বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: রাশিয়া-ইউক্রেন, ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ থামলেও স্বাভাবিক হয়নি রপ্তানি বাণিজ্য। জার্মানিতেও রপ্তানি বাণিজ্যে ভাটার টান। বিপর্যয়ের মুখে দার্জিলিং-সহ উত্তরের চা শিল্প। একদিকে লোকসানের ধাক্কা। অন্যদিকে পাহাড়ের আবহাওয়া পালটাতে শুরু করায় কমছে কাঁচা পাতার গুণগত মান এবং উৎপাদন। ওই পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যে চোদ্দটি চা বাগান বন্ধ হয়েছে। বিক্রির পথে অন্তত ২৫টি চা বাগান।
নর্থবেঙ্গল টি প্রডিউসার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, দার্জিলিং অর্থডক্স চায়ের বিরাট বাজার রয়েছে ইউরোপে। এক দশক আগে দার্জিলিং চায়ের বার্ষিক উৎপাদন ছিল ১৪ মিলিয়ন কেজি। তার মধ্যে ৮০ শতাংশ রপ্তানি হয়েছে জার্মানি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ডে। এখন দার্জিলিং চায়ের বার্ষিক উৎপাদন নেমে দাঁড়িয়েছে ৫.৫ মিলিয়ন কেজিতে। তার মধ্যে রপ্তানি হচ্ছে ২ মিলিয়ন কেজি।
কেন উৎপাদনে ঘাটতি বেড়েছে?
চা বণিকসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পাহাড়ের আবহাওয়া দ্রুত পালটাচ্ছে। কমছে বৃষ্টিপাত। বাড়ছে উষ্ণতা। গত দু’দশকে প্রায় ২০ শতাংশ বৃষ্টি কমেছে দার্জিলিং পাহাড়ে। দার্জিলিং পাহাড়ে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকে দু’মাস ফার্স্ট ফ্লাশ-এর পাতা তোলা হয়। ওই পাতা থেকে অন্তত দুই মিলিয়ন কেজি চা তৈরি হয়। এটা মোট উৎপাদনের প্রায় ২০ শতাংশ। ইন্ডিয়ান প্ল্যানটার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, এটাই মরশুমের সেরা দার্জিলিং চা। ওই চা জার্মানি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ডে রপ্তানি হয়। কিন্তু রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে চা রপ্তানি বাণিজ্যের ছবি দ্রুত পালটেছে। জার্মানি থেকেও চায়ের বরাত কমেছে। তার উপর নিম্নমানের নেপাল চা একশ্রেণির ব্যবসায়ীর হাতে ধরে কম দামে দার্জিলিং চা ব্র্যান্ড নেমে চলায় বাড়ছে লোকসান। ওই কারণে ইতিমধ্যেই দার্জিলিং পাহাড়ের ৮৭টি বাগানের মধ্যে ১৪টি বন্ধ করেছেন কর্তৃপক্ষ। ২৫টি চা বাগান মালিক খদ্দের খুঁজে বেড়াচ্ছেন। নর্থবেঙ্গল টি প্রডিউসার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি সতীশ মিক্রকা বলেন, “আমার বাগানই বিক্রির চেষ্টা করছি। একদিকে প্রকৃতির মার। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রপ্তানি কমছে। অন্যদিকে নেপালের নিম্নমানের চা দার্জিলিং চা বলে চলায় টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।”
চা বণিকসভাগুলো সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতীয় সিটিসি চায়ের বিরাট বাজার রাশিয়া ও ইউক্রেনে। এছাড়াও শ্রীলঙ্কা, ইরান, পোল্যান্ড, মিশরে কিছু পরিমাণ যায়। উত্তরবঙ্গে উৎপাদিত চায়ের ৪০ মিলিয়ন কেজি বিদেশে রপ্তানি হয়। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেনে চা পাঠানো বন্ধ হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য কয়েক মাস চা রপ্তানি বন্ধ ছিল। উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দার্জিলিং এবং উত্তর দিনাজপুর জেলায় ১৯৭টি চা কারখানা রয়েছে। সেখানে দুশো মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়ে থাকে। এক কেজি সিটিসি চা উৎপাদনে খরচ হচ্ছে দেড়শো টাকা। নর্থবেঙ্গল টি প্রডিউসার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি বলেন, “বাজারে ধস নামায় ১২০ টাকা কেজি দামে লোকসানে চা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন কারখানা মালিকরা। না হলে গুদামে চা পচে নষ্ট হবে।”
এদিকে তৈরি চায়ের বাজারে ধস নামতে কাঁচা চা পাতার দামও নেমেছে। এক কেজি কাঁচা চা পাতার উৎপাদন খরচ ২১ টাকা হলেও বাজারে দাম নেমেছে ১৫ টাকা থেকে ১৯ টাকায়। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “আন্তর্জাতিক চায়ের বাজারে বেসামাল পরিস্থিতি বিপদ ডেকেছে। কাঁচা পাতার দাম মিলছে না। বিপাকে উত্তরবঙ্গের প্রায় ৫০ হাজার ক্ষুদ্র চা চাষি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.