সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ৯০ তম জন্মদিনে বৌদ্ধ ধর্মগুরু দলাই লামা তেনজিং গ্যাতসোকে রবিবার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর সেই বার্তায় তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠল চিন। সোমবার এই ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছে প্রতিবেশী দেশের তরফে। দলাই লামাকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ উল্লেখ করে তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও বিশেষ সমারোহে ভারতীয় আধিকারিকদের যোগ দেওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে চিন।
এই ইস্যুতে সোমবার চিনা বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং জানান, ভারতের তিব্বত সম্পর্কিত সংবেদনশীলতা বোঝা উচিত। একইসঙ্গে দলাই লামাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে মেনে নেওয়া উচিত। তিব্বত ইস্যুতে চিনের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট। সরাসরি দলাই লামাকে নিশানায় নিয়ে নিং বলেন, “১৪ তম দলাই লামা বর্তমানে রাজনৈতিক নির্বাসনে রয়েছেন। এবং দীর্ঘদিন ধরে ধর্মের আড়ালে জিজাং (চিন তিব্বতকে এই নামেই ডাকে)কে চিন থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করছেন। ভারতের উচিত জিজাংয়ের সংবেদনশীলতা বোঝা এবং দলাই লামাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী ঘোষণা করে চিনকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা।” শুধু তাই নয়, ভারতকে এই ইস্যুতে আরও বিচক্ষণতা দেখানোর বার্তা দেওয়া হয়েছে চিনের তরফে।
রবিবার দলাই লামার জন্মদিন উপলক্ষে মোদি তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘১৪০ কোটি ভারতবাসীর সঙ্গে আমিও দলাই লামার ৯০তম জন্মদিনে তাঁকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। তিনি প্রেম, করুণা, ধৈর্য এবং নৈতিক শৃঙ্খলার এক স্থায়ী প্রতীক। তাঁর বার্তা সকল ধর্মের মানুষেকে অনুপ্রাণিত করে তুলেছে। আমরা তাঁর সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করি।’ পাশাপাশি তাঁর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু, রাজীব রঞ্জন সিং ও অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী প্রেমা খান্ডু। এরপরই এই ইস্যুতে সরব হল চিন। এই নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার এই ইস্যুতে ভারতের বিরুদ্ধে সরব হল ড্রাগন দেশ।
উল্লেখ্য, দলাই লামার উত্তরসূরি বাছা নিয়ে বিতর্ক চরম আকার নিয়েছে। প্রয়াণের পরে তাঁর উত্তরসূরি কে হবেন তা নিয়ে বুধবারই মুখ খুলেছিলেন তিব্বতি ধর্মগুরু। বিতর্কের সূত্রপাত তখন থেকেই। তাঁকে হুঁশিয়ারি দিয়ে চিন জানিয়েছিল পঞ্চদশ দলাই লামার মনোনয়নের জন্য তাদের অনুমোদন লাগবে। পালটা দলাই লামা জানিয়েছিলেন, তাঁর উত্তরসূরি কে হবে সেটা নির্ধারিত করবে ট্রাস্ট। চিনের দাবির জবাবে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ”পরবর্তী দলাই লামার মনোনয়নের দায়িত্ব গাহদেন ফোড্রাং ট্রাস্টের হাতে। এই প্রক্রিয়ায় বাইরের কাউকেই হস্তক্ষেপ করতে দেওয়া হবে না।” বৃহস্পতিবার সেই কথারই অনুরণন দেখা যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজুর মন্তব্যে। তাঁকে বলতে শোনা যায়, “যাঁরা দলাই লামার অনুসারী তাঁরা সকলেই জানেন, নির্ধারিত সংগঠনই তাঁর উত্তরসূরি বাছবেন। তিনি এবং সেই ট্রাস্ট ছাড়া অন্য আর কারও এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই।”
এর পালটা চিন জানায়, শব্দ ব্যবহার ও প্রতিটি পদক্ষেপের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত ভারতের। চিনের অভ্যন্তরণী বিষয়ে নাক গলালে তার প্রভাব ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও পড়বে। প্রত্যুত্তরে কিরেন রিজিজু বলেন, “দলাই লামা ইস্যুতে কোনও সংশয়ের জায়গাই নেই। সারা পৃথিবীর মানুষ যাঁরা বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাস করেন এবং দলাই লামাকে অনুসরণ করেন তাঁরাই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। আমার কিংবা সরকারের এই নিয়ে কিছু বলার কোনও দরকারই নেই। কে হবেন পরবর্তী দলাই লামা তা উনি নিজেই বাছবেন।” এই ডামাডোলের মাঝেই এবার দলাই লামাকে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তায় ফের চটল চিন।
এদিকে দলাই লামাকে ভারতরত্ন দেওয়ার দাবিতে কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়েছে একটি সর্বদলীয় ফোরাম। শুধু তাই নয়, দলাই লামাকে দেশের সংসদে ভাষণ দেওয়ার অনুমতির আর্জি জানানো হয়েছে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানানো হয়েছে, এই চিঠি পাঠানো হয়েছে সর্বদলীয় ভারতীয় সংসদীয় ফোরাম ফর তিব্বত কর্তৃক। এই ফোরামে রয়েছে বিজেপি, বিজেডি ও জনতা দল ইউনাইটেড-এর সাংসদরা। একইসঙ্গে এই ফোরামের ১০ সদস্যের একটি কমিটি দলাই লামার ভারতরত্নের দাবিতে স্বাক্ষর অভিযানও শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই প্রায় ৮০ জন সংসদ সদস্যের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে বলে জানা গিয়েছে। যা আগামী দিনে প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়া হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.