দুলাল দে: ফেডারেশনের বিশেষ সাধারণ সভায় স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে নতুন সংবিধানকে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো সংবিধান গ্রহণ করা হয়েছে। এই সংবিধান পাশ হওয়ার ফলে ফিফার যে ব্যানের আশঙ্কা ছিল, তা এড়ানো গিয়েছে। কিন্তু তারপরও সংবিধানের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট নিয়ে উত্তর মেলেনি। মঙ্গলবারের বৈঠকে সেগুলো নিয়েও ছবি অনেকটা পরিস্কার হয়ে গেল।
২০১৭ সাল থেকে ভারতীয় ফুটবলের সংবিধান তৈরি আটকে ছিল। এর আগে ২০২২ সালে ফিফা নির্বাসিত করেছিল ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে। এবার নির্বাসন এড়াতে অক্টোবরের মধ্যেই নতুন সংবিধান গ্রহণ করা হয়েছিল। তবে ২৩.৩ ধারা ও ২৫.৩ ধারার দুটি পয়েন্টকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ২৩.৩ ধারাটি হচ্ছে, ফেডারেশনের সংশোধনীতে সুপ্রিম কোর্টের ‘অনুমতি’ প্রয়োজন কি না। আর ২৫.৩-র ধারায় আছে ফেডারেশনের কার্যকারী কমিটির সদস্য হলে তাঁকে রাজ্য সংস্থার পদ ছাড়তে হবে। যার অর্থ, রাজ্য ফুটবল সংস্থা অথবা সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থার মধ্যে সদস্য হিসাবে থাকার জন্য যে কোনও একটি সংস্থাকে বেছে নিতে হবে।
সেই নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নাগেশ্বর রাও তাঁর অভিমত সুপ্রিম কোর্টকে জানালেন। এবার সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্ত রায় জানাবেন। এক্ষেত্রে নাগেশ্বর রাওয়ের পর্যবেক্ষণ—
১) ধারা ২৩.৩ সংশোধন করে নিম্নরূপ করা হোক —
“AIFF সংবিধানে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনা হলে, তার একটি কপি ভারতের সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হবে জানার জন্য।”
(অর্থাৎ আদালতের “leave” বা অনুমতির প্রয়োজন থাকবে না।)
২) ধারা ২৫.৩ (খ) ও (গ) সংরক্ষিত থাকবে, তবে এর প্রয়োগ শুরু হবে সেপ্টেম্বর ২০২৬ থেকে —
অর্থাৎ বর্তমান নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর।
৩) AIFF ও রাজ্য সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হোক যে তারা নতুন সংবিধানের প্রয়োগ নিয়ে FIFA ও AFC-এর সঙ্গে নিয়মিত পরামর্শ করবে।
৪) সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, এই সংশোধন কার্যকর হবে কোর্টের পরবর্তী নির্দেশ বা অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে।
এই নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে আলোচনাও হয়। বাইচুং ভুটিয়ার পক্ষ থেকে শ্রী রঘেন্থ বসন্ত বলেন যে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উদ্দেশ্য ছিল AIFF-এ স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও গণতান্ত্রিক কাঠামো নিশ্চিত করা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যদি ধারা ২৩.৩ বাতিল করা হয়, তাহলে AIFF পুনরায় পুরনো অনিয়মে ফিরে যেতে পারে। তাঁর মতে, কিছুদিন আদালতের নজরদারি থাকা জরুরি, যাতে নতুন সংবিধানের প্রভাব সঠিকভাবে কার্যকর হয়।
অন্যদিকে আমিকাস কিউরি শ্রী সমর বানসল বলেন যে, রায়ের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় ফুটবলে গণতান্ত্রিক সংস্কার আনা, FIFA-এর চাপ নয়। তিনি প্রস্তাব করেন ধারা ২৩.৩ পুরোপুরি বাদ না দিয়ে একটি সীমিত ধারা রাখা যায়, যাতে আদালতের অনুমতি প্রয়োজন না হলেও AIFF-কে সংশোধনের রিপোর্ট আদালতে জানাতে হয়।
শাজি প্রভাকরনের প্রতিনিধিত্বে শ্রী শিবম সিং বলেন যে, ধারা ২৫.৩ (খ) ও (গ) এখনই কার্যকর করলে কিছু রাজ্য সংস্থায় নেতৃত্বের সংকট হতে পারে। তাই অন্তত সেপ্টেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত এই ধারাগুলির প্রয়োগ স্থগিত রাখলে বাস্তবিক সুবিধা হবে। আবার যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব শ্রী কুনাল জানান যে, সরকারের দৃষ্টিকোণ থেকে FIFA-এর নিয়ম ও ভারতের সংবিধানের প্রভিশন—দুটির মধ্যে ভারসাম্য রাখা প্রয়োজন। তিনি বলেন, AIFF-এর ওপর আদালতের নিয়ন্ত্রণের সময়সীমা অনির্দিষ্ট না হয়ে স্পষ্টভাবে নির্ধারিত হওয়া উচিত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.