Advertisement
Advertisement

Breaking News

BR Gavai

‘জাতপাতের নির্মম সত্য…’, অক্সফোর্ডের ভাষণে সংবিধানের শক্তি স্মরণ করালেন দলিত প্রধান বিচারপতি

সংবিধান আসলে দেশের নাগরিকদের জীবনরেখা, মন্তব্য গাভাইয়ের।

Chief Justice BR Gavai's
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:June 11, 2025 4:59 pm
  • Updated:June 11, 2025 5:05 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এদেশে নির্বাচন এলেই ধর্মের কার্ড খেলে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। গত এক দশকে কেন্দ্রে গেরুয়া শিবিরের শাসনকালে ধর্মীয় ভাবাবেগ তথা স্পর্শকাতরতা বেড়েছে বৈ কমেনি। সেই দেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বিশ্বমঞ্চে বার্তা দিলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে ভারতীয় সংবিধানের শক্তিতেই পিছিয়ে পড়া দলিত শ্রেণির মানুষ হয়েও তিনি আজ দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে আসিন। এটাই হল যুক্তিবাদ ও প্রগতিশীলতার আলোকিত পথ।

গত ১৪ মে ভারতের ৫২তম প্রধান বিচারপতি হিসাবে শপথ নেন ভূষণ রামকৃষ্ণ গাভাই। দেশের প্রথম বৌদ্ধ রাষ্ট্রপতি তিনি। সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রিত হন। সেখানে নিজের ভাষণে গাভাই বলেন, “বহু দশক আগে, ভারতের লক্ষ লক্ষ নাগরিককে ‘অস্পৃশ্য’ বলা হত। তাঁদের বলা হত যে তাঁদের কোনও অধিকারই নেই। বলা হয়েছিল তাঁরা নিজেদের কথা বলতে পারেন না। কিন্তু আজ আমরা সেখানে পৌঁছেছি, যেখানে সেই মানুষদেরই একজন খুল্লামখুল্লা কথা বলছেন, দেশের বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পদাধিকারি হিসাবে।”

নিম্নবর্গের ইতিহাস নিয়ে কাজ করা বিশ্ববিখ্যাত বাঙালি পণ্ডিত গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক প্রশ্ন তুলেছিলেন—“অন্তজদের কথা বলার অধিকার আছে?” সেই প্রসঙ্গ টেনে গাভাই বলেন, “এই বিষয়ে আমার বক্তব্য হল—হ্যাঁ, অন্তজরা কথা বলতে পারেন এবং তাঁরা চিরকাল কথা বলেও এসেছেন। তাঁরা কথা বলতে পারে কি না, সেটা আর প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন হল—সমাজ কি তাঁদের কথা শুনতে চায়?” এরপরেই সংবিধানের শক্তির কথা বলেন গাভাই। বলেন, “ঠিক এখানেই কাজ করেছে ভারতের সংবিধান। দেশের জনগণকে তাঁদের অধিকারের কথা জানিয়েছে, তাঁরা নিজেদের কথা বলতে পারেন। সমাজ ও ক্ষমতার সমস্ত ক্ষেত্রে তাঁদের সমান স্থান রয়েছে।”

বিচারপতি গাভাইয়ের মতে, কোনও দেশের সংবিধান কেবল একটি আইনি বিষয় কিংবা রাজনৈতিক প্রেক্ষিত নয়, তা আসলে সমস্ত নাগরিকের জীবনরেখা। সংবিধানের প্রতিটি অক্ষর আসলে নিঃশব্দ বিপ্লব। সেই বিপ্লবের বলেই বস্তির সরকারি স্কুল পড়ে আজ তিনি দেশের প্রধান বিচারপতি হয়েছেন। গাভাই আরও বলেন, “সংবিধান সেই সামাজিক দলিল যা জাতপাত, দারিদ্র্য এবং অবিচারের নির্মম সত্যকে অস্বীকার করে না। গভীর বৈষম্যের দেশে সকলে সমান, এমন ভানও করে না। পরিবর্তে সমাজ পুনর্লিখনের, ক্ষমতা পুনর্নির্মাণের এবং মর্যাদা পুনরুদ্ধারের সাহস দেখায়।” দীর্ঘ বক্তৃায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বুঝিয়ে দেন, সংবিধানে যে সামাজিক সাম্যের বার্তা দেওয়া হয়েছে, তা কেবল কথার কথা নয়। স্বাধীন ভারতে খোদ বিচারপতির উত্থানই সেই সত্যিকে প্রমাণ করে।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement