাকে আমরা যদি চার-পাঁচ বছরের জন্য রাখতে পারি, তাহলে ফল পাব। ওরা বিদেশের মানের প্লেয়ারদের সঙ্গে ম্যাচ খেলুক।” কিন্তু একটা প্রশ্ন উঠেই আসে। বাজেটের কী হবে? আইএসএল নিয়ে ফেডারেশনের সঙ্গে এফএসডিএলের চুক্তির জটিলতা তো নতুন কিছু নয়। আই লিগের প্রয়োজনীয়তা বা গ্রহণযোগ্যতা কার্যত বৈমাতৃক সন্তানের মতো। সেখানে বিদেশে ফুটবলার পাঠানোর মতো বাজেট কী থাকবে? রঞ্জনবাবু নিশ্চিত, সেটুকু খরচ ঠিকই জোগাড় করা যাবে।

Sanjoy Sen and Ranjan Chowdhury gave opinion on India Football team failure

ফলে একদিনে হঠাৎ পরিকাঠামো বদলের ধনুক ভাঙা পণ করলে হবে না। সময় লাগবে, ধৈর্য্য লাগবে। কঠিন সময়ে সমালোচনা করা সহজ। কিন্তু এই সময়েই ভারতীয় দলের পাশে থাকা উচিত। সঞ্জয় সেন সেই কথাটাই বললেন। সমস্যা থাকলেও তিনি ভরসা হারাতে নারাজ। তবে সাধারণ সমর্থকরা হয়তো এই বিষয়ে শ্রদ্ধেয় কোচের বিরোধিতা করবেন। অনেকেরই দাবি, সঞ্জয় সেন বা শঙ্করলাল চক্রবর্তী বা খালিদ জামিলকে ভারতীয় দলের কোচ করা হোক। রঞ্জন চৌধুরীর সেটাই বক্তব্য, “ভারতীয় ফুটবলের কালচার, যে পরিবেশ, সেটা বোঝার জন্য দেশীয় কোচ থাকা উচিত।” সঞ্জয় সেন নিজে বলছেন, “সারা পৃথিবীতে জাতীয় দলের কোচ সেদেশের কোচেরাই হন। সেটার উদাহরণই সবচেয়ে বেশি। এই প্রথমবার বিদেশি হিসেবে আন্সেলোত্তিকে কোচ করল ব্রাজিল। আমাদের দেশে দীর্ঘ ২০-৩০ বছর ধরে বিদেশি কোচ নিয়ে ফলাফল শূন্য। ফুটবল সংস্থাগুলোকে সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।”

Sanjoy Sen and Ranjan Chowdhury gave opinion on India Football team failure

আরও একটা সমাধানের কথা ঘুরছে। এই যে চর্চা চলছে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিদেশি ফুটবলারদের খেলানো হোক। সেটা কি কোনও সমাধান? সঞ্জয় সেনের মতে, “অন্যান্য দেশগুলো শুধু বিদেশি প্লেয়ারের ভরসায় থাকে না। ইয়ুথ ডেভলপমেন্ট ভালো করেছে। আমাদের দেশের আইন ভিন্ন। তাঁরা এলে বড়জোর একটা-দুটো ম্যাচ জিতবে। আমাদের তো তরুণ ফুটবলার তৈরি করতে হবে। সেই জায়গাটাতেই অভাব।” বরং তিনি অনেক বেশি জোর দিচ্ছেন, ফুটবলারদের দায়বদ্ধতার উপর। যে দলটা মঙ্গলবার খেলল, তাদের কেউ কি এগিয়ে এসে বলেছেন যে, হ্যাঁ, এই ব্যর্থতার জন্য আমরা দায়ী। আইএসএলের মাপকাঠিতে এরাই সেরা। তাঁদেরও নিশ্চিত দায়বদ্ধতা থাকা উচিত দেশের জার্সিতে সেরাটা দেওয়ার। ৪২ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণায় সেটা সম্ভব নয়। ফেডারেশন কর্তারাও নিশ্চয়ই সেটা জানেন। কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছেন কি? সেটা ৪২ লক্ষ নয়, ১৫০ কোটি টাকার প্রশ্ন।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement