ছবিতে রায়েবাড়ির প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে, ছবি : জয়ন্ত দাস।
পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির betvisa888.com৷ আজ রইল কেতুগ্রামের আমগরিয়া রায় পরিবারের দুর্গাপুজোর কথা।
ধীমান রায়, কাটোয়া: স্ত্রী-র আবদারে কেতুগ্রামের আমগরিয়া গ্রামে দুর্গাপুজোর সূচনা করেছিলেন উকিলবাবু রাধাবল্লভ রায়। সেই থেকে আমগরিয়ার রায় পরিবারে দুর্গাপুজো চলে আসছে। দেখতে দেখতে ১০৫ বছর কেটেও গেল। এবছর ১০৬ বছরে পড়েছে রায়বাড়ির পুজো। বনেদিবাড়ির এই পুজোয় আমগরিয়া গ্রাম ছাড়াও আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারাও শামিল হন। বৈষ্ণবমতে পরম্পরা মেনে নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করেন রায়বাড়ির সদস্যরা।
আমগরিয়া গ্রামের রায়পরিবারকে এক ডাকে এলাকার সকলেই চেনেন। সুবিশাল কুলদেবীর মন্দির। তাতে রয়েছে অতীতের স্থাপত্যের অনেক নিদর্শন। মন্দিরের উপরে রয়েছে শঙ্খচূড়া। সকলের কাছে যা আজও দর্শনীয়। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মন্দির নির্মাণ ও দুর্গাপুজোর সূচনা করেছিলেন পূর্বপুরুষ রাধাবল্লভ রায়। তিনি ছিলেন বৃটিশ আমলের এক স্বনামধন্য আইনজীবী। অগাধ ভূসম্পত্তির অধিকারী। পরিবারের প্রবীণ সদস্য অভেদানন্দ রায় জানিয়েছেন, রাধাবল্লভের স্ত্রী সিন্ধুবালাদেবী স্বপ্নাদেশ পেয়ে বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করার জন্য অনুরোধ করেন। স্ত্রীর আবদার ফেলতে পারেননি রাধাবল্লভ। তাছাড়া তিনি নিজেও ছিলেন অতিশয় ধার্মিক। স্ত্রীর প্রস্তাব সাগ্রহে মেনে নিয়ে রাধাবল্লভ দুর্গাপুজো শুরু করেন। তবে মণ্ডপ বেঁধে প্রথমবছর পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। পুজো শেষ হতেই তিনি দেবীর জন্য পাকা মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করে দেন। শোনা যায় তখনকার আমলে লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করেই রায়বাড়ির দেবীর মন্দির তৈরি হয়।
রায় পরিবারের একচালার সাবেকি ধাঁচের দেবীপ্রতিমা। পুজো হয় বৈষ্ণবমতে। ছাগবলির প্রথা নেই। পুজোর অন্যতম বিশেষত্ব হল অষ্টমীর দিন সিঁদুরখেলা ও নবমীতে কুমারীপুজো। সিঁদুখেলায় পরিবারের মহিলাদের সঙ্গে গ্রামের অন্যান্য মহিলারাও মেতে ওঠেন। কুমারীপুজো দেখতে দূরদূরান্তের মানুষজন ভিড় করেন। পরিবারের সদস্যদের যারা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন তাঁরা পুজোর আগেই বাড়ি চলে আসেন। পরিবারের সকলেই পুজোর কদিন একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেন। পুজোর একদিন নিমন্ত্রিত থাকেন গ্রামের অন্যান্যরাও। প্রতিবছরেই পুজো উপলক্ষ্যে কিছু সামাজিক কর্মসূচিও পালন করে গোটা রায় পরিবার। রাধাবল্লভের আমলের সেই বৈভব আর রায়বাড়িতে নেই। তবে পরম্পরা মেনে অতিথিদের আজও সমানভাবে সমাদর করেন রাধাবল্লভের উত্তরসূরিরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.