চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: জামুড়িয়ার তপসীর জঙ্গলে একসময় ডেরা বেঁধেছিলেন ডাকাত ভবানী পাঠক। তাঁকে স্বপ্ন দিয়েছিলেন স্বয়ং মা কালী। জানিয়েছিলেন, ওই জঙ্গলে উইঢিবিতে অধিষ্ঠান করছেন তিনি। সেই থেকে শুরু হয় পুজো। তাই জামুড়িয়ার তপসী জঙ্গলের ওই পুজো ‘ভবানী পাঠকের কালী’ নামেই পরিচিতি। সিঙ্গারণ নদীর ধারে বলে অনেকে আবার বলেন, সিঙ্গারণ কালী পুজো। প্রায় ২৫০ বছর পুরানো জামুড়িয়ার এই পুজো। জেলার সর্বত্র এমনকি, ভিন জেলা থেকেও বহু মানুষ আসেন জামুড়িয়ার সিঙ্গারণ কালীপুজো দেখতে।
[কালীপুজোয় বাজার কাঁপাচ্ছে ব্যাটারিচালিত মোমবাতি]
১৯৬৮-৬৯ সাল পর্যন্ত জঙ্গলে ঘেরা ছিল এলাকাটি। স্থানীয়রা বলেন, রাতে পাঁঠাবলি দিয়ে ভোগ খেয়ে ডাকাতি করতে যেত ভবানী পাঠক ও তার সঙ্গীরা। মনোজয় চট্টোপাধ্যায় নামে এক গ্রামবাসী জানান, বেলবাঁধ খোলামুখ খনি লাগোয়া জামুড়িয়ার তপসীর জঙ্গলে একবার আগুন লেগে গিয়েছিল, ধসও নেমেছিল। কিন্তু ভবানী পাঠকের কালীমন্দিরের কোনও ক্ষতি হয়নি। এলাকায় ফাটল ধরেছে, মাঝে মাঝে আগুন বের হয়। কিন্তু সিঙ্গারণ কালী মন্দির চত্বরে এতটুকু আঁচ আসেনি। গ্রামবাসীরা বলেন, এর ফলে তাঁদের ভরসা আরও বেড়ে গিয়েছে। তাঁদের বিশ্বাস ধস, আগুন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে গ্রামবাসীদের রক্ষা করেন কালীমাতা সিঙ্গারণ। বেলবাঁধ, জোরজোনাকি, তপসী, সিঙ্গারণ গ্রামের বাসিন্দার ভিড় জমান কালী পুজোর রাতে। মহাধুমধাম করে হয় পুজো।
এখন জামুড়িয়ার সিঙ্গারণ কালীপুজোর দায়িত্বে তপসী গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। পরিবারের সদস্য সুবল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আগে উইঢিবিটি অপরাজিতা গাছে ঢাকা থাকত। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার পুজোর দায়িত্ব নেওয়ার পরে সেখানে মন্দির তৈরির পরিকল্পনা করে। কিন্তু দেবী স্বপ্নাদেশ দেন, কোনও ঘেরা জায়গায় তাঁর পুজো করা যাবে না। এরপর থেকেই চার দিক খোলা আটচালার মন্দিরে পুজো হয়ে আসছে। সুবলবাবু জানান, পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে তাঁরা জেনেছেন, উইঢিবি পরিস্কার করতে গিয়ে তাঁদের পরিবারের এক সদস্য তিনটি পেতলের চোখ ও কাঠের পাদুকা পান। উইঢিবির পাশে মাটির বেদিতে তা আজও রাখা আছে। আরও একটি জনশ্রুতি রয়েছে এই কালী পুজোকে ঘিরে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সিঙ্গারণ কোলিয়ারি চালু করতে এসে ১২ হাত লম্বা চুল পায়। অলৌকিক এই ঘটনা দেখে সেখানে কয়লা খাদান না করে, ৫০০ মিটার দূরে কোলিয়ারি চালু করেন কোম্পানির প্রতিনিধিরা।
[ ডিজিটাল যুগেও দীপাবলিতে দেদার বিকোচ্ছে মাটির প্রদীপ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.